বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা সর্বত্র
শিশুখাদ্যের দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে বাবা-মা
ইয়াসিন রহমান
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১০:২০ পিএম
ফাইল ছবি
দেশে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ধাক্কা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বাজারে চাল থেকে শুরু করে ডাল, আটা-ময়দা, মাছ-মাংস, সবজিসহ সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের বাড়তি দামে ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠছে। সঙ্গে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম বাড়ায় সব শ্রেণির ক্রেতা নাজেহাল হচ্ছেন।
পাশাপাশি বছরের ব্যবধানে ৩৫০-৪০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট ও কৌটাজাত শিশুখাদ্যের মূল্য সর্বোচ্চ ২১০ টাকা বেড়েছে। কেজিপ্রতি গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। এতে সন্তানের খাবারের চাহিদা মেটাতে বাবা-মা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকেই এসব পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে আদরের সন্তানের পুষ্টিতে টান পড়ছে। বুধবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
আরও জানা যায়, দেশে যেসব শিশুখাদ্য বিক্রি হচ্ছে, তা আমদানি করে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই করোনাকালীন আমদানি বন্ধ হওয়ায় দাম বাড়তে শুরু করে। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আমদানি ব্যাহত হয়। সেসময় মূল্য ফের কিছুটা বাড়ানো হয়। এছাড়া ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ও পরিবহণ খরচ বাড়ায় শিশুখাদ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। তবে যে হারে মূল্যবৃদ্ধির কথা, কারসাজিতে এরও বেশি দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে সব শ্রেণির ক্রেতার ভোগান্তি বেড়েছে।
বিক্রেতারা জানান, ৩৫০ গ্রাম লেট্রোজেন-১ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা। ল্যাকটোডেন-২, ৩ বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ টাকা, যা গত বছর শুরুর দিকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি এনএএন-২ ও ৩ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা, যা আগে বিক্রি হয়েছে ৬৯০ ও ৬৬৫ টাকা। ৪০০ গ্রাম আইটেমভেদে সেরেলাক-১ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪১০ টাকা, যা গত বছর ৩২০-৩৫০ টাকা ছিল। সেরেলাক-২ বিক্রি হচ্ছে ৪২৫ টাকা, যা আগে ৩৯০ টাকা ছিল। সেরেলাক-৩ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা, যা গত বছর ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ৩৫০ গ্রাম ওজনের বায়োমিল-১, ২ ও ৩ বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ টাকা, আগে এই পণ্য কিনতে ক্রেতার ৪৭০ টাকা খরচ হতো। ৪০০ গ্রাম ওজনের প্রাইমা-১ ও ২ বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকা, আগে ৬২০ টাকা ছিল। বেবি কেয়ার-১, ২ ও ৩ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা, যা গত বছর ৬৩০ টাকা ছিল। ৩৫০ গ্রাম ওজনের নিডো ওয়ান প্লাস বিক্রি হচ্ছে ৪৯৫ টাকা, গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩৭০ টাকা।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় সব শ্রেণির ক্রেতার নাভিশ্বস ওঠার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কিছু যৌক্তিক কারণে বেড়েছে, আবার কিছু অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আমদানি করা সব ধরনের পণ্যে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। তবে দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে নাজেহাল করছে। এর মধ্যে শিশুখাদ্যের বাজার হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে হয়রানি করছে কি না, তা তদারকি সংস্থার ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কথা হয় মো. সাবরিনার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে জানান, আমার মেয়ের বয়স ১৪ মাস, বয়স অনুযায়ি ওজন একটু কম। তাই ডাক্তার পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে বলেছে। এজন্য বুকের দুধের পাশাপাশি তাকে সেরেলাক, সুজি, বাদাম ও খেজুর খাওয়াই। শিশুখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। এজন্য পরিবারের খরচ বেড়ে গেছে। তাই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এজন্য এখন পরিমাণে কম কিনে সন্তানকে কম খাওয়াতে হচ্ছে। ফলে মেয়েটার ওজন ঠিকমতো বাড়ছে না।
গুলশান-২ এলাকার একটি সুপার শপে শিশুখাদ্য কিনতে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আগে আমার ছোট ছেলের জন্য ৭০০ টাকা দিয়ে এনএএন দুধ কিনতাম। এখন ৯০০ টাকা হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই এনএএন বাদ দিয়ে ল্যাকটোজেন খাওয়াতে হচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় ল্যাকটোজেনের দামও বেড়েছে। এছাড়া শুধু দুধ নয়, বাচ্চাদের সব ধরনের খাবারের দাম বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখন বাচ্চাদের খাবারেও কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
এদিকে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পুষ্টিকর কিছু খাবার খাওয়াতে হয়। এজন্য কিছু সাবলিমেন্টারি দুধ আইটেম খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এসব পণ্যের দাম বাড়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত বেশির ভাগ পরিবার সন্তানদের পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই শিশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে দীর্ঘ মেয়াদে শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি তৈরি হতে পারে।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, বাজারে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে শিশুখাদ্যের বাজারেও তদারকি করা হচ্ছে। আমদানি মূল্য ও বিক্রয় মূল্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। অসংগতি পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।