প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ
ঘুসের ফেরত দেওয়া টাকা হাতে পাননি ভুক্তভোগী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য নেওয়া ঘুসের টাকা এখনো ফেরত পাননি বলে জানিয়েছেন ঘটনার ভুক্তভোগী আবু সুফিয়ান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে ফেরত দেওয়া সাড়ে নয় লাখ টাকা দু-একদিনের মধ্যে হাতে পাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে টাকাগুলো কোনো উপায়ে ফেরত দেওয়া হবে এ বিষয়ে ডিবির পক্ষ থেকে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আইনজীবীরা বলছেন, ঘুস লেনদেন ও টাকা ফেরতের পুরো প্রক্রিয়াটিই অবৈধ। এভাবে টাকা দেওয়ার কোনো আইনগত বৈধতা নেই। বরং এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেফতার করা উচিত।
ভুক্তভোগী আবু সুফিয়ান সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘সাতজনের নিয়োগের জন্য দেওয়া সাড়ে নয় লাখ টাকা প্রতিমন্ত্রী তার এক প্রতিনিধির মাধ্যমে ফেরত দিয়েছেন। রোববার সকালে টাকাগুলো ডিবি অফিসে বুঝে নিয়েছি। সেগুলো এখন ডিবির এডিসি ফজলে এলাহীর (ধানমন্ডি জোনাল টিম-গোয়েন্দা রমনা বিভাগ) কাছে আছে। মূল পাওনাদারদের সঙ্গে কথা বলে ডিবি তাদের কাছে টাকাগুলো দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা টাকাগুলো দিয়েছে তারা যেন সেগুলো সঠিকভাবে বুঝে পায় এজন্যই টাকাগুলো রাখা হয়েছে। দুদিন পরে ডিবি যোগাযোগ করতে বলেছে। আমি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে কোনো শঙ্কায় নেই।’
এ বিষয়ে জানতে সোমবার বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও ডিবির ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কথা বলেননি ডিবির রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ফজলে এলাহীও।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত এমন একটি বিষয়ে কথা বলতে হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াটিই অবৈধ। ঘুস লেনদেনের টাকা ফেরত দেওয়া তো অনেক পরের বিষয়, এই প্রক্রিয়াটির কথা জানার পর আগে এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা উচিত ছিল। ঘুসদাতা ও গ্রহীতা প্রত্যেকে আইন অনুযায়ী অপরাধী। যারা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত, সহযোগী হিসেবে তারাও অপরাধী। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। আইনগতভাবে পুলিশের মধ্যস্থতায় এভাবে টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
রোববার রাতে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন যুগান্তরের কাছে দাবি করেন, টাকাগুলো তিনি নেননি। তার আশপাশের লোকজন নিয়েছিল। পরে তিনি যখনই জানতে পারেন তখন এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। তারাই বোধহয় একটা ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, যতটুকু শুনেছি টাকা দিয়েছিল খুবই অল্প। তবে অভিযোগে লিখেছে ৯৪-৯৫ লাখ টাকা। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমি কোনো নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত নই। তবে অনেক সময় আমার অগোচরে অনেকে টাকা নিতে পারেন। অনেক সময় তারা এও বলেন, নিয়োগের বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। অথচ এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এছাড়া ভুক্তভোগীকে মারধরের ঘটনাও সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।