বিএনপি আমলে সেই মতিউরের উত্থান যার হাত ধরে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১০:১০ পিএম
বর্তমানে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ড. মো. মতিউর রহমান। তার ছেলে ইফাতের ‘ছাগলকাণ্ডে’ বেরিয়ে এসেছে ‘থলের বিড়াল’। অনুসন্ধান করে জানা যাচ্ছে, এই রাজস্ব কর্মকর্তা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
সরকারি চাকরি করে দুই স্ত্রী, পাঁচ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। এরই মধ্যে দেশেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের হদিস মিলেছে। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে এফডিআর ও শেয়ারবাজারে নিজ নামে অর্ধশত কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে।
এমনকি ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণকেও কিনে দিয়েছিলেন প্রাডো, প্রিমিও ও ক্রাউনের মতো ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি তার বিভিন্ন কোম্পানির নামের রেজিস্ট্রেশন করা। কিনে দিয়েছেন দামি দামি পাখিও। তার পরিচিত কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, বেনামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মতিউর রহমানের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকাতেই অন্তত ২ ডজন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের নামে।
মতিউরের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীর চর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরে। তার বাবা আব্দুল হাকিম হাওলাদার পেশায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক। একজন সৎ ব্যক্তি হিসাবে তিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন। জীবদ্দশায় তিনি কাজীর চর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। স্কুল জীবন থেকেই তুখোড় মেধাবী ছিলেন মতিউর। তিনি মুলাদীর পাশের উপজেলা বাবুগঞ্জে খালার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছেন। পরিবারে ৩ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত হাকিম হাওলাদারের পরিবারে তেমন সচ্ছলতা ছিল না। গ্রামে জায়গা-জমির পরিমাণও খুব বেশি ছিল না। তবে ৯১ পরবর্তী বিএনপির শাসনামলে রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের উত্থানের পর থেকেই পালটে যেতে থাকে এই পরিবারের অর্থবিত্তের চিত্র।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মুলাদীর এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘বিএনপি শাসনামলের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন মতিউর। সাইফুরের ছেলেরা ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রাজস্ব ক্যাডারে যাওয়ার আগে ১১তম বিসিএসে ট্রেড ক্যাডারে চাকরি হয়েছিল মতিউরের। ট্রেড ক্যাডার বিলুপ্ত হলে পছন্দ অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডারে যাওয়ার সুযোগ পান ট্রেড ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সাইফুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসাবে তখনই রাজস্ব ক্যাডারে ঢুকে পড়েন মতিউর। তাছাড়া সাইফুর রহমানের সূত্র ধরে চাকরি জীবনেও তিনি আরও অনেক সুযোগ বাগিয়ে নেন।’
রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের যোগদানের পর এই পরিবারকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মতিউর ও তার পরিবারের এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ।