Logo
Logo
×

অন্যান্য

মাত্র ২১ মিনিটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে প্রধানমন্ত্রী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২৭ পিএম

মাত্র ২১ মিনিটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে প্রধানমন্ত্রী

রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও দ্রুততর করার লক্ষ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সার্ভিস উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে সবুজ পতাকা নেড়ে প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও-মতিঝিল মেট্রো ট্রেনের যাত্রা শুরু করেন। ট্রেনে তিনি মতিঝিল মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যান। মাত্র ২১ মিনিটে তিনি ট্রেনে মতিঝিলে পৌঁছে যান। 

রোববার থেকে মেট্রোরেল বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করবে। সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করবে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সার্ভিস দেওয়া হবে। 

দুপুর আড়াইটায় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বহুল কাক্সিক্ষত মেট্রোরেল পরিষেবার দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে মেট্রোরেল রাজধানীর উত্তরাকে মতিঝিলের সঙ্গে সংযুক্ত করল। আগারগাঁও স্টেশনে সবুজ পতাকা নেড়ে মতিঝিল স্টেশন অভিমুখে মেট্রোরেল চলাচলের উদ্বোধন করেন তিনি। পরে তিনি ফিতা কেটে ট্রেনে উঠে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মতিঝিলের উদ্দেশে যাত্রা করেন। 

উদ্বোধনী যাত্রায় নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে সবাই সহজে যাতায়াত করতে পারে; কাজের সময় বাঁচাতে পারে; যানজট থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে। উত্তরা ও মতিঝিলের মধ্যে মেট্রোরেল চলাচলের সূচনা হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। তিনি বলেন, আমরা এটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত প্রসারিত করব। 

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগারগাঁও স্টেশনে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। ট্রেনে চড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও স্টেশনে ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন। মতিঝিল স্টেশনে তিনি এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করেন- যা হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার লাইন হবে। প্রকল্প শেষ হবে ২০২৮ সালে। এর আগে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। 

মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং প্রতিদিন পাঁচ লাখ যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে এবং প্রতি চার মিনিটে প্রতিটি স্টেশনে একটি ট্রেন আসবে। শনিবার দুপুর থেকে মেট্রোরেল ঘিরে দলীয় ও সাধারণ মানুষের উৎসুক ছিল চোখে পড়ার মতো। মেট্রোরেলের নিচে-দু’পাশে সাধারণ মানুষ অপেক্ষা করেন। এ সময় মেট্রো রুটের ওপর দিয়ে একাধিক হেলিকপ্টার টহল দেয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে আগারগাঁও-মতিঝিল মেট্রোরেল ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অবস্থান নেয়। বিভিন্ন স্থানে ভ্যানের ওপর নৌকা তৈরি করে মাইকে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও তাকে নিয়ে রচিত গান। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে জনতা স্লোগান দেয়। এ উপলক্ষ্যে কোথাও কোথায় ব্যানার, ফেস্টুুন টাঙানো হয়। 

মধ্যবয়সি চানাচুর বিক্রেতা জালাল মিয়া বলেন, মতিঝিল এলাকায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি। মেট্রোরেল দেখে খুব ভালো লেগেছে। যদিও ঘণ্টা দুয়েক চানাচুর বিক্রি করতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যখন ট্রেনটি সচিবালয় স্টেশন পার হয়, তখন স্টেশন এলাকায় অপেক্ষমাণ শত শত সাধারণ মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন। দলীয় লোকজন স্লোগান দেয়। আমিও গলা মেলাচ্ছিলাম। সেগুনবাগিচার বর্ষীয়ান নাগরিক আমেরিকা প্রবাসী আতিকুল ইসলাম খান দুই মাস ধরে দেশে আছেন। তিনি জানান, তার স্মৃতিতে ফিরে আসে আমেরিকার মেট্রোট্রেনগুলোর দৃশ্য। বাংলাদেশে এমন দৃশ্য দেখে তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। যেভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে উন্নত দেশও অবাক হচ্ছে। আমরা চাই দেশে উন্নয়ন হোক। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সুস্থ থাকুক। 

জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক বাবুল খন্দকার বলেন, দীর্ঘদিন ইতালিতে ছিলাম। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে তিনি গর্ববোধ করছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক, তিনি এমনটা চান। চানখাঁরপুল এলাকা থেকে পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে দোয়েল চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন আলী আকবর শেখ। আওয়ামী লীগের সমর্থক আকবরের স্ত্রী আয়শা করিম জানান, তিনি রংপুরের মানুষ। মেট্রোরেল দেখতে দুই সন্তান ও ননদকে নিয়ে এসেছেন। হাইকোর্ট এলাকায় ভ্যানের মধ্যে নৌকা সাজিয়ে গান করছিলেন সেলিম মিয়া। তিনি জানান, দুদিন ধরে তিনিসহ আরও বেশ কয়েকজন নৌকা সাজিয়ে আনন্দের বাজনা বাজাচ্ছেন। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভ্যানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও তাকে নিয়ে করা গান বাজাচ্ছেন। 

আগারগাঁও, শাহবাগ, সচিবালয় ও মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনে প্রবেশ ও বাইরের চলন্ত সিঁড়ি, সিঁড়ি ও লিফট রাখা হয়েছে। তিন তলাবিশিষ্ট স্টেশনের সবচেয়ে ওপরে মেট্রোরেল লাইন দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাটাসহ প্রশাসনিক অফিস কক্ষ। তৃতীয় তলার ছাদের বিশেষ একটি অংশ উন্মুক্ত (গ্লাস দিয়ে ঢাকা) রাখা হয়েছে। প্ল্যাটফর্মটিতে আধুনিক বৈদ্যুতিক বাতিসহ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যাত্রীদের জন্য দিকনির্দেশনা বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা।  

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক জানান, প্রাথমিকভাবে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে তিনটি স্টেশন ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিলে মেট্রোরেল চার ঘণ্টা চলবে। বাকি স্টেশনগুলো পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হবে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে সাতটি স্টেশন রয়েছে। সেগুলো হলো বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেস ক্লাব ও মতিঝিল। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম