Logo
Logo
×

অন্যান্য

৫০-৭০ ভাগ মৃত্যু কমালেও গাড়িতে সিটবেল্টে অনীহা

Icon

কাজী জেবেল

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩৪ পিএম

৫০-৭০ ভাগ মৃত্যু কমালেও গাড়িতে সিটবেল্টে অনীহা

ফাইল ছবি

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব রাজিয়া বেগম এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান। ২০১০ সালের ৩১ জুলাই সংগঠিত ওই দুর্ঘটনায় দুজনে একই গাড়িতে ছিলেন। তাদের কারোই সিটবেল্ট বাঁধা ছিল না। ওই ঘটনায় তারা দুজন মারা গেলেও ওই গাড়ির চালক বেঁচে যান। দুর্ঘটনার সময়ে তার সিটবেল্ট বাঁধা ছিল। 

বুয়েটের তথ্য অনুযায়ী, সিটবেল্ট বাঁধা থাকলে দুর্ঘটনায় চালক ও তার পাশের আসনের যাত্রীর মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায় ৫০ শতাংশ। আর পেছনের যাত্রীদের মৃত্যু ঝুঁকি কমে ৭০ শতাংশ। তবুও গাড়ির চালক ও আরোহীদের সিটবেল্ট বাঁধার আগ্রহ কম। যারা সিটবেল্ট বাঁধছেন তাদের বেশিরভাগই মামলা-জরিমানার ভয়ে। সড়কে মৃত্যু কমাতে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে সড়কে কমবেশি ৪০০ জনের বেশি মারা যান। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। গত মে মাসে ৪৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৪ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৬৪৯ জন। এর আগের মাস এপ্রিলে ৪৭৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫৯ জন মারা যান ও আহত হন ৭০৫ জন। বেসরকারি হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এআরআই) বিশেষজ্ঞরা জানান, সিটবেল্ট ব্যবহার করলে এসব সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে যেত।

এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার যুগান্তরকে জানান, সিটবেল্ট বাঁধা থাকলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুঝুঁকি কমে যায়। এটা জানার পরও মানুষ তা মানতে চান না। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, মামলার ভয়ে চালকেরা সিটবেল্ট ব্যবহার করেন। সড়কের যেসব স্পটে পুলিশ থাকে বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়, সেসব স্থানে আসার আগমুহূর্তে সিটবেল্ট বাঁধেন। ওই স্পট অতিক্রম করার পরই তা খুলে ফেলেন। দূরপাল্লার সড়কে পুলিশের উপস্থিতি কম থাকায় সেসব সড়কে চালক ও যাত্রী কেউই সিটবেল্ট বাঁধেন না। 

তিনি বলেন, সিটবেল্ট ব্যবহার নিয়ে বিআরটিএ প্রচারণা চালাচ্ছে। পাশাপাশি গাড়ির চালক ও আরোহীদেরও সচেতন হতে হবে।

বুয়েটের এআরআই সিটবেল্ট ব্যবহারের ওপর গবেষণা করেছে। ঢাকার মিরপুর ও মালিবাগ-বাড্ডা সড়কে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, গাড়ির যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধার আগ্রহ খুবই কম। ব্যক্তিগত গাড়ির ১৭ শতাংশ এবং জিপ ও মাইক্রোবাসের প্রায় ৬ শতাংশ যাত্রী সিটবেল্ট বাঁধেন। যদিও প্রাইভেটকারের ৯০ শতাংশ ও জিপের ৬৭ শতাংশ চালক সিটবেল্ট বাঁধেন। রাজধানীর সড়কে পুলিশের তৎপরতা বেশি। মামলার ভয়ে যাত্রীদের তুলনায় চালকদের সিটবেল্ট বাঁধার প্রবণতাও বেশি।

এ বিষয়ে বুয়েটের এআরআই’র সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ যুগান্তরকে বলেন, গাড়ির প্রত্যেক আরোহীরই সিটবেল্ট বাঁধা প্রয়োজন। সড়কে দুর্ঘটনা হলে পেছনের যাত্রীরা তাদের ওজনের ৩০-৬০ গুণ বেশি গতিতে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে তারা মারাত্মক আহত হন এবং মারা যান। সিটবেল্ট বাঁধা থাকাবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনা হলে যাত্রীরা আহত হবেন ঠিকই কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা কমবে। 

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, গত মার্চ মাসে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট-বন্দর টোল রোডে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সার্জেন্ট মুজাহিদ চৌধুরী মারা যান। ধাক্কা দেওয়া প্রাইভেটকারটি সড়ক থেকে ছিটকে পার্শ্ববর্তী নিচুস্থানে উল্টে পড়ে যায়। ওই গাড়ির দুই আরোহী বেঁচে গেছেন। কারণ হচ্ছে তারা দুজনেরই সিটবেল্ট বাঁধা ছিল এবং গাড়ির এয়ারব্যাগ সচল ছিল। 

পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান আইন ও প্রচলিত অনেক প্রতিবন্ধকতার কারণেও সিটবেল্টের ব্যবহার কম হয়। তারা জানান, ব্যক্তিগত গাড়িতে সিটবেল্ট থাকলেও বাসে তা থাকে না। 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, বাসের চালক ও তার পেছনের সারির যাত্রীদের সিটবেল্ট খুবই জরুরি। কিন্তু বাসে তা থাকে না। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনা পরিবহণ শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। 

তিনি বলেন, বেল্টসহ সিট সরকারই আমদানি করে না। বিদ্যমান আইনেও এ বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি। এ কারণে মালিকদেরও সিটের সঙ্গে বেল্ট রাখার তাগিদ কম। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম