
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০১ এএম
ইসরাইলি হামলায় পরপর দুই বাগদত্তার মৃত্যু, গাজার তরুণীর হৃদয়বিদারক ভাগ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১১:১২ এএম
-67e4de4071358.jpg)
২০ মার্চ ২০২৫ সালে উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে ইসরাইলি হামলা। ছবি- সংগৃহীত
ইসরাইলি হামলায় পরপর দুই বাগদত্তাকে হারিয়েছেন সন্ডোস আব্বাস নামে এক ফিলিস্তিনি। সন্ডোস আব্বাসের কাছে ২০২৪ সালের রমজান মাসটি এক অনন্য আনন্দের সময় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বুকে তার জীবনের গল্প পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তিনি দু’বার বাগদান করেছেন এবং দু’বারই বাগ্দত্তাকে হারিয়েছেন ইসরাইলি বিমান হামলায়।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
বাগদানের পরদিনই তার সর্বশেষ বাগদত্তা মাহমুদ আল-শোবাকি সকালে ফোন করে তাকে বিকেলের ইফতারের জন্য পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলেন। সন্ডোস পরিপাটি হয়ে অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু বিকেল গড়িয়ে গেলেও তার বাগদত্তার আর কোনো খোঁজ মিলছিল না।
আমি বারবার ফোন করছিলাম, কিন্তু সংযোগ পাচ্ছিলাম না। এরপর এক আত্মীয় ফোন করে জানালেন, ‘তোমার বাগদত্তা শহিদ হয়েছেন,’ স্মৃতিচারণ করলেন সন্ডোস।
শোবাকি গাজায় এক দাতব্য সংস্থার জন্য ইফতার আয়োজনের উদ্দেশ্যে প্লাস্টিকের চেয়ার সরবরাহ করছিলেন। সে সময় ইসরাইলি বিমান হামলায় গাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ হলে তার মৃত্যু হয়।
এই যুদ্ধে হাজারো নারী তাদের জীবনসঙ্গীকে হারিয়েছেন, কিন্তু সন্ডোস আব্বাসের কষ্ট আরও গভীর। কারণ, এটি তার জীবনে দ্বিতীয়বার ঘটল।
প্রথম বাগদান এবং প্রথম শোক
যুদ্ধ শুরুর আগে, ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট আহমেদ আবুহাসিরার সঙ্গে প্রথম বাগদান সম্পন্ন হয় সন্ডোসের। ২৩ অক্টোবর ছিল তাদের নির্ধারিত বিয়ের দিন।
কিন্তু ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি এমনই হয়ে যায় যে, আর কোনোদিন দেখা হয়নি তাঁদের।
২৬ অক্টোবর, যখন ইসরাইলি বাহিনী আবুহাসিরার বাড়িতে বোমা হামলা চালায়, তখন টেলিভিশনের সংবাদ দেখেই সন্ডোস জানতে পারেন তাঁর বাগ্দত্তার মৃত্যুর খবর।
‘আমি আল-জাজিরা দেখছিলাম। স্ক্রলে দেখলাম, আবুহাসিরা পরিবারের বাড়ি বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি বুঝতে পারলাম, আমার বাগ্দত্তাও হয়তো নিহত হয়েছেন’, বললেন তিনি।
পরে নিশ্চিত হওয়া গেল, আহমেদ আবুহাসিরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে চিরতরে হারিয়ে গেছেন।
ভালোবাসার দ্বিতীয় অধ্যায়, আরেকটি ভয়াবহ পরিণতি
সন্ডোস আব্বাস শোকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। মাসের পর মাস কারও সঙ্গে তেমন কথা বলেননি। তবে রমজান মাসে নিয়মিত মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়তে যেতেন তিনি।
সেখানেই এক নারী প্রথম তাঁকে দেখেন এবং পরে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান।
সন্ডোস বলেন, ‘আমি প্রথমে দ্বিধান্বিত ছিলাম। কিন্তু পরে যখন তার সঙ্গে কথা বললাম, তখন মনে হলো, তিনি সত্যিই আমাকে বোঝেন। আমি তাকে আমার আগের বাগদত্তার কথা জানাই, আমার কষ্টের কথা বলি। তখন তিনি বললেন, আমি তোমার হারানো সবকিছু পূরণ করতে চাই’।
কিছুদিন পর তাদের আনুষ্ঠানিক বাগদান সম্পন্ন হয়। তারপর কেবল একটি দিনই কাটিয়েছিলেন নতুন বাগদত্তার সঙ্গে, আর পরদিনই আবার মৃত্যু এসে তাকে স্পর্শ করল।
‘আমি আর কাউকে বেছে নেওয়ার সাহস পাই না’
সকালে যখন মাহমুদ আল-শোবাকি ফোন করে সন্ডোসকে ইফতারের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছিলেন, তখন হয়তো তিনিও ভাবেননি যে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু তাকে গ্রাস করবে।
সন্ডোস বলেন, আমি তখন সাজগোজ করে অপেক্ষা করছিলাম, অথচ তিনি তখনই মৃত ছিলেন।
ইফতারের জন্য তার নতুন শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার বদলে তিনি সেখানে ছুটলেন শোক জানাতে।
তিনি বলেন, ‘তার মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার চোখের আলো চলে গেল... দয়া করে আমাদের ছেড়ে যেও না’।
সন্ডোস আব্বাসের ভয় এখন অন্য রকম—ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নয়, বরং ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নিয়ে।
‘আমি দু’জন বাগদত্তাকে হারিয়েছি এই যুদ্ধে। আমি আর কাউকে বেছে নেওয়ার সাহস পাই না, আমি ভয় পাই, এটি যেন আমার নিয়তি না হয়। আমি যাকেই বেছে নেব, তাকেই যেন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব’, বললেন তিনি।