বাইডেনের কথিত উপদেষ্টার বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন হাসান সারওয়ার্দী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:২৩ পিএম
গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফীর (মিয়ান আরেফি) বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন এ ঘটনার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ ওঠা লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।
অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা এখন গোয়েন্দা সংস্থার দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া মিয়ান আরেফি কোনো গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা নির্দেশিত ছিলেন।’
মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘ওই ব্যক্তি (মিয়ান আরেফি) কোনো গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা তাড়িত হয়ে বা নির্দেশিত হয়ে এমনটি করেছেন বা করে থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়। এখন ঐক্যের সময়। জাতিকে ধৈর্যের সঙ্গে এ ঘটনা মোকাবিলা করতে হবে। কোনো মিয়ান আরেফী কিংবা কারো অপব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। গণতন্ত্রের জন্য ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য।’
আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসাবাদে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন বাইডেনের কথিত সেই উপদেষ্টা
ওই দিনের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর গণতন্ত্রের জন্য জনগণের আন্দোলন দেখার জন্য আমি নয়াপল্টনে যাই। বেলা ২টা ৩০ মিনিটের পর গণতন্ত্রকামী মানুষ পুলিশের গুলি, টিয়ারগ্যাস ও নির্যাতনের শিকার হয়। অনেক লোক আহত হয়। শুনেছি পুলিশও নিহত হয়েছে। আমি দুর্বিষহ ঘটনার পরিস্থিতি দেখার মনোস্থির করি। এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। বেলা ৩টার দিকে। কথিত মিয়ান আরেফি সেপ্টেম্বরে বিদেশে অবস্থানরত আমার বন্ধুদের কাছ থেকে আমার নম্বর সংগ্রহ করে ২৭ তারিখে ঢাকায় আসার কথা জানান। ২৮ অক্টোবর তিনি আমাকে জানান তিনি আহতদের দেখতে নয়াপল্টনে যেতে চান। আমি যেন তাকে সহায়তা করি।’
পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ান আরেফি বিএনপি অফিসে ইশরাকের (বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন) সঙ্গে পরিচিত হয়ে আহতদের দেখার পরে হলরুমে বসেন। সেখানে আমাকেও কিছু লোক বসতে বলেন। সেখানে তিনি গণমাধ্যমের কাছে সমবেদনা জানিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন। হঠাৎ ব্যাগ থেকে কিছু লেখা কাগজ তিনি (মিয়ান আরেফি) বের করেন। এরপর মার্কিন সরকারের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। এমনকি মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞাসহ স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ে কথা বলা শুরু করেন। মার্কিন সরকার ও আন্দোলনরত বাংলাদেশিদের জন্য যেটি অত্যন্ত বিব্রতকর। এজন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি দ্রুত তার বক্তব্য শেষ করেন এবং আমি সেখান থেকে বের হয়ে আসি।’
তার পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘আসার পথে নিচতলায় রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে তার (মিয়ান আরেফি) কথা হয় এবং প্রায় ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন। এরপর আমি আমার বাসায় চলে আসি। ওই রাতে তিনি (মিয়ান আরেফি) আমাকে ফোন করলে আমি দ্রুত বিষয়গুলো মার্কিন দূতাবাসে জানিয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার অনুরোধ করি। তার লিখা একটি চিঠি মার্কিন সরকারের কাছে ঘটনাস্থল থেকে তিনি (মিয়ান আরেফি) আমাদের পাঠান। কিন্তু ওই রাত থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত তিনি তার ফোন বন্ধ রাখেন। সন্ধ্যায় অনলাইন পত্রিকায় জানতে পারি তিনি বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন। পরবর্তীতে ডিবি অফিসে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা ও নিজেকে বাঁচানোর অপপ্রয়াস। তাকে কেউ জোর করে বক্তব্য দিতে বলেনি। স্বেচ্ছায় নিজের পরিচয় ও বক্তব্য দিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ ও বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সংঘর্ষের পর শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক রহস্যময় ব্যক্তিকে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, গোলাপি রঙের শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি ইংরেজি ভাষায় কথা বলছেন। নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা দাবি করা ওই ব্যক্তি সেই ভিডিও নিয়ে খবর প্রকাশ করলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
রোববার দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন বলে জানান অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবির গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, আটকের পর মিয়ান আরেফিকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরেফী জানান, বাসা থেকে কয়েকটি বিষয় শিখিয়ে এনে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে কথা বলানো হয়েছে। তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে যাওয়ার পেছনে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
মিয়ান আরেফি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে থাকেন। তিনি একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায়। তিনি মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশে আসেন।