ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যাবে না: প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:২৬ পিএম
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে যারা অস্বীকার করছে সরকারের কোনো কিছু তাদের ভালো লাগে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে এক সময় মুছে ফেলা হলেও এখন আর কেউ তা পারবে না।
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে দলের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ার কথাও জানান তিনি।
আলোচনা সভার সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা এখানে সমাবেত হয়েছি ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বাংলাদেশ ও বাঙালি, আজকে বিশ্বের বুকে যে পরিচয়টা পেয়েছি, সেটা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমান। আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি, আমরা স্বাধীন জাতি হিসাবে মর্যাদা পেয়েছি, এই উপমহাদেশে একমাত্র ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। সে জাতি-রাষ্ট্র আমরা পেয়েছি।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারসহ সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে অনেক আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে। সাতচল্লিশ সালে করাচিতে একটা শিক্ষা সম্মেলন হয়, সেখানে বলা হয় রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা এই প্রদশের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে প্রতিবাদ জানায়।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুছে ফেলা হয়েছিল। এখন পারবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ১৯৫৮ সাল থেকেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট করত। আমি ছিয়ানব্বই সালে সরকার গঠন করে এসবি অফিস থেকে সব ফাইল সংগ্রহ করি। আমার সঙ্গে ছিলেন বেবী মওদুদ (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহপাঠী, প্রয়াত সাংবাদিক)। দুজনে মিলে ফাইলগুলো পড়ি। ভাষা আন্দোলনে তিনি কি কি কাজ করেছেন, তা কিন্তু স্পষ্ট হয়েছে। প্রথম খণ্ডেই অনেক তথ্য রয়েছে। রিপোর্টগুলো শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখনই তথ্যগুলো নিয়ে একবার বক্তব্য দিলাম, আমাদের দেশের একজন লেখক (বদরুদ্দিন ওমর), যারা আবার ভাষা আন্দোলন ও তার অবদান নিয়ে লেখেন, তিনি আমার ওপর খেপে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে লিখলেন, আমি নাকি এসব তথ্য বানিয়ে লিখেছি। বিজাতীয় ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এবং তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবীর বক্তব্য ছিল-তিনি (বঙ্গবন্ধু) আবার ভাষা আন্দোলনে কী অবদান রেখেছিলেন? তিনি তো জেলেই ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জেলে তিনি ছিলেন কেন? তিনি তো ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের মানুষের কথা বলতে গিয়েই তো বারবার তিনি জেলে গেছেন। পাকিস্তান নামে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানেও এই পূর্ব বাংলার মানুষেরই অবদান ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর বেবী মওদুদ তথ্যগুলো নিয়ে এমআর আক্তার মুকুল (প্রয়াত ভাষাসৈনিক) ভাইয়ের বাসায় যাই। আমরা তো চুনোপুঁটি, আমরা লিখলে হবে না। তাই মুকুল ভাইকে বললাম-আপনি লিখবেন, আপনি জবাব দেবেন। উনি লিখলেন, তারপর আর কোনো কথা নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা, এটা আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ করত। এখনো দেখবেন, যা কিছু করেন কোনো কিছু তাদের ভালো লাগে না। ভালো না লাগার গ্র“পই আমাদের বদনাম ছড়ায় সব জায়গায়। তাদের কিছু ভালো লাগে না, এটাই হলো বড় কথা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ সভায় বক্তৃতা করেন।