Logo
Logo
×

অন্যান্য

কিরগিজস্তানে হামলার শিকার বাংলাদেশিরা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ১০:১৮ পিএম

কিরগিজস্তানে হামলার শিকার বাংলাদেশিরা

কিরগিজস্তানে প্রবাসীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সহিংসতায় হামলার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশিরা। শুক্রবার রাতভর রাজধানী বিশকেকে সংঘাতের মধ্যে পড়ে আতঙ্কে রয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাদের বাড়িঘরে অবরুদ্ধ সময় কাটছে। নিরাপত্তার জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

জরুরি সহায়তার জন্য ভারত ও পাকিস্তান সরকার হেল্পলাইন চালু করলেও তেমন উদ্যোগ নেই বাংলাদেশের। তবে পাশের দেশ উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে তারা খোঁজখবর রাখছে। 

প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, কিরগিজস্তানে প্রবাসীদের জন্য শুক্রবার রাত ছিল আতঙ্ক আর উদ্বেগের। রাজধানী বিশকেকের বিভিন্ন জায়গায় অভিবাসীদের ওপর হামলা চালান স্থানীয়রা। বেপরোয়া নাগরিকদের থামাতে হিমশিম খেতে হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিতণ্ডা থেকে সূত্রপাত হলেও কিরগিজরা জাতি এবং পেশা নির্বিশেষে চড়াও হয়েছে প্রবাসীদের ওপর। রাস্তাঘাটে মারধরের পাশাপাশি প্রবাসী শ্রমিক ছাত্রদের মেস ও বাসাবাড়িতে ঢুকেও চালানো হয় হামলা। সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও মারধরের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশিদের ওপর হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

বাংলাদেশি এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাঙালি, পাকিস্তানি, ইন্ডিয়ার যাকে যেখানে পাচ্ছে তাকেই মারধর করছে। আমরা রুমের ভেতরে দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে আছি।’

বাংলাদেশি আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আতঙ্কের কারণে এখনো রুম থেকে বের হতে পারছি না। আমরা অনেকে নিরাপদ স্থানে আছি আবার অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আছি। আমাদের অনেকে আহত হয়েছেন।

কিরগিজস্তানের ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব মেডিসিনের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সামিয়া কবির শনিবার সন্ধ্যায় একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এখানে পাঁচজন বাংলাদেশি মেয়ে আছি। আমরা এখন আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে আছি। আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে কিছু লোক জড়ো হচ্ছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।’

সামিয়া আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের ভেতরে থাকতে বলেছে। আমরা কাছাকাছি অন্যান্য অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। সেখানে কিছু পাকিস্তানি থাকতে পারে।’

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজিত স্থানীয়রা পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আবাসস্থল হোস্টেল লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাদের সাহায্যের আবেদন প্রচারের অনুরোধ করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বিবৃতি দিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান সরকার। চালু করেছে হেল্পলাইন। শনিবার দিনের বেলা পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও আতঙ্ক কাটেনি। হামলার ভয়ে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না প্রবাসীরা। 

প্রবাসী এক বাংলাদেশি সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন এখানে আমাদের রক্ষায় যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। কিরগিজ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করে। যাতে আমরা নিরাপদে বসবাস করতে পারি এখানে। 

বাংলাদেশি এক প্রবাসী গণমাধ্যমকে বলেন, বাসায় বাজার নেই, বাজারে যেতে পারছি না। ঘরে খাবার নেই। আতঙ্কে বাইরে যেতে পারছি না। রাস্তায় গেলেই কিরগিজরা মারধর করছে। বাংলাদেশি কোনো অ্যাম্বাসি না থাকায় আমরা কোনো সহায়তা পাচ্ছি না। 

উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশিদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এখনো তাদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। তাদের অনুরোধ করেছি যেখানে আছেন নিরাপদে থাকার চেষ্টা করেন। 

এদিকে কিরগিজস্তান সরকার বলছে ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। 

জানা গেছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানে। রাজধানী বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা চালান স্থানীয়রা। এতে করে অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই পাকিস্তানি ও ভারতীয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে হামলার ভিডিও। 

ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসাবিক ভবন, সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। এ ঘটনার পর কিরগিজস্তানে অবস্থানরত ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এসব ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল বা ক্যাম্পাস ছেড়ে বের না হওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়। 

সম্প্রতি মিসরীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘাত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা হয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপরে। কিরগিজস্তানে ৩০ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। 

হামলার শিকার বিদেশি শিক্ষার্থীরা জানান, স্থানীয়রা হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে। সেখানকার পুলিশ প্রশাসন কেউই তাদের সহায়তা করছে না। 

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, হামলায় তিন পাকিস্তানি ছাত্র নিহত হয়েছেন। তবে পাকিস্তান সরকার বলেছে, তারা এখনও কোনো মৃত্যুর খবর পায়নি। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। 

রাজধানী বিশকেকে ভারতীয় ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানোর পর শনিবার কিরগিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন যে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম