স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন
চিকিৎসক হওয়ার পারিবারিক চাপ ছিল হুমায়রার ওপর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:২৬ পিএম
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় হুমায়রা ইসলাম ছোঁয়া পারিবারিক চাপে ভর্তি পরীক্ষায় ওএমআর ছিঁড়ে ফেলার গল্প মঞ্চস্থ করেছেন বলে জানিয়েছে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। আরও বলা হয়েছে, বাবা-মায়ের পরামর্শে মিথ্যা বলেছেন হুমায়রা।
সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী কর্তৃক উত্থাপিত অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কিত সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া এ প্রতিবেদন উত্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে সব তথ্য-উপাত্ত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরা হয়।
তদন্ত কমিটি জানায়, অভিযোগকারী হুমায়রা ইসলাম ছোঁয়া ও তার বাবা-মায়ের দেওয়া সাক্ষ্য বিবরণী পর্যালোচনায় স্পষ্ট হয় যে, শুরু থেকেই তার ওপর পরিবার ও সমাজের ডাক্তার হবার প্রত্যাশার চাপ ছিল।
তথ্য-উপাত্ত ঘিরে দেখা যায়, এর আগের বছর এই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাশ করেনি। এছাড়া এ বছর শিক্ষার্থী ও তার পাশের কেউই পাশ করেননি। এছাড়া ওএমআরের নম্বরও পরিবর্তন হয়নি।
অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া বলেন, সব সাক্ষ্য পর্যালোচনা ও প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয় যে, অভিযোগকারীর সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিগত ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও (টেস্ট স্কোর ২৭.২৫) (প.পৃ.নং- ৪৭) বাবা-মায়ের পরামর্শে মিথ্যা বলেন হুমায়রা। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আরও ভালো রেজাল্ট/স্কোর করে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির মিথ্যা প্রত্যয় ব্যক্ত করেন; কিন্তু বাস্তবে পরীক্ষায় ৫৭টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে না নিশ্চিত জেনে (পরবর্তীতে প্রকাশিত ফলাফলের টেস্ট স্কোর ৯.৫ দ্বারা প্রমাণিত) তার ব্যর্থতার দায় হল পরিদর্শকের ওপর চাপিয়ে কোনো বিশেষ অনুকম্পায় ভর্তির সুযোগ লাভের আশায় এ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক গল্প সাজিয়েছেন। তাছাড়া বর্তমান সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনায় বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় সবার আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর পরীক্ষা পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াসে তৃতীয় কোনো পক্ষের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছেন কিনা তার স্বরূপ উন্মোচনের সুপারিশ করা হলো।
পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানদের যাতে এ ধরনের প্রেশার না দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার দুই দিন পর একজন নারী পরীক্ষার্থী স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগে বলা হয়- নারী পরীক্ষার্থীর কেন্দ্র ছিল রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেখ কামাল ভবন, ৮ম তলা, ৮২৩ নম্বর কক্ষ)। পরীক্ষায় অসৎ উপায় অবলম্বনের সন্দেহে একজন পর্যবেক্ষক ওই শিক্ষার্থীসহ তিনজনের ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলেন। পরে পর্যবেক্ষক তার ভুল বুঝতে পারেন এবং নতুন ওএমআর শিট দেন। তবে তখন পরীক্ষা শেষ হতে মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি ছিল। বারবার অনুরোধ করার পরও পর্যবেক্ষক পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার সময় বাড়াননি।