‘নূরুল হুদা আওয়ামী লীগের সময় আওয়ামী, বিএনপির সময় বিএনপি’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ১০:০৫ পিএম
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) কবি নূরুল হুদাকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে লেখা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে কবিতা লেখাসহ নানান অপকর্ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এবং মানববন্ধনে এসব অভিযোগ তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির ডিজির পদ থেকে কবি নূরুল হুদাকে অপসারণ করার দাবি জানিয়েছেন বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক নূরুন নবী ভোলা। এ সময় পাঠাগারের সাধারণ পাঠকেরাও নূরুল হুদার অপসারণের দাবি তোলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নূরুন নবী ভোলা বলেন, আওয়ামী লীগের আদর্শ ও চেতনাবিরোধী এবং বিএনপি-জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ট ও জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক সাব্যস্তকারী চরম সুবিধাবাদী মুহাম্মদ নুরুল হুদার মতো ব্যক্তির বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর, যা বাংলাদেশের সুস্থ ধারা শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যের জন্য একটি অশনি সংকেত।
তিনি আরও বলেন, তিনি (কবি নূরুল হুদা) কার পক্ষে লিখল, কার বিপক্ষে লিখল সেটা বিষয় না। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে লিখেছেন। সারা বিশ্ব জানে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ তিনি লিখেছেন, মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।
ভোলা বলেন, তিনি (কবি নূরুল হুদা) মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করেছেন। নূরুল হুদা গিরগিটির মতো রঙ বদলান। আওয়ামী লীগের সময় আওয়ামী, বিএনপির সময় বিএনপি।’
দুর্নীতির অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমিতে চাকরির ক্ষেত্রে, পদোন্নতি, বই বের করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি (নূরুল হুদা) নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।’
বাংলা একাডেমির ডিজি নূরুল হুদাকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়ে পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহিদা বেগম বলেন, মো. নূরুল হুদাকে আমি শৈশব থেকে চিনি। তিনি আগে বাসাবোতে ছিলেন, আমার বাবার বাড়িও সেখানে। তিনি নিজেকে জাতিসত্তার কবি বলেন। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি যে কবিতা লেখেন তা বুঝতে তো ডিকশনারি ঘাটতে হয়। তখন তিনি বলেছিলেন, এই কবিতা কবিদের জন্য, তোমার জন্য না।
‘কবি নূরুল হুদা খালেদা জিয়াকে মা ডাকতেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে তিনি প্রায়ই দেখা করতেন এবং যোগাযোগ করতেন। এসব করে তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটের পরিচালক হয়ে গেলেন। সেখানে তিনি হেন অপরাধ নাই, যা তিনি করেন নাই। সেখানে তিনি এখান-ওখান থেকে নিয়ে অনেকগুলো বই বের করেছেন।’
তিনি বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের চেহারা বদলে ফেলেছেন হুদা। তিনি বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে কবিতা লিখেছেন। কিন্তু এখন তিনি নিজেকে সবচেয়ে বড় মুজিবসেনা হিসেবে নিজেকে জাহির করেন।
বাংলা একাডেমি জাতির মননের প্রতীক উল্লেখ করে সাহিদা বলেন, জাতির মননকে যদি কেউ কলুষিত করে তাহলে তা কি আমরা মেনে নেব? নেব না।
নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, কাটাবনে একদিন আমাকে ডেকে তিনি (নূরুল হুদা) বললেন, তুমি পুরস্কার পেয়েছ একমাত্র আমার জন্য। তোমার তো টাকার দরকার নাই। টাকাটা আমাকে দিয়ে দাও। পুরস্কার তো তুমি পেয়েছই। সেই ৩ লাখ টাকা এখনো আমি জমিয়ে রেখেছি। পরে খবর পেয়েছি, আরও অনেকেই সার্টিফিকেট পেয়েছে কিন্তু টাকা পায়নি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নূরুল হুদার অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা।