আমরা এত দিন মশা নিয়ন্ত্রণে ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি: মেয়র
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:৪৩ পিএম
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আমরা এত দিন মশা নিয়ন্ত্রণে ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই অতিদ্রুত ডিএনসিসিতে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরে সফরত ডিএনসিসি মেয়র শুক্রবার সেখানে এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন।
দুই দেশের সময়ের পার্থক্যের কারণে আজ (শনিবার) ডিএনসিসির জনসংযোগ বিভাগ থেকে সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনে সহায়তা করেন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অপারেশন ম্যানেজার উসিক উনলু ও পরিচালক ড. উইলিয়াম ডি পেট্রি।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জন করেছি, ঢাকায় ফিরে তার সফল বাস্তবায়ন করা হবে। যে কোনো মূল্যে আমরা ডিএনসিসিকে মশামুক্ত রাখব। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তাদের সিডিসির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের দেশের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করা হবে। তারা কিভাবে সফল সেটি কিভাবে ঢাকায় প্রয়োগ করা যায় তার কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ল্যাবেই মশার জীবন প্রকৃতি নির্ণয়ে কাজ করা হবে। আর ফগিংয়ে অর্থ অপচয় না করে লার্বিসাইডিংয়ে মনোযোগী হব আমরা। কেননা আমরা দেখেছি মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরন একই। তাই তারা সফল হলে অবশ্যই আমরা সফল হব। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশ তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব।
ফ্লোরিডার মিয়ামি রার্জ্যে অনুষ্ঠিত ওই কর্মশালায় বলা হয়, মিয়ামি শহরে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে বছরের ৩৬৫ দিনই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেখানে। রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস। ঢাকার আবহাওয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেটের মিয়ামি ডেড কাউন্টির বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রিতে উঠানামা করে। মাঝে মাঝে ভারি বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। এডিস বাহিত ডেঙ্গি সব ধরনের মশাবাহিত রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে পারত মিয়ামি। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।
মিয়ামিতে মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে মশার প্রজাতি নির্ণয়। কেননা মশার ধরন বুঝে ওষুধ স্প্রে করতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ফগার স্প্রে করে কোনোভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা সফরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন- ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর, ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানা ইতি ও মিতু আক্তার, ডিএনসিসির প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. বরকত হায়াত, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী তাবাসসুম আবদুল্লাহ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক, নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ, মেয়রের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আয়োজনে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ডিএনসিসির প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডা সফর করছেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিএনসিসি মেয়র।
সফরকালে মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির অভিজ্ঞতা হাতে কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের এই সফল কার্যক্রম ডিএনসিসি বাস্তবায়ন করবে বলে সেখানে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।