ঘন কুয়াশা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢাকামুখী বহু ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে আগে থেকে শিডিউল পরিবর্তনের তথ্য জানাজানি হওয়ার কারণে যাত্রী ও দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কম হয়েছে। কিন্তু কুয়াশা কাটার পর সব ফ্লাইট একসঙ্গে অবতরণ ও উড্ডয়ন করায় বিমানের গ্রাউন্ডহ্যান্ডেলিং কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটেছে।
একসঙ্গে সব ফ্লাইটের হ্যান্ডেলিং দিতে গিয়ে বিমানকে বড় ধরনের বেগ পেতে হয়েছে। এ কারণে যথা সময়ে যাত্রীরা লাগেজ পাননি। বোর্ডিং ব্রিজ সংকটের কারণে অনেক ফ্লাইট অবতরণ করেও বে-এরিয়াতে লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সকাল থেকে ঢাকার বাইরে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের কার্যক্রম দীর্ঘসময় বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ কারণে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল করতে পারেনি এই বিমানবন্দরে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শাহজালালে জরুরি অবতরণ করেছে ভারতের মুম্বাই থেকে গুয়াহাটির উদ্দেশে যাত্রা করা ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট। ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যময়তা কম থাকায় এটি বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। শনিবার ভারতীয় সময় ভোর ৪টার দিকে ১৭৮ যাত্রী নিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে বিমানটি।
ফ্লাইটে থাকা মুম্বাই যুব কংগ্রেসের সাবেক প্রধান সুরজ সিং ঠাকুর এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি মুম্বাই থেকে গুয়াহাটিগামী একটি প্লেনে উঠেছিলাম। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইটটি গুয়াহাটিতে অবতরণ করতে পারেনি। পরবর্তীসময়ে এটি ঢাকায় অবতরণ করে। যাত্রীরা এখনো প্লেনের ভেতরেই আছেন। ৯ ঘণ্টা ধরে প্লেনের ভেতরে আটকে আছি।’
পরবর্তীতে ইন্ডিগো এয়ারলাইন এক বিবৃতিতে জানায় যে, ‘ফ্লাইট ৬ই ৫৩১৯ খারাপ আবহাওয়ার কারণে ডাইভার্ট করা হয়েছে এবং যাত্রীরা দীর্ঘসময় অবতরণ করা বিমানের ভেতরে ছিলেন। বিবৃতিতে যাত্রীদের অসুবিধার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলা হয়, ‘ফ্লাইটটিকে ঢাকা থেকে গুয়াহাটিতে ফিরিয়ে নিতে ক্রুদের বিকল্প একটি দলকে আনা হয়।’
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে যাত্রা করে উড়োজাহাজটির রাত ১১টা ১০ মিনিটে গুয়াহাটিতে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে ফ্লাইটটি তিন ঘণ্টা দেরিতে রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে মুম্বাই থেকে গুয়াহাটির উদ্দেশে রওনা করে। ১২ ঘণ্টা পর সেটি গন্তব্যে পৌঁছেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার করণে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ওই ফ্লাইটটি ঢাকার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে বিমানটি ঢাকা হয়ে আবার গুয়াহাটিতে ফেরত যায়।’
এদিকে ঘন কুয়াশা কেটে যাওয়ায় ছয় ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের চলাচল। শনিবার বেলা সাড়ে তিনটায় সেখানে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন করতে পারেনি। এতে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ারের সাতটি ফ্লাইটের ঢাকাগামী চার শতাধিক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে দুপুর ১২টায় বিমানবন্দরের দৃষ্টিসীমা ছিল মাত্র ২০০ মিটার এবং ২টা ৩০ মিনিটে ছিল ১ হাজার মিটার। এর ফলে বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট ওঠানামা করতে না পারায় শিডিউল বিপর্যয় হয়। দুর্ভোগে পড়েন চার শতাধিক ঢাকাগামী যাত্রী। তাদের মধ্যে শিশু এবং বৃদ্ধ যাত্রীও ছিলেন।
বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, মধ্যরাত থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল বিমানবন্দর এলাকা। বেলা তিনটার দিকে কুয়াশা কেটে যাওয়ায় ফ্লাইট চলাচলের প্রয়োজনীয় দৃষ্টিসীমা চলে এলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সহকারী ম্যানেজার মজিবর রহমান বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছিল। ছয় ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয়েছে ফ্লাইট চলাচল। ৩টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি ৩টি কোম্পানির ৪টি ফ্লাইট সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কুয়াশার কারণে শিডিউল বিপর্যয় হলেও কোনো ফ্লাইট বাতিল করা হয়নি বলে জানান তিনি।