স্বাস্থ্য খাতের যন্ত্রপাতিও জলবায়ুবান্ধব হওয়া উচিত: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৮ পিএম
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেক্টরে আমরা নানা রকম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি, এইসব যন্ত্রপাতিও জলবায়ুবান্ধব হওয়া উচিত। তা না হলে চিকিৎসা সেবায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।’
মঙ্গলবার দুপুরে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন-২০২৩ (কপ ২৮) এর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এটিএসিএইচ কর্তৃক আয়োজিত ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ: সাপ্লাই চেইন’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।
৩০ নভেম্বর শুরু হওয়া জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ (কপ২৮) চলবে ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিগত দশকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন এবং জলবায়ুবান্ধব যন্ত্রপাতি কেনা, সাপ্লাই এবং ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন। জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিনির্মাণে বিজ্ঞানসম্মত এবং যেসব যন্ত্রপাতি জলবায়ুর ক্ষতি করে না সেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং এটিএসিএইচকে জলবায়ুবান্ধব যন্ত্রপাতি সাপ্লাই এবং হাসপাতাল বিনির্মাণে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার বিকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘স্যালিনিটি কিউসড বাই ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ইটস ইম্পেক্ট অন এনসিডিএস অ্যান্ড এসআরএইচআর’ শীর্ষক সাইড ইভেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য প্রতিনিধি দলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমও ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মামুনুর রশিদ প্রমুখ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি তার উপস্থাপনায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তন বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা এবং এর প্রভাবে এসব এলাকায় অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া এর প্রভাবে গর্ভবতী মায়েদের নানা রকম সমস্যা হয়, যার কারণে উপকূলীয় এলাকায় মাতৃমৃত্যু বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।
এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পরিবর্তন বিশেষ করে লবণাক্ত বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এর ফলে নানা ধরনের রোগ বৃদ্ধি হওয়ার কথা বর্ণনা করেন তিনি। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগ এবং মহিলা ও নারীদের নানা স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে তার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ এবং পরবর্তী পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন তিনি। মন্ত্রী উন্নয়ন সহযোগীদের জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিনির্মাণে আর্থিক সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। উপকূলীয় এলাকায় অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে এবং এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশের সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ডেনিয়েল নোভাক, অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট হিসেবে ছিলেন আইপাস (নেপাল) এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর মিস খুশবু পাওডেল, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকল্পের ওয়াশ আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. হুসাইন রশিদ।
প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলোর প্রশংসা করে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে আরও সহযোগিতা এবং বিনিয়োগের আশ্বাস প্রদান করে তারা।