Logo
Logo
×

অন্যান্য

পুঁজিপতিদের প্রভাব বাড়ছে রাজনীতিতে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৯ পিএম

পুঁজিপতিদের প্রভাব বাড়ছে রাজনীতিতে

বাংলাদেশে পুঁজিবাদের বিকাশ হয়েছে রাষ্ট্রকে দহন, শোষণ ও অবলোপনের মাধ্যমে। নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছে।  আগামীতেও এর বাইরে কেউ এগোতে পারবে বলে মনে হয় না। রাজনীতিতে পুঁজিপতিদের প্রভাব ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। 

রোববার ষষ্ঠ সানেম (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইকোনমিক মডেলিং) অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের সমাপনী দিনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। এদিন ‘রাষ্ট্র এবং ব্যবসার মধ্যে শক্তির গতিশীলতা : বাংলাদেশে পুঁজিবাদ কিভাবে বিকশিত হচ্ছে’ এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। 

অর্থনীতিবিদ, গণনীতি বিশ্লেষক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় বলেন, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে পুঁজি আহরিত হয়েছে তিনটি উপায়ে।  প্রথমত, স্বাধীনতার পর যেসব পরিত্যক্ত সম্পদ ছিল, সেগুলো দখল লুট করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিদেশিদের সহায়তায় অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়ে সেখান থেকে পুঁজি সংগ্রহের চেষ্টা হয়। তৃতীয়ত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে অধিকাংশই আত্মসাৎ করা হয়েছে। সেখান থেকেই অনাদীয় ঋণের সূত্রপাত। এ ক্ষেত্রে ৯০ দশকের পর স্টক মার্কেটে ম্যানুপুলেশন করে অন্তত তিনবার অর্থ লুণ্ঠন করা হয়েছে। আর বর্তমানে অতিমূল্যায়িত বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাদ সঠিক পথে এগুতে পারেনি। মেগা প্রকল্পের চেয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কম গুরুত্ব দেওয়ার সমালোচনা করেন দেবপ্রিয়। 

তিনি বলেন, দেশে ট্রেড বডিতে নির্বাচন হয় না, নমিনেশন বা চুক্তির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। ফলে যে নির্বাচিত হন, তিনি সংগঠনের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন না।  যে নির্বাচিত করেছেন তার হয়ে কাজ করার চেষ্টা করেন সবসময়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান এমএম আকাশ বলেন, রাজনীতি থেকে মানি পাওয়ার, মাসল পাওয়ার (পেশিশক্তি) এবং ম্যানুপুলেশেন দূর করা না গেলে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। এসব প্রভাবের কারণে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে নতিস্বীকার করে সরকার।  ফলে আইনকানুন ঠিক থাকে না, সুশাসন থাকে না।  তখন একই অপরাধে একজন শাস্তি পায়, অন্যজন পায় না। 

তিনি আরও বলেন, রাজনীতিকে যদি অর্থশক্তির হাত থেকে মুক্ত করা না যায় তবে রাজনীতি এমনই হবে। অসৎ লোকের কাছে সর্বময় ক্ষমতা চলে যায়।  তখন ভোট না করেও ভোট হয়, রাতের বেলা ভোট হয়, এক টাকার কাজ করতে তিন টাকা খরচ হয়।  তাই বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে, তা এখনই ঠিক করতে হবে। 

আলোচনায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতি করা খুবই ব্যয়বহুল। দেশে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য দেড় কোটি টাকা লাগে। যেখানে যুক্তরাজ্যে সংসদ সদস্য হতে এক লাখ ডলার ব্যয় করলেই চলে। এ পরিস্থিতি থেকে বের না হলে পুঁজিবাদের কাছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা আরও দুর্বল হবে। যেসব দেশ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়া আটকাতে পারেনি, সেসব দেশে আদানির মতো ব্যবসায়ী হবে, ট্রাম্পের মতো নেতা হবে। 

সানেমের এই আলোচনায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সিপিডি সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স এবং উন্নয়নের (বিআইজিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান। এছাড়াও প্যানেল বক্তা হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের (বিইএন) প্রতিষ্ঠাতা ড. নুরুল ইসলাম এবং অর্থনীতিবিদ ড. স্বপন আদনান।

রাজনীতি ও ব্যবসা এক হলে চলবে না : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে পড়ে বিভিন্ন খাতে যেনতেন সংস্কার না করে কার্যকর সংস্কার করতে হবে। সেই সঙ্গে এই সংস্কারের ব্যথা ও অ্যাডজাস্টমেন্ট কস্ট নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই ব্যথার বোঝা কোন শ্রেণির ঘাড়ে বেশি পড়বে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যাতে এ কারণে আরও বেশি দুর্বিষহ জীবন না কাটায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইকোনমিক মডেলিং-এর (সানেম) দুদিনের অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের সামাপনী অধিবেশনে এসব কথা বলা হয়েছে। 

এ সময় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান আরও বলেন, আইএমএফের শর্তে এত অল্প সময়ে কিভাবে এত সংস্কার করা হবে সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসার মধ্যে যে মিথস্ক্রিয়া আছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাজনীতি ও ব্যবসা এক হলে চলবে না। এরকম নানা বিষয়ে গত দুদিনে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এ অধিবেশনে সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল হক খন্দকার এবং গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বক্তব্য দেন। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম