ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা টানা চারদিন কর্মবিরতিতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক আজ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৭ এএম
ভাতা বাড়ানো, বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দফা দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো সারা দেশে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। একযোগে প্রায় ১০ হাজার চিকিৎসকের কর্মবিরতিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে আজ (বৃহস্পতিবার) আলোচনায় বসবেন।
বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা মেডিকেল শাখার আহ্বায়ক ডা. আল মামুন সরকার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস বিভিন্ন সময় দেওয়া হলেও তা পূরণ করা হচ্ছে না। পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় আমরা আন্দোলনে নেমেছি। চার দফা দাবি মেনে নিলে আমরা হাসপাতালে ফিরে যাবে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে আলোচনা বসার আশ্বাস দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকার চিকিৎসকরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান করব। সেখানে থেকে ২০ সদস্যের একটি দল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের মূল দাবি থাকবে- ঈদের আগে সব বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। ১২টি প্রতিষ্ঠানের ভাতা পুনরায় চালু করতে হবে। ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি কতদিনের মধ্যে কার্যকর হবে সেটা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লিখিত আকারে দিতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন যুগান্তরকে বলেন, আমি বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস দেইনি। তাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ বেতন-ভাতা বাড়াতে হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। আমার আহ্বানে তারা কাজে ফিরে আসুক। রোগীদের সেবা দিক। আমার ওপর আস্থা রাখুক। আমি চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি।
চিকিৎসকদের আন্দোলনের ঘোষণা আসে শনিবার। চার দফা দাবিতে তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানববন্ধন করেন। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি এজন্য রোববার পর্যন্ত সময় চান। এরপরও কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন জানান, কবে নাগাদ সমাধান আসবে সে বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা ভাতা কত বাড়ানো হবে তা বলেননি। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিÑআমরা হাসপাতালে ডিউটি করব না।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনিদের ভাতা ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন চিকিৎসকরা। গত বছর ওই ভাতার পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। এতে তারা সন্তুষ্ট নন। অন্যদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ১৫ হাজার টাকা ভাতা পান। তারা সেটি ৩০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের চার দফা দাবির মধ্যে এফসিপিএস, রেসিডেন্ট, নন-রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের বকেয়া ভাতা পরিশোধ করার বিষয়টিও আছে। এছাড়া বিএসএসএমইউর অধীনে ১২টি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের রেসিডেন্ট এবং ননরেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ভাতা আবার চালু করা এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ ও বাস্তবায়ন করা।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঁচ শতাধিক ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্মবিরতি পালন করায় চিকিৎসা দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার শঙ্কায় অনেকে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছে। চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মো. লোকমান বলেন, চিকিৎসকের দেখা মিলছে না। এতে জটিল রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান যুগান্তরকে বলেন, রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এভাবে কতদিন চালানো যাবে তা বলতে পারছি না।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, চিকিৎসক ধর্মঘটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি-কর্মবিরতি চললেও সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করা হচ্ছে। অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত মাহমুদুল ইসলাম বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা গেছে। উন্নত চিকিৎসা নিতে পাবনা থেকে তিনি হাসপাতালের ১৭নং ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। মাহমুদুলের মা নুরুন্নাহার জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা হাসপাতালে আসেন। তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ১২ ঘণ্টা পরও চিকিৎসক আসেননি।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের ১৯০ ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্মবিরতি পালন করায় চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সিনিয়র চিকিৎসকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও তা খুবই অপ্রতুল বলে দাবি রোগী ও স্বজনদের। রোগী আবদুল মোতালেব বলেন, হাসপাতালে চাহিদা মতো সেবা পাচ্ছি না। বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর মতো আমার টাকা নেই। তাই এখানে পড়ে থেকে ভুগছি।
বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালের প্রাণ। তারা কর্মবিরতিতে থাকলে কর্তৃপক্ষকে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। তাই অবিলম্বে কর্মবিরতি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। চিকিৎসকদের দাবি আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।