Logo
Logo
×

অন্যান্য

সংসদে স্থায়ী করে দ্রুত বিচার আইন বিল পাশ

Icon

সংসদ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৩১ পিএম

সংসদে স্থায়ী করে দ্রুত বিচার আইন বিল পাশ

সময় সময় মেয়াদ বাড়ানোর বদলে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে দ্রুত বিচার আইন।  মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার-সংশোধন) বিল পাশ হয়েছে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি পাশের জন্য উত্থাপন করেন। পরে এর ওপর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০২ সালে প্রথম আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ আইনটি করে দুই বছরের জন্য। এরপর ৭ দফা এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেদিন মন্ত্রিসভায় বিলের খসড়া অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত বিলটি সংসদে পাশ হলো। বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্য কোনো সংশোধনী আনা হয়নি।

বিলটি পাশের বিরোধিতা করেন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তবে এই বিরোধিতা আমলে নেওয়া হয়নি। বিল পাশের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার যখন আইনটি করেছিল, তখন আপনারা (তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ) বলেছিলেন, এটি নিপীড়নমূলক ও কালো আইন। এই আইনটি রাজনৈতিক কারণ বা সরকার চাইলে যে কোনো কারণে নাগরিককে হয়রানি করতে পারে। সে আইনটি আপনারা রেখেছেন। আমি জানি না কেন রেখেছেন? তিনি আরও বলেন, যখন আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন না, অন্য কেউ ক্ষমতায় আসবেন, তখন উদ্দেশ্য তো ভালো নাও থাকতে পারে। আপনারা কী এটা বলতে চান, বিএনপি যে আইনটা এনেছিল, তা ভালো ছিল? এটাই আজকে স্বীকার করুন।

মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, র‌্যাব যখন গঠন করেছিল, আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। সেই র‌্যাব এখন টিকে আছে, তারা কাজ করছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, যদি প্রয়োজন পড়ে এক-দুই বছর আইনের মেয়াদ বাড়ান। কিন্তু আইনটি স্থায়ী করবেন না। করলে ভবিষ্যতে একদিন আপনাদের এমন অবস্থা হবে, সেদিন আফসোস করবেন।

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আইনটি ভালো। তাহলে বিএনপি যখন আইনটি করেছিল, তখন আপনারা বিরোধিতা করেছিলেন কেন? এখন ভালো হয়ে গেল! আপনি বলেছিলেন অপপ্রয়োগ হয় কিনা যারা আন্দোলন করছে তারা বলতে পারবে। আমরা যদি কখনো আপনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাই, তখন বলতে পারব অপপ্রয়োগ হচ্ছে কিনা।

একই দলের হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আইনটি এনেছিল বিএনপির সময়। ওই সময় আমরা ও আজকের সরকার আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করেছিলাম। তারপরও আইনটি পাশ হয়েছিল। আজকেও পাশ হবে। আমার প্রশ্ন হলো যার জন্য গর্ত খুঁড়বেন, নিজেকেই সেই গর্তে পড়তে হয়। আজকে বিএনপি সেই গর্তে পড়েছে। এখন আওয়ামী লীগ আইনটিকে স্থায়ী করতে নিয়ে এসেছে। দিন একরকম থাকবে না।  তিনি আইনটিকে স্থায়ী না করে চার-পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে আইনটি করার সময় বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি ছিল দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আইনটি কখন আনা হয়েছিল তা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। শান্তির পরিবেশ তৈরির জন্য আইনটি স্থায়ী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সে সময় নানা ধরনের অপরাধ হতো, তাই হয়তো আইনটি তৎকালীন সরকার করেছিল। আমি মনে করি, আইনটি করার উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যেন তাৎক্ষণিক বিচার পায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায়, সেটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সংসদ-সদস্যরা অনেক সময় আমাদের কাছে পাঠান, যেন এ আইনের মাধ্যমে বিচার হয়। শুধু সংসদ-সদস্য নয়, অনেকেই আইনটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান। কারণ একটাই, যাতে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি পায়। সংসদ-সদস্যদের কেউ বলেননি আইনটি বাতিল করে দেন। কেউ বলেননি আইনটি যথাযোগ্য নয়। তারা সময় বাড়িয়ে আইনটি চালু রাখার কথা বলেছেন। আইনটি একই রকম আছে, আমরা কোনো সংশোধন করিনি। কাউকে উদ্দেশ করে বা ক্ষতি করার জন্য আইনটি হয়নি। কোনো রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন না, এ আইনের মাধ্যমে শাস্তি হয়েছে। 

অফশোর ব্যাংকিং বিল পাশ : এদিকে বিরোধী দলের আপত্তির মুখে এদিন দেশে প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিং আইন পাশ করছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ‘অফশোর ব্যাংকিং বিল ২০২৪’ পাশের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাশ হয়। এর আগে বিলটির জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি হয়।

বিলের কারণ ও উদ্দেশ্য বিস্তারিত না থাকায় বিলটি নিয়ে সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। আইনটি আগে ছিল না। উদ্দেশ্য ও কারণে বিস্তারিত থাকলে আমরা বলতে পারতাম। আমার মনে হয় না সরকার ও বিরোধী দলের এমপিদের আইনটি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে। আইনটির সুবিধা কী আর অসুবিধা কী তা সরকারের কাছে জানতে চান তিনি।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অফশোর ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমুদ্র দূরবর্তী তীরে বাহামা দ্বীপের মতো দ্বীপে সেখানে বড় বড় চোররা, রাঘব-বোয়ালরা, রাষ্ট্রনায়কেরা, চোরকারবারিরা অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হালাল করে তারপর বিদেশে ট্রান্সফার করত। বাংলাদেশেরও কোনো কোনো ব্যক্তির নাম এসেছে পত্রিকায়। তারা অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হালাল করেছেন, বিদেশে বাড়ি করেছেন, হোটেল করেছেন। যেসব চোর বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে তারা যদি এ ফাঁকে কর ছাড়া টাকা ফেরত আনেন ভালো। টাকা পাচারকারীরা ফেরত আনবে বলে মনে হয় না। তিনি অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার বাড়ার আশঙ্কা করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে একই দলের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কে আমরা যেটা শুনি যে বিভিন্ন জায়গায় টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করে বারমুডা, এখানে-সেখানে রাখা হয়। এ ব্যাংকিং সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা আছে। এ আইনের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ট্যাক্স ফ্রি আসতে পারবে। কিন্তু এটার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াটা কীভাবে এড্রেস করব? এ জিনিসটা আমাদের জানা দরকার। আইনটির ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন মাসুদ উদিন চৌধুরী।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কী অবস্থা? আমরা দেখছি সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের কঠিন অবস্থা। সাধারণ মানুষ যদি তাদের টাকা তুলে নেয় ব্যাংকগুলোর চালানোর গতি নেই। চেক দিলে বলে টাকা নেই বসেন, পরে আসেন।

তিনি বলেন, দেশীয় ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি করবে কিনা জানি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকাই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তারা নিজেরাই খোঁজ রাখে না। ব্যাংকগুলোর খোঁজ তারা কীভাবে করবেন? ব্যাংক তদারকি করে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সেটা জানতে চান হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।

বিলে বলা হয়েছে, তফসিলি ব্যাংকগুলো অফশোর ব্যাংকিং করতে পারবে। এ বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংক পর্ষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকতে হবে। তফসিলি ব্যাংকের অফশোর কার্যক্রমের জন্য পৃথক হিসাবপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিট থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে। 

বিলে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট যে কোনো অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব পরিচালনা করতে পারবে। অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের প্রদেয় সুদ বা মুনাফা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত থাকবে। আইন না থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশে একভাবে অফশোর ব্যাংকিং চালু আছে ১৯৮৫ সাল থেকে। পরে ২০১৯ সালে অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর কয়েকটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। এখন এ বিষয়ে আইন করা হচ্ছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে স্ক্যানিং মেশিন স্থাপনের সুপারিশ : ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে দুটি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপনের পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। মঙ্গলবার জাতীয়  সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। কমিটির সদস্য মো. জিল্লুল হাকিম, শফিকুল ইসলাম শিমুল, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মো. শফিকুর রহমান ও মোছা. নুরুন নাহার বেগম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকে রেলপথে অবৈধ মালামাল পরিবহণ রোধ ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন প্রকল্পটির কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্নের সুপারিশ করা হয়। স্মার্ট বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের টিকিটপ্রাপ্তি সহজতর করতে বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম