Logo
Logo
×

অন্যান্য

নগরায়ণ বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরির যন্ত্রে পরিণত হয়েছে: বাপা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৯ পিএম

নগরায়ণ বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরির যন্ত্রে পরিণত হয়েছে: বাপা

বাংলাদেশে নানাভাবে পরিবেশ দূষিত হওয়ায় ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর দাবদাহ আরও বাড়বে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের কারণে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে তাপমাত্রা বাড়ছে। পরিবেশের প্রতি ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষের কারণে অফুরন্ত ক্ষতি হচ্ছে। ফলে একটি বিকলাঙ্গ প্রজন্ম গড়ে তোলার যন্ত্র হিসাবে পরিণত হয়েছে আমাদের নগর ও নগরায়ণ। 

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে ‘নগর তাপদাহের তীব্রতা : প্রেক্ষিত ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব এসব কথা বলেন।

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে নগরীগুলোয় তাপমাত্রা অনুভবের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে অনুভবের মাত্রা বেড়েছে। কারণ, পরিবেশ ও প্রতিবেশের সঙ্গে সহমর্মিতায় সহাবস্থানের মানসিকতার প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণও তীব্রভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধানের তীব্রতার প্রতিফলনই হচ্ছে এ অনুভবের প্রখরতা বৃদ্ধি। ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। 

বৈশ্বিক উষ্ণতার সঙ্গে দেশের তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড ভঙ্গের বিষয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, আমরা জমি ও সবুজ বনায়ন ধ্বংস করছি। মানুষের মধ্যে গাছ লাগানোতে অনাগ্রহসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকৃতিভিত্তিক সমস্যা সমাধান না করা এবং শীতাতপ যন্ত্রের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার প্রকৃতিকে আরও উত্তপ্ত করছে। আমাদের নগরদর্শনে পর্যাপ্ত জলাধার রক্ষা ও সবুজায়নকে প্রাধান্য না দিয়ে সব প্রকল্প অনুমোদনকে আমরা দায়ী করি। এক্ষেত্রে সরকারের করণীয় রয়েছে। তাপমাত্রা কমাতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে উদ্যোগ নিলে এ সমস্যা সমাধান হবে বলে মনে করি।

তিনি বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ২৫ শতাংশ জায়গা খালি রাখার বিধানে বাধ্যতামূলক গাছ লাগানোর বিষয়ে সংশোধন করতে আমাদের সংগঠন থেকে আবেদন জানানো হয়েছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা ও পানি, বায়ু, মাটির দূষণ রোধের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে আইন সংশোধন করার দাবি জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা ও উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নগর জঘন্যভাবে ঢাকাকে অনুসরণ করছে। অর্থাৎ ঢাকায় যে ধ্বংসকারী উন্নয়ন হচ্ছে, এটা তারা দ্রুত কপি করছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের উত্তপ্ত দূষিত বাতাস প্রবেশ করে সেখানকার পরিবেশকে অনেক বেশি উত্তপ্ত করছে। শুষ্ক মৌসুমে ওই অঞ্চলে নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে উষ্ণতা বাড়ছে। বর্তমানে পাড়া-মহল্লায় ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ করায় পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে স্থপতি প্রকৌশলী ও বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে।

ইকবাল হাবিব বলেন, দেশের নগরীগুলোয় দাবদাহ অনুভবের এই তীব্রতা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ হলো ভুল নগরদর্শন। নব্বইয়ের দশকের পর নগরীগুলোয় অপরিকল্পিত, মানববিচ্ছিন্ন এবং পরিবেশবৈরী কর্মধারার মধ্য দিয়ে দ্রুতগতির নগরায়ণের ধারার যে বিকাশ, আজকের এ নগরীগুলোর অভিঘাতগুলো তারই প্রকাশ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বরাবরই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির তালিকায় অন্যতম। পাশাপাশি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এল নিনোর প্রভাব, বাংলাদেশে চরমভাবাপন্ন পরিবেশ ও আবহাওয়ার সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে ষড়ঋতুর এ দেশে ঋতু পরিবর্তনে অসংগতি দেখা দিচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৮টি দাবি জানিয়েছে বাপা। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বন ও বনভূমি সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ, প্রণোদনা ও আইনভঙ্গকারীদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা। নগরীতে বিদ্যমান পুকুর, জলাধার ও জল সংরক্ষণ উদ্যোগগুলোর ত্বরান্বিত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। দেশব্যাপী সুপরিকল্পিত নগর সবুজায়ন নীতিমালাভিত্তিক বাস্তবায়ন কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করা।

বাপার সভাপতি ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মিহির লাল সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির প্রমুখ। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম