ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসার জন্য গিয়ে খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তবে মরদেহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও তার মরদেহ উদ্ধার নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কলকাতায় পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়েছে এমপি আনোয়ারুল আজিমকে।
যদিও এখনো সংসদ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার হয়নি।
সূত্রের খবর, এই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। তার পরেই নিউটাউনের সেই অভিজাত বাড়িটি, যেখানে এমপি আনার ওঠেছিলেন সেখানে বুধবার পরিদর্শন করেছেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডির মহাপরিদর্শক (আইজি) অখিলেশ চতুর্বেদী।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অখিলেশ চতুর্বেদী। তিনি বলেন, আনোয়ারুল আজিমকে খুন করা হয়েছে বলে আমরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি। কিন্তু আমরা তদন্তে এসে শনাক্ত করা ফ্ল্যাটে তার মরদেহ পাইনি।
জানা গেছে, গত ১২ মে ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন এমপি আনার। প্রথমে উঠেছিলেন বরাহনগরে তারই এক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। দিন-দুয়েক সেখানে থাকার পর বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল। তারপর থেকেই আর তার খোঁজ মিলছিল না। বাংলাদেশে আনোয়ারুলের পরিবারও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। গোপাল তাদের জানান, তিনিও আনোয়ারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
সিআইডির আইজি অখিলেশ বলেন, খোঁজ না পেয়ে গোপাল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত করতে একটি দল গঠন করে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। সেই তদন্ত চলছিল। তার মধ্যে ২২ মে আমরা জানতে পারি, তাকে (আনোয়ারুল) খুন করা হয়েছে। শেষবার যেখানে তাকে দেখা গিয়েছিল, সেই জায়গাটি খুঁজে বের করে স্থানীয় থানা পুলিশ। এরপরে সিআইডিকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়।
সিআইডি সূত্রে খবর, নিউটাউনের যে আবাসনে আনোয়ারুল ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে, সেই ফ্ল্যাটটির মালিক সরকারি কর্মচারী সন্দীপ রায়। তিনি আবার আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তিকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন। সিআইডির আইজি জানিয়েছেন, আখতারুজ্জামান আমেরিকার নাগরিক। কিন্তু আখতারুজ্জামানের নামে ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে কী করে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য থাকলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আনোয়ারুল যে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে আছেন- তা জানা গেল কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির আইজি অখিলেশ বলেন, ১৮ তারিখে একটি নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তারপর ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই তদন্ত করতে গিয়েই আমরা খবর পাই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান অখিলেশ জানান, এখন পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়নি। আমরা কেসের তদন্ত শুরু করেছি। আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে, তাতে ১৩ তারিখে তিনি এই ভবনে ঢুকেছিলেন। তবে এর আগে এসেছিলেন কি না- সেটি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। যদিও বিষয়টি এখনো তদন্তসাপেক্ষ।
মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে সে ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি এখনই বলা সম্ভব নয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফটোগ্রাফি সব টিমকে এই তদন্তে ইনভাইট করা হয়েছে। তারা খতিয়ে দেখছে।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, নিউটাউনের আবাসনের ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ইতোমধ্যেই সেখানে পৌঁছে নমুনা সংগ্রহের কাজ করেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। রক্তের দাগ এমপি আনোয়ারুলেরই কি না- তা খতিয়ে দেখা হবে।
চিকিৎসা করার উদ্দেশে গত ১২ মে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন আনোয়ারুল। ১৪ মে পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তবে ১৬ মে সংসদ সদস্যের ফোন থেকে আনোয়ারুলের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের কাছে ফোন আসে। তিনি ফোন ধরতে পারেননি। পরে আবার তিনি ফোন করলে ফোনটি বন্ধ পান। এরপর থেকে আনোয়ারুলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।