Logo
Logo
×

অন্যান্য

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার কূটনীতিকদের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪৩ পিএম

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার কূটনীতিকদের

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার অঙ্গীকারের মাধ্যমে আজ (১৮ এপ্রিল) ফরেন সার্ভিস দিবস উদযাপিত হয়েছে। 

ফরেন সার্ভিস দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্বার্থ সম্মুন্নত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। 

সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিদেশের মাটিতে অসীম সাহসিকতায় বাংলাদেশি কূটনীতিকরা দেশকে স্বাধীন করার প্রত্যয়ে যে কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, তা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশি কূটনীতিকদের জন্য দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত এবং নতুন প্রজন্মের কূটনীতিকদের জন্য দেশ সেবার বিশেষ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কূটনীতিকদের গৌরবময় অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, বিদেশের মাটিতে কূটনৈতিক সার্ভিসের লোভনীয় চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাদ দিয়ে, জীবন-জীবিকা ও পরিবারের কথা চিন্তা না করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন এ দেশের কূটনীতিকদের দেশ, দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী কূটনীতিকদের নাম সংবলিত একটি সম্মাননা ফলক উন্মোচন করেন। সম্মাননা ফলকটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করা হবে।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন নবীন কূটনীতিক হিসেবে দেশের জন্য তাদের ভূমিকা তুলে ধরেন।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি তার চাকরির পেনশনের এক তৃতীয়াংশ, প্রায় দশ লাখ টাকা প্রদান করে তার প্রয়াত সহধর্মিণী মরিয়ম চৌধুরীর নামে একটি উৎসর্গকৃত তহবিল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। 

তিনি বলেন, এ তহবিলের নাম হবে ‘প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল করিম চৌধুরীর প্রয়াত সম্মানিতা সহধর্মিণী মরিয়ম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা স্মৃতি তহবিল’। এ তহবিলের পরিচালনায় থাকবে ফরেন অফিস স্পাউস অ্যাসোসিয়েশন (ফোসা) এবং এ তহবিলের অর্থ থেকে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শনকারী কর্মচারী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের সন্তানদের স্কুল সমাপনী পর্যন্ত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই সরবরাহ করা হবে। 

অনুষ্ঠানে ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশন (ফোসা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সহধর্মিণী সেলিনা মোমেন তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকালে দেশের জন্য কূটনীতিকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের জন্য যে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তা দেশের মানুষ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তিনি ফোসার ব্যবস্থাপনায় ‘প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল করিম চৌধুরীর প্রয়াত সহধর্মিণী মরিয়ম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা স্মৃতি তহবিল’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার জন্য সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমান তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন কূটনীতিকদের সাহসিকতা এবং দেশের জন্য তাদের অবদান তুলে ধরেন। তিনিও তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থও ফরেন অফিস স্পাউস অ্যাসোসিয়েশনের তহবিলে দান করার ঘোষণা দেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) খুরশিদ আলম। অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনতসি, ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশনের (ফোসা) সভাপতি ফাহমিদা জাবিন, মুক্তিযুদ্ধে কূটনৈতিক ফ্রন্টে কর্মরত প্রাক্তন কূটনীতিকরা অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন। এ সময় বক্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী ত্যাগী নেতাদের, সব মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সব মহান কূটনৈতিককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিক, ঢাকাস্থ বিভিন্ন বিদেশি কূটনীতিক, ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সাহসী ও গৌরবময় অবদানের স্মরণে ২০১২ সাল থেকে ১৮ এপ্রিল দিনটি ফরেন সার্ভিস ডে হিসেবে পালন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশপূর্বক এবং দখলদারি পাকিস্তান সরকারকে ত্যাগ করে ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতায় তৎকালীন পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশনের বাংলাদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসকর্মীরা পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করেন। 

পরবর্তীতে তদানীন্তন বিভিন্ন পাকিস্তানি দূতাবাসগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশি কূটনীতিকরা পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনপূর্বক মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ফ্রন্টকে বেগবান করেন। 

রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা যখন সম্মুখ সমরে লিপ্ত, তখন বাংলাদেশি কূটনীতিকরা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারণা ও জনমত গঠনের কাজ শুরু করেন এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্মকাণ্ড বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়ে একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম