নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা রোধে ৯১ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৫৮ পিএম
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা রোধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৯১ বিশিষ্ট নাগরিক।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুরাইয়া আক্তারের স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান অনুযায়ী ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা সচেষ্ট রয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনকে বানচালের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি মহল। এরই ধারবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে গণসমাবেশের নামে বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এমনকি প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও হাসপাতালে তারা তাণ্ডব চালায়। পরবর্তীতে বাসের ভেতরে ঘুমন্ত শ্রমিককে পুড়িয়ে মারা হয়। অধিকন্তু গত ২৯ অক্টোবর থেকে আজ (১৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিপুল সংখ্যক যানবাহন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজিরবিহীন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এমনকি খাদ্যপণ্য বহনকারী যানবাহন, কাঁচামাল বহনকারী ট্রাক ও পিকআপ তাদের এই তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা গাজীপুরের রেললাইনের ফিস প্লেট উপড়ে ফেলে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটায়, একজন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়াসহ অসংখ্য ট্রেনযাত্রী আহত হয়। সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা বিমানবন্দর ও তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিতে সন্ত্রাসীচক্র অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় চারজন নিরীহ যাত্রী নির্মমভাবে নিহত হয়। রাজনীতির নামে পরিচালিত দুর্বৃত্তদের এই ধরনের নৃশংস বর্বরতা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিরোধ করে দেশের চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা। একই লক্ষ্যে দেশের একটি চিহ্নিত মহল সংবিধানের একটি নির্ধারিত ধারার অপব্যাখ্যা দিয়ে নির্বাচনের সময়সূচি পরিবর্তন করে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত। ইতোমধ্যে নির্বাচনি কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। চূড়ান্তভাবে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের সংখ্যা ১৮৯৬ জন। প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উৎসমুখর পরিবেশ।
এতে বলা হয়, সব বিভ্রান্তি ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশের মানুষ এখন মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্ধুব্ধ হয়ে উন্নয়নের ধারা অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কিন্তু একটি চিহ্নিত কুচক্রী মহল দেশের জনগণ ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। রাজনীতির আড়ালে সক্রিয় উন্নয়ন ও প্রগতিবিরোধী এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশের সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ দেশের সব নাগরিককে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সফলভাবে সম্পন্ন করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ৯১ নাগরিকের মধ্যে অন্যতম হলেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ, বেসরকারিকরণ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এটি আহমেদুল হক চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান প্রমুখ।