শিশুর অপুষ্টির অবসান ঘটাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১১ পিএম
দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি সব শিশুর ক্ষুধা ও অপুষ্টির অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে শিশু পুষ্টির জন্য আলাদা বাজেট প্রণয়ন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার প্রয়োজন। তাহলেই সব শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি ইংরেজি দৈনিকের কনফারেন্স হলে মিডিয়া ডায়ালগে এসব কথা বলেন অতিথিরা।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারপারসন মো. মাহাবুবুল হকের সভাপতিত্বে এবং ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন ও ডকুমেন্টেশন বিশেষজ্ঞ সজল কোরায়শীর সঞ্চালনায় মিডিয়া ডায়ালগের প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ও শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর সহ-সভাপতি অ্যারোমা দত্ত।
এতে স্বাগত বক্তব্য দেন রাইট টু গ্রো কনসোর্টিয়ামের কান্ট্রি স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি ও ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার ইমাম মাহমুদ রিয়াদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
সভার কার্যপত্র পাঠ করেন বিএসএএফ এর সমন্বয়কারী সাফিয়া সামি। প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন রাইট টু গ্রো এর কান্ট্রি টাম লিড ইকবাল আজাদ। রাইট টু গ্ৰো একটি এডভোকেসি কর্মসূচি, যা ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার কনসোর্টিয়াম এর মাধ্যমে ছয়টি দেশে পরিচালিত হচ্ছে।
রাইট টু গ্ৰো কনসোর্টিয়াম ও বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশের পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের অপুষ্টি নিরসনে শিশু পুষ্টির জন্য ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দের জন্য প্রচারণার অংশ হিসেবে এই মিডিয়া ডায়ালগের আয়োজন করা হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, একটি উন্নত মেধাসম্পন্ন স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ার প্রাথমিক শর্তই হলো শিশুদের জন্য সঠিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ব্যবস্থা করে দেওয়া। এসডিজি অর্জনে এবং জাতীয় লক্ষ্য পূরণে শিশুদের সঠিক পুষ্টির ব্যবস্থা করার বিশেষত সরকারের একটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক দায়িত্ব থাকলেও বিষয়টি বাস্তবায়নে অগ্রগতি সামান্য। বিএসএএফ এবং রাইট টু গ্রো কনসোর্টিয়াম সম্মিলিতভাবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শিশু অধিকার, বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের অপুষ্টি মোকাবিলায় বাজেট বরাদ্দের জন্য প্রচারাভিযানে কাজ করছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করাই এই প্রচারাভিযানের মূল উদ্দেশ্য।
তারা আরও বলেন, আমাদের সামনে রয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এসডিজি)। যেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের অপুষ্টি নিরসনে আমরা অঙ্গিকারবদ্ধ। আবার ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের ক্ষুধা ও অপুষ্টির অবসান ঘটাতে হবে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের কান্ডারি আগামী প্রজন্ম, আমাদের এই শিশুরা। আমরা যদি আগামী পাঁচ বছরে পাঁচ বছরের বয়সি শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারি, তবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে কেউ আমাদের রুখতে পারবে না। সব রাজনৈতিক দলগুলোর শিশুদের অধিকার সমুন্নত রাখা ও নিশ্চিত করার নৈতিক এবং আইনগত দায়িত্ব রয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজনৈতিক দলগুলো শিশুদেরকে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করতে পারে।
রাইট টু গ্ৰো কনসোর্টিয়াম এবং বিএসএএফ আশা করে সব রাজনৈতিক দল আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে তাদের ভবিষ্যৎ সব উন্নয়ন কার্যক্রমে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের অপুষ্টি নিরসনের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনি ইশতেহারে এ বিষয়ক দৃঢ় অঙ্গীকার জাতির সামনে তুলে ধরবে।
এ সময় রাইট টু গ্রো কনসোর্টিয়াম এবং বিএসএএফ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করে। তা হলো- স্থানীয় সরকার বিভাগের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট প্রণয়ন ছকে সুনির্দিষ্ট করে শিশু পুষ্টির বিষয়ে একটি আলাদা বাজেট খাত সংযুক্ত করা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কার্যক্রম, সমাজকল্যাণ কার্যক্রম, নারী ও শিশু বিষয়ক কার্যক্রম এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের অপরাপর সব প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত শিশু পুষ্টি কর্মসূচির প্রতিষ্ঠা করা। ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের অপুষ্টি নিরসনে এই খাতে জাতীয় বাজেটেও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। সরকারি বাজেট-ব্যয়ের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রমগুলোর ওপর প্রতিবেদন তৈরি করা এবং শিশু অপুষ্টি নিরসনের জন্য একটি কস্টিং মডেল তৈরি করা।
সব অংশীজন এবং সেক্টরকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালানো। সমন্বিত একটি পরিকল্পনা ও বাজেটের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করা। বরাদ্দকৃত বাজেটের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করা এবং অংশীজনদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান তারা।