শহিদ মিনারে জনতার ঢল, শ্রদ্ধা ভালোবাসায় ভাষা শহিদদের স্মরণ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৭ পিএম
বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতি ভাষা শহিদদের স্মরণ করেছে। শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারসহ সারা দেশের সব শহিদ মিনারে ছাত্র-জনতার ঢল নামে। তাদের পোশাক ও সাজে ছিল শোকের কালো রঙ। কণ্ঠে ছিল বেদনাবিধুর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’। এ সময় সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ উৎপাটনের অঙ্গীকার করেন তারা।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকেই ব্যানার নিয়ে বিভিন্ন দল ও শ্রেণি পেশার সংগঠন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারমুখী রাস্তায় (পলাশী থেকে শহিদ মিনার পর্যন্ত) জড়ো হতে থাকেন। রাত যত গড়াতে থাকে জনতার ভিড় তত বাড়তে থাকে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তারা শ্রদ্ধা জানানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও বিভিন্ন বাহিনীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পরই শুরু হয় সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা। এ সময় দীর্ঘ লাইনের কোথাও কোথাও হুড়োহুড়ির ঘটনা ঘটে। শ্রদ্ধা নিবেদন বুধবার দুপুর পর্যন্ত চলে।
ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা বাজার সাত মিনিট আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে পৌঁছেন। এর তিন মিনিট পর রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পৌঁছেন। অমর একুশের ঐতিহাসিক অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি... আমি কি ভুলিতে পারি’ গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রথমে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পরই প্রধানমন্ত্রী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা জানানোর পর তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ-সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এর আগে রাষ্ট্রপতিকে শহিদ মিনারে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল।
আওয়ামী লীগের পক্ষে শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী মো. ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের অগ্রগতির পথে বাধা সাম্প্রদায়িকতা। বিএনপির নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষ ডালপালা বিস্তার করেছে, সে বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন করব আমরা। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, ‘বাংলা পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভাষার জন্য যে সংগ্রাম চলছে তাতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে আমাদের ভাষা আন্দোলন। ভাষা শহিদদের ত্যাগ ও বিসর্জন বিশ্বের কাছে অমূল্য। তাই বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে হবে।’
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদিতে ফুলের শ্রদ্ধা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।’
রাত থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদিতে ফুলের শ্রদ্ধা জানায়- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণফ্রন্ট, তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা জেলা প্রশাসন, বিসিএসআইআর, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটি, মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর, জাতীয় শ্রমিক লীগ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ যুবমৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, জাতীয় হকার্স লীগ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় পার্টি, শেখ কামাল ধানমন্ডি ক্লাব, বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এ ছাড়া সর্বস্তরের মানুষ হাতে ফুল নিয়ে এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’- গান গেয়ে খালি পায়ে শহিদ মিনারে উপস্থিত হয়ে বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অমর একুশে উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এর মধ্যে ছিল প্রভাত ফেরি, স্থানীয় শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানা এলাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।
ডিএনসিসি’র ৪২নং ওয়ার্ডে বিভিন্ন কর্মসূচি : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২নং ওয়ার্ডে (বেরাইদ) বুধবার মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে। ওয়ার্ডের বেরাইদ গণপাঠাগার, একেএম রহমত উল্লাহ কলেজ, বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল, রওশনআরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বেরাইদ মুহাম্মাদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, আলহাজ রাহীমুল্লাহ মোল্লা দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা, শতদল জুনিয়র হাইস্কুল, বেরাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফকিরখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেরাইদ মডেল স্কুল, আল ফালাহ আইডিয়াল স্কুল ও আবদুল মতিন একাডেমিতে একুশের কর্মসূচি পালিত হয়।