Logo
Logo
×

অন্যান্য

বিদ্যুৎ পানির জন্য হাহাকার

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১০:৫১ পিএম

বিদ্যুৎ পানির জন্য হাহাকার

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গাছ উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে এখনো ৭৫ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। দ্রুত এসব সংযোগ চালু করতে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এটি জানানো হয়। 

এদিকে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ইন্টারনেট সংযোগ। দেখা দিয়েছে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা। লোকবল সংকট থাকায় ভেঙে পড়া এত গাছ দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের তারের ওপর থেকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর উপকূল এলাকায় লবণ পানিতে তলিয়ে থাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিচ্ছিন্ন হওয়া ৮০ শতাংশ গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ পুনরায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে। 
রিমালের তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় তিন কোটি তিন লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ২ কোটি ৪২ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। রাত ১০টার মধ্যে ৮৫ শতাংশ পুনঃসংযোগের কাজ শেষ হবে। অবশিষ্টাংশ পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে। বুধবার সকালের মধ্যে ৯০ শতাংশ গ্রাহকের বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ সম্পন্ন হবে। 

দেশের অধিকাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। সব সংযোগ ফিরিয়ে আনতে আরইবির ঠিকাদার, নিজস্ব জনবলসহ ৩০ হাজারের বেশি কর্মী মাঠে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রাথমিক তথ্যানুসারে, ঘূর্ণিঝড়ে আরইবির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

ঢাকার বাইরে শহর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। তাদের ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ১৫৪ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ১৪ লাখ ৩ হাজার ৫২৬ জন গ্রাহক এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬২৮ জন গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। এ ঘূর্ণিঝড়ে ওজোপাডিকোর ৫ কোটি ৭ লাখ ৮১ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বরিশাল ও আগৈলঝাড়া : দুদিন পরেও স্বাভাবিক হয়নি বরিশাল নগরের বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে বরিশাল নগরীতে হাহাকার দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় নগরবাসী সুপেয় পানির চরম সংকটে রয়েছে। দ্বিগুণ টাকার বিনিময়ে দোকানেও মিলছে না বোতলজাত পানি ও মোমবাতি। বিদ্যুৎ না থাকায় চালানো যাচ্ছে না সিটি করপোরেশনের পানির পাম্পগুলো, অচল অবস্থায় রয়েছে বাসাবাড়িতে থাকা মটরও। ফলে সন্ধ্যার পর ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হচ্ছে বরিশাল। পাশাপাশি খাবার পানির সংকটে দেখা দিয়েছে হাহাকার। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় পানি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বহু মানুষকে দেখা গেছে দূরদূরান্ত থেকে খাবার পানি আনতে। রোববার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বন্ধ ছিল সিটি করপোরেশনের ৩৮টি পানি উত্তোলনের পাম্প। মঙ্গলবার ছয়টি পাম্প সচল করা হলেও বরিশাল নগরীর সাড়ে ছয় লাখ বাসিন্দার জন্য তা অতি নগণ্য। খাবার পানির সংকটে বাধ্য হয়েই বোতলজাত পানি কিনতে গিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে নগরবাসী। অন্যদিকে নগরীর দোকানগুলো মোমবাতি শূন্য হয়ে গেছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলাজুড়ে। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মানুষ। 

নগরীর আমির কুটির এলাকার বাসিন্দা মীর্জা রিমন বলেন, বাসায় বিদ্যুৎ নেই। চার্জার লাইটের চার্জও ফুরিয়ে গেছে। বিকল্প হিসাবে মোমবাতির জোগাড়ও করতে পারছি না। খুবই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে রয়েছি। আগৈলঝাড়া উপজেলায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নসহ মোবাইল নেটওয়ার্কও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। 

ভোলা : বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল শহর ও গ্রাম। ইন্টারনেটের সংযোগও বিচ্ছিন্ন ছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে ঝড়ের প্রভাব কমে এলে মোবাইল ফোন যোগাযোগ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। 

শরীয়তপুর : জেলার সাড়ে ৪ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপরে প্রায় ৭০০ গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে ২৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। লোকবল সংকট থাকায় এত গাছ দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে সকাল থেকে সদর উপজেলা ও জাজিরার কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও দেখা দিয়েছে ত্রুটি। 

পাইকগাছা (খুলনা) : দেখা দিয়েছে তীব্র পানীয় জলের সংকট। বিদ্যুৎবিহীন তিনদিন কাটিয়েছে পাইকগাছাবাসী। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে যে পরিমাণ শুকনা খাবার বা খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সবখানে লবণ পানিতে তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট- এমনটি জানিয়েছেন দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল। 

নলছিটি (ঝালকাঠি) : বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ও খুঁটি উপড়ে পড়ে আছে। এতে রোববার সন্ধ্যার পর থেকে নলছিটি শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। 
কুমিল্লা : বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ১০ লাখ গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, বরুড়া, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, লালমাই ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এসব এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের অসংখ্য খুঁটি ও তার ছিঁড়ে গেছে। লাইন মেরামত না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ৪ কর্তৃপক্ষ।

মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) : উপজেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ৪ লাখ মানুষ। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. শহীদ উদ্দিন বলেন, রোববার মধ্যরাত থেকেই ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সোমবার ভোর থেকে পুরোপুরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে এসেছে। সংযোগ সচল করতে কাজ শুরু হয়েছে। 

কুড়িগ্রাম : বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে গোটা জেলা। তবে কুড়িগ্রাম পৌর শহরে কিছুটা বিদ্যুতের দেখা মিললেও পল্লী বিদ্যুতের দেখা মিলছে না ১৭ ঘণ্টা। ফলে ব্যাটারি অটোরিকশার চালক ও বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলো বিপাকে পড়েছেন। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে মোবাইলের নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না ভালোমতো।

কিশোরগঞ্জ : জেলা শহরের ৪ নম্বর ফিডারের প্রায় ৭ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন ৭০ হাজার নাগরিক। ব্যাটারি রিকশায় চার্জ দিতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন এ পরিবহণকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা নিæ আয়ের মানুষ। এ ছাড়া চরম দুর্ভোগ-ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিক ও স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা লোকজন। এমনকি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও স্বাভাবিক লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। 

তালতলী (বরগুনা) : সরকারি ও বেসরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় খাদ্য সংকট রয়েছে। পুরো উপজেলা টানা ৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ারা তুমপা বলেন, পনিবন্দি মানুষের বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।

শেরপুর : জেলার কোনো কোনো স্থানে ৩০ ঘণ্টা থেকে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়। দেখা দেয় বাসাবাড়িতে পানি সংকট। ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হওয়ায় অনেকেই বিপাকে পড়েন। ব্যাটারি অটোরিকশা ও ভ্যানে চার্জ দিতে না পারায় সড়কে যানবাহন চলাচল একদম কমে যায়। 

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) : লন্ডভন্ড হয়ে গেছে উল্লাপাড়ায় সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১৫টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। তিনশ স্থানে ছিঁড়ে গেছে বিদ্যুৎ লাইন। ২৯৭টি বৈদ্যুতিক মিটার ভেঙে গেছে। ফলে সোমবার রাত থেকে গোটা সমিতি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২ শতাধিক গ্রামের মানুষের রাত কাটে অন্ধকারে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম