Logo
Logo
×

অন্যান্য

‘দেশ এখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রাক্কালে’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪৫ পিএম

‘দেশ এখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রাক্কালে’

গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রাক্কালে দেশ। নাগরিক হিসাবে প্রত্যাশা- এবার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। 

বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংগঠনের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।

ব্রিফিংয়ের বিষয় ছিল : ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা : কৃষি, কর্মসংস্থান, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও সরকারি পরিষেবা এবং পরিচ্ছন্ন ও সাশ্রয়ী জ্বালানি।’ 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য মো. আসিফ ইব্রাহিম এবং সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অপরিকল্পিত কর্মসূচির ফলে নগরায়ণ বস্তিতে রূপ নিচ্ছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় শঙ্কার কারণ। অন্যদিকে দেশের কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বাড়লেও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে অবদান কমছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক উন্নয়নের প্রাক্কালে আছে। ফলে নাগরিক হিসাবে আমরা প্রত্যাশা করছি, এবার বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এই ভরসা থেকেই আমরা পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর উন্নয়নে কিছু সুপারিশ তৈরি করে রাখছি। আশা করি রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির সময় এসব সুপারিশ বিবেচনায় নেবেন। তিনি বলেন, এসব সুপারিশ আমরা সব দলের রাজনীতিবিদের কাছে নিয়ে যাব। ফলে নির্বাচনসংক্রান্ত যে বিভ্রান্তি, সংশয় এবং উদ্বিগ্নতা রয়েছে, তা কেটে যাবে। 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, তা গড় আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় অন্যতম। কিন্তু এই গড়ের ভেতরে অনেক বৈষম্য রয়েছে। পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর যে ধরনের উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে আগামী দিনের উন্নয়ন বাস্তবতার জন্য ১১টি বিষয়কে আমরা চিহ্নিত করেছি। 

তিনি বলেন, প্রায়ই বলা হয় বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় আছে। কিন্তু এখান থেকে উচ্চমধ্যম আয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মাঝে আরেকটি বিষয় রয়েছে, যা হলো মধ্যম আয়ের ফাঁদ। দেশকে এই ফাঁদের হাত থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই ৪টি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে- কৃষি, শোভন কর্মসংস্থান, জ্বালানি এবং নগরায়ণ। তিনি আরও বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনয়ন জরুরি। এই বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে উৎপাদনকে গুরুত্ব দিতে হবে।
 
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি না হওয়ার অভিঘাতও আমরা পাচ্ছি। ঢাকা শহর চারদিকে বিস্তৃত হচ্ছে। অনেকে বলেন, এখন আর ঢাকায় যেতে হয় না। ঢাকা আমাদের কাছে চলে আসছে। তিনি বলেন, রাজধানী যখন ধীরগতির, দূষণীয় শহর হয়, তখন সবাই এর মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত এবং আক্রান্ত হয়। তার মতে, শহরের আরও শহর রয়েছে। আমাদের বস্তিগুলোর যে অবস্থা সেখানে সরকারি সুবিধাসহ সবকিছুতেই এখানকার মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। নারী, শারীরিকভাবে পিছিয়ে পড়া এবং যুব সমাজের যেসব সেবা পাওয়ার কথা, আসলেই তারা তা পাচ্ছে না। ড. মোস্তাফিজ বলেন, সারা দেশে নগরায়ণ হচ্ছে। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হলো সেখানে অনেক কিছুই অপরিপূর্ণ। এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি আয়ের মানুষ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও কম আয়ের মানুষরা সমস্যায় পড়ছে। ফলে নগরায়ণ বস্তিতে রূপ নিচ্ছে।

সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। এই সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়তে পারে। 

তিনি বলেন, আমরা জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ফলে বিশ্ববাজারে আমাদের জন্য বড় চাপের বিষয়। আরও বেশি শঙ্কার কারণ হলো আমাদের অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি না, মুদ্রার বিনিময় হার কী অবস্থায় আছে। এছাড়া রাজস্ব আয় সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। তার মতে, যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকে, তখন সমন্বয় করা হয় না। কিন্তু বাড়লে সমন্বয় করা হয়। এতে মানুষ চাপে পড়ে।

নুরুল আমিন বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে দক্ষ জনবল জরুরি। কারণ দক্ষ জনবলের অভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদেশিদের নিয়োগ দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিবছর ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে কৃষি নিয়ে আলোচনার সময় ভারতের একটি গবেষণার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে বলা হয়, সম্প্রতি ভারতের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, যথাযথ পরিকল্পনা ও কৃষির আধুনিকায়ন করা হলে ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কৃষকের আয় ৮৫ শতাংশ বাড়বে। সে ধরনের সম্ভাবনা বাংলাদেশেও করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের আধুনিকায়নের ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি কৃষকের সঙ্গে সরাসরি বাজারের সংযোগ ঘটাতে হবে। তারা বলেন, বর্তমানে দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৫ শতাংশ কৃষিতে কাজ করে। কিন্তু জিপিডিতে কৃষির অবদান মাত্র ১২ শতাংশ। এখান থেকে উত্তরণ জরুরি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম