ক্রমাগত সমালোচনা বাংলাদেশে বৈশ্বিক শক্তির প্রভাব বাড়াতে পারে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম
বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য অংশীদারত্ব গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য থমাস জেডিহস্কি বলেছেন, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিজয় হবে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি কক্ষে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। জেডিহস্কি এবং ‘স্টাডি সার্কেল লন্ডন’ যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।
এতে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রমাগত সমালোচনার কারণে ওই অঞ্চলে অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তির প্রভাব বাড়ার দরজা খুলে দিতে পারে।’
বক্তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসাবে বাংলাদেশের ভূমিকা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অংশীদার হিসাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ১৯.৫ ভাগ হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে।’
বক্তারা বাংলাদেশের অগ্রগতির চাবিকাঠি হিসাবে পোশাক শিল্পের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের জিডিপি ২০০০ সালে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২১ সালে ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। মাত্র দুই বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় আটগুণ।’
সেমিনারে থমাস জেডিহস্কি বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ থেকে পূর্ণাঙ্গ শিল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। উলেখযোগ্য স্থিতিশীলতা ও দ্রুত উন্নয়ন বাংলাদেশকে ‘দক্ষিণ এশীয় বাঘ’ হিসাবে তুলনা করা হচ্ছে। অবশ্যই বাংলাদেশের এ অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারকে ধন্যবাদ দিতে হবে।”
জেডিহস্কি বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য অংশীদারত্ব গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ইইউ অনুভব করেছে যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে সাহায্য করার সময় এসেছে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন, স্টাডি সার্কেল, লন্ডনের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ও মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী ড. রায়হান রশিদ। উপস্থিত ছিলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য মেরগুলহো এসঅ্যান্ডডির উপদেষ্টা সারাহ বুগেজা, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য সারানজোবা রেনিউর উপদেষ্টা ভেরোনিকা হোরুউডোভা, ইপি বাহ্যিক বিভাগের কর্মকর্তা লোটে পিটার্স, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য স্টেফেনেকের সেক্রেটারি ডায়ানা চেজোভা, সাবেক সদস্য পাওলো কাসাকা, ইন্টা সচিবালয়ের কর্মকর্তা পালোমা সার্ভিন, ফেলিক্স নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিভাগের উপদেষ্টা সারা মার্কেস, ইপি অর্থনৈতিক পলিসি বিভাগের কর্মকর্তা জর্ডান ডি বোনো, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য সাবরিনা নেজেম প্রমুখ।
সেমিনারে সৈয়দ মোজাম্মেল আলী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ঘিরে জাল খবর ছড়ানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, মূলত অধিকাংশ খবরই সঠিক তদন্ত ও সূত্র ছাড়াই প্রচার করা হচ্ছে। কখনই তথ্যের বৈধতা ক্রস চেক না করে এর ওপর ভিত্তি করে সমালোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু এটি এমন নয় যে, বাংলাদেশই এ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করছে। আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন। তবে সরকার যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পাওয়া খবরগুলো ক্রস চেক করার অনুরোধ জানান।
ড. রায়হান রশীদ বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে তার মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার আন্দোলনই বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। তাই স্বাধীনতার পর সাংবিধানিকভাবে জনগণের অধিকার রক্ষায় গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ। এরপর মানবাধিকার সংক্রান্ত বহুসংখ্যক আন্তর্জাতিক কনভেনশনের পক্ষ হয়ে ওঠে দেশটি। ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য বাংলাদেশ তার জায়গা উন্মুক্ত করেছে, যা মানবাধিকার সুরক্ষিত করার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।’
ড. মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকারের প্রশ্নটা অনেক আগেই উত্থাপিত হওয়া উচিত ছিল যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর ২১ বছর ধরে খুনিরা মুক্ত ছিল এবং কোনো প্রকার বিচার হয়নি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভুয়া খবর প্রচার করে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে।