বাড়ি গাড়ি ফ্ল্যাটের মালিক জেল সুপারের গৃহিণী স্ত্রী, দুদকের মামলা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৫১ পিএম
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদের স্ত্রী খন্দকার নুরুন নাহার লোটাস একজন গৃহিণী। তার নিজের উপার্জনের কোনো উৎস নেই। কিন্তু খোদ রাজধানী ঢাকায় ৭ তলা বাড়ি, বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন তিনি। হাঁকিয়ে বেড়ান হোন্ডা ভ্যাজেল মডেলের নজরকাড়া গাড়ি। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকার।
স্বামীর অবৈধ পথে উপার্জিত টাকায় নিজের নামে এসব সম্পদ গড়ে এবার ফাঁসলেন মামলায়। কারা কর্মকর্তা শাহজাহান ও তার স্ত্রী লোটাসের নামে বুধবার মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থার সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লায় মামলাটি দায়ের করেন। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার থাকাকালে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার হিসাবে কর্মরত। দুদক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, অনুসন্ধানকালে আসামি শাহজাহানের যেসব অবৈধ সম্পদ মিলেছে তার মধ্যে উলেখযোগ্য হচ্ছে- ঢাকার শাহজাহানপুরে এসইএল কাজী নিবাস ভবনের অ্যাপার্টমেন্ট (স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ নামে), টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় এলাচিপুর গ্রামে একতলা বাড়ি, টাঙ্গাইল সদরে ১০ শতক জমি ও ব্যাংকে জমা বিপুল অর্থ। আর স্ত্রী খন্দকার নুরুন নাহার লোটাসের নামে আছে শাহজাহানপুরে কোটি টাকা দামের অ্যাপার্টমেন্টের অর্ধেকাংশ, বাড্ডায় ৩ কাঠা জমিতে নির্মাণাধীন সাততলা ভবন, টাঙ্গাইল সদরে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ জমিতে চারতলা ভবন, বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৩ লাখ টাকার এফডিআর ও হোন্ডা ভ্যাজেল মডেলের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ ১৭-৪১৮৮)।
অনুসন্ধানে দুদক জানতে পেরেছে, ঢাকার শাহজাহানপুরের মালিবাগ মৌজায় এসইএল কাজী নিবাস ভবনের অ্যাপার্টমেন্ট কেনার বিপরীতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে তারা ১ কোটি ১২ লাখ ৪২ হাজার ৭৯০ টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে তারা এই অ্যাপার্টমেন্টের দলিল মূল্য দেখিয়েছেন ৪৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। শাহজাহানের স্ত্রীর নামে বিপুল সম্পদ অর্জিত দেখানো হলেও তিনি গৃহিণী। তার নিজের কোনো উপার্জন নেই। তিনি একজন গৃহিণী হলেও অসৎ উদ্দেশ্যে আয়কর নথিতে তাকে ব্যবসায়ী হিসাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি ব্যবসাসংক্রান্ত কোনো কাগজ, হিসাবের খাতাপত্র, মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেননি। মূলত শাহজাহানের অবৈধভাবে উপার্জিত বিপুল টাকা বৈধ করতে স্ত্রীর নামে সম্পদ কেনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি শাহজাহান আহমেদ ৭২ লাখ ৯ হাজার ২২২ টাকা এবং তার স্ত্রী লোটাস ১ কোটি ৪৮ লাখ ৯৮ হাজার ৭৩ টাকার (মোট ২ কোটি ২১ লাখ ৭ হাজার ২৯৫ টাকা) জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্জন করেছেন। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহযোগিতায় উল্লিখিত জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।