সিন্ডিকেট মানুষের টাকা শুষে নিয়েছে, আমরা অসহায় হয়ে দেখেছি: মন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৯ পিএম
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘সিন্ডিকেট করে আলুর কোল্ড স্টোরেজগুলো (হিমাগার) সাধারণ মানুষের টাকা শুষে নিয়েছে। আমরা অসহায় হয়ে দেখেছি, কিচ্ছু করতে পারিনি। আমরা বেশি চাপ দিলে বাজার থেকে সব আলু তুলে নিয়ে যায়।’
বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বৃহত্তর ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলে তেল ফসল ও ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আলুতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আলুতে আমাদের ঘাটতি নেই। তারপরও সিন্ডিকেটের কারণে আমাদের মাঝেমধ্যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষক পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পান না। আমরা পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি। ফরিদপুরে ৫০-৬০টির মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা খুব কার্যকরী। ভবিষ্যতে আমরা এ প্রযুক্তি আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে চাই। সঠিকভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে ভবিষ্যতে আর পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কম সময়ে অধিক ফলন ও একই জমি থেকে বার বার ফসল ফলানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, দেশে ক্রমশ কৃষি জমি কমছে, মানুষ বাড়ছে। এ অবস্থায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়া খুবই কঠিন।
তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা স্বল্পজীবনকালীন উন্নত জাতের ধানের ও অন্যান্য অনেক ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে, যা চাষের মাধ্যমে বছরে ১টি অতিরিক্ত ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। একইসঙ্গে ফলনও অনেক বেশি হচ্ছে। এই জাতগুলোকে কৃষকের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পরিকল্পনার প্রথম বছরেই ৩ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত সরিষা উৎপাদিত হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন না কমিয়েই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে তেল আমদানি অর্ধেকে কমিয়ে আনা যাবে। এতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য গত বছর পরীক্ষামূলক কিছু দেশীয় মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে ৪-৫ মাস ধরে পেঁয়াজ ভালো অবস্থায় আছে। এটি একটি কার্যকর সংরক্ষণ পদ্ধতি হবে। এবছর সারা দেশে এই সংরক্ষণ মডেল ঘর নির্মাণ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে মাঠে পেঁয়াজের উচ্চফলনশীল জাত দেওয়া হয়েছে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, আর মডেল ঘরে সংরক্ষণ করতে পারলে পেঁয়াজের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না, বরং বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।
কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এর আগে সকালে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, আমরা তখনো কোনো ভয় পাইনি। কাজেই, সব ষড়যন্ত্র, নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সমর্থনে আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন।