Logo
Logo
×

অন্যান্য

মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হলে ফল টেকানো কঠিন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০৯ পিএম

মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হলে ফল টেকানো কঠিন

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সামনে আছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের প্রয়োজনীয়তা। এছাড়া বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। আগামীতে এটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে- তা নিয়ে সবার মধ্যে রয়েছে উৎকণ্ঠা। এ অবস্থায় আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে একটি সাজানো ও আত্মঘাতীমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। 

নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেশে অনেক কিছুই হবে। আর নির্বাচনে বহু মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না হলে এর ফলাফলও টিকিয়ে রাখা কঠিন। আর এসব বিষয়ে নিজেরা চুপ থাকলে আটলান্টিকের ওপার থেকে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে না। 

শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। ব্রিফিংয়ের বিষয় ছিল ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতা।’ 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এবং জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী প্রমুখ। তাদের মতে, প্রার্থীদের হলফনামা দেখলে মনে হয় রাজনীতি করলেই সম্পদ বাড়ে। আর এ হলফনামার তথ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনেক কিছুই করার আছে। কিন্তু তারা করছে না। 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামীতে যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেটি সাধারণ নির্বাচন। কেউ জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি ‘এটি একটি বিশেষ নির্বাচনি তৎপরতা।’ এ অবস্থায় আমরা চুপ থাকলে আটলান্টিকের ওপার থেকে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে না। আর আগেও ১৯৮৮ এবং ১৯৯৬ সালে এ ধরনের নির্বাচন এর আগে দেখেছি। নির্বাচনে বহু মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না হলে এর ফলাফলও টিকিয়ে রাখা কঠিন। আগামী দিনে অর্থনীতি যেভাবে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি আগামী দিনে কই গিয়ে দাঁড়াবে এই উৎকণ্ঠা সবার মাঝে। 

দেবপ্রিয় আরও বলেন, নির্বাচনি ইশতেহারে আগামী দিনে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার কোনো পর্যালোচনাই এবার হলো না। যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছেই পৌঁছাল না। এটা গণতন্ত্রের বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হলো। নির্বাচনকে ঘিরে এই ইশতেহারটা একটা রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্য দিয়ে এসেছে। ফলে সরকার, রাজনীতি ও দেশের মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জবাবদিহি না থাকলে বৈষম্য বাড়ে।

এই নির্বাচনকে ‘বিশেষ নির্বাচনি তৎপরতা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাকে সাধারণভাবে আমরা নির্বাচন বলছি। কিন্তু আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আমি বলি এটি একটি বিশেষ নির্বাচনি তৎপরতা। এর ফলে ইতিহাসের কাছে নাগরিকদের দায় বেড়ে গেল। আগামী দিনে আমাদের ভূমিকা আরও বাড়বে। বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা দেখছি যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় গাণিতিকভাবে সে পরিমাণ বেড়ে গেছে। যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় ততবার বেড়েছে। তার মানে হলো নির্বাচনে আসাই হলো আয় বাড়ানোর ভালো একটা রাস্তা। কিন্তু এভাবে তো আপনি পুরো রাষ্ট্রকে অধিকারহীন করে দিয়ে সংকীর্ণ একটি গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিকানা করে দিচ্ছেন। 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যে যতবার নির্বাচিত হয়েছে, গাণিতিক হারে তার সম্পদ তত বেড়েছে। অনেকেরই দেখা গেছে, সম্পদের পরিমাণ ৫০০ গুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু তারা কি সেই সম্পদ অনুপাতে আগের তুলনায় ৫০০ গুণ বেশি কর দিয়েছে? এনবিআর কী কখনো সেই খোঁজ নিয়েছে? দেবপ্রিয় বলেন, প্রার্থীদের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি হলফনামার মাধ্যমে। সেখানে যে সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়েছে এবং যে ট্যাক্সের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কখনো তুলনামূলক বিশ্লেষণ হয়? যদি তাই হয়, তাহলে অনেকেরই দেখেছি আয় ৫শ গুণ পর্যন্ত বাড়ল। তাহলে তিনি কি সেই হারে কর দিয়েছেন? আমি মনে করি আগামী দিনে এটা খুঁজে বের করা এনবিআরের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। 

সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, আইএমএফ বলছে, আমাদের কর জিডিপি বাড়াতে হবে। আমি মনে করি এই হলফনামা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ। এখন এনবিআর কী করে  সেটাই দেখার বিষয়। তারা কি আগামী দিনে এ বিষয়গুলো নিয়ে বলবেন?

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে একটি সাজানো ও আত্মঘাতীমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেশে অনেক কিছুই হবে। আমরা একটি আত্মঘাতীমূলক প্রতিযোগিতায় নামছি। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে ভোটার অংশগ্রহণটাই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই ভোট দিতে যাবে না। তবে ভোটাররা ভোট দিতে না গেলেও হয়তো ক্ষমতাসীনদের নজরদারির মধ্যে পড়বে। তবে সবকিছু আইনগতভাবেই হবে, এমনকি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চ্যালেঞ্জও করা যাবে না। সর্বোপরি এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দলের ক্ষমতাও পাকাপোক্ত হয়ে যাবে। 

তিনি বলেন, দেশে নির্বাচন হবে, কিছুদিন প্রতিবাদ হবে, এরপর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ হবে, বিদেশি অংশীজনরাও অনেকেই নাখোশ হবে। এমনকি কিছুদিন তারা প্রতিবাদ করবেন, এরপর আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। বিদেশি অংশীজনরাও ব্যবসায় চলে আসবে। নির্বাচনি হলফনামা প্রসঙ্গে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে হলফনামা এসেছে, তা হলো আমি আমার প্রার্থীর সম্পর্কে জানব। তার আয়-ব্যয় ও সম্পদ সম্পর্কে জানব এবং সে অনুযায়ী আমি আমার রায় দেব। এটা ছিল আমাদের প্রত্যাশার জায়গা। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা কিছুই করতে পারিনি। হলফনামা নিয়ে আমরা যেভাবে কথা বলছি, আগামী সংসদে হয়তো হলফনামা প্রথাটিই বাতিল হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বাস্তবে ক্ষমতা প্রয়োগের সক্ষমতা এবং সৎ সাহস থাকলে অনেক ব্যবস্থা নিতে পারত। এমনকি আইন অনুযায়ী তথ্য গোপনের কারণে অনেকেরই প্রার্থিতা বাতিল হতো। কারণ এবার শুধু তথ্য গোপনই হয়নি, দৃষ্টান্তও স্থাপন হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সে অর্থে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। 

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি দুদকের সুনির্দিষ্ট এখতিয়ার আছে। বিশেষ করে অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং আইনগতভাবে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আইনের চোখে সবাই সমান, এই দৃষ্টিতে দুদক কাজ করলে অনেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারত না। তবে নির্বাচন কমিশনের একটা বুলি আছে, অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদকের আইনেই কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারবে। দেশবাসীর চোখে অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো আসছে, কিন্তু তাদের চোখে পড়ছে না। 

তিনি আরও বলেন, আমরা সম্পদ বৃদ্ধির জন্য রাজনীতি করি, নাকি জনগণের জন্য রাজনীতি করি? তথ্য-প্রমাণ তো বলছে, নিজেদের স্বার্থেই রাজনীতি করি। তিনি আরও বলেন, আমরা সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হয়েছি। যারা সংখ্যাগুরু আছি, ধর্মীয় মাপকাঠিতে সংখ্যালঘুদের অধিকারে গুরুত্ব দিইনি। আদিবাসী আন্দোলন, সংখ্যালঘু আন্দোলনসহ এ জাতীয় আন্দোলনগুলোকে আমরা সবার জাতীয় আন্দোলনে রূপ দিতে পারিনি। আর এ কারণে আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে, এমনকি বর্তমানেও দিতে হচ্ছে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এখন সমান্তরাল বাস্তবতায় অবস্থান করছি। আমাদের অনেক অর্জন আছে, যেগুলোর জন্য আমরা নিজেদের গর্বিত। তবে এসব অর্জনের পেছনেও আমাদের কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। আমাদের সমাজে এখনো যথেষ্ট পরিমাণ বৈষম্য আছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায্যতায় সমস্যা আছে। সরকারি জরিপেও বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম