কোনো রক্তচক্ষুর কাছে মাথানত করবে না যুগান্তর: সালমা ইসলাম এমপি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:১৫ পিএম
যুগান্তর প্রকাশক ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, কোনো রক্তচক্ষুর কাছে মাথানত করবে না যুগান্তর। নিপীড়িত-নির্যাতিত এবং সুবিধা ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের কথা বলে যাবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ আর স্বাধীনতার মর্মবাণী হবে আমাদের পত্রিকার মূল পাথেয়। যুগান্তর তার নীতি-আদর্শ থেকে এক চুলও নড়বে না। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও গণতন্ত্র আর সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাবে পত্রিকাটি।
দেশের জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক যুগান্তরের দুই যুগে পদার্পণ উপলক্ষ্যে বুধবার আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। যমুনা ফিউচার পার্কের যমুনা কনভেনশন সেন্টারের মুঘল হলে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি।
যুগান্তর প্রকাশক পত্রিকাটির দুই যুগে পদার্পণ উপলক্ষ্যে সব পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা এবং শুভানুধ্যায়ীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আপনাদের আশ্বস্ত করে আমি বলতে চাই- সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যুগান্তরের সামনের পথচলা অবিরাম গতিতে এগিয়ে চলবে, ইনশাআল্লাহ। যুগান্তর তার চিরায়ত আদর্শ ও নীতি থেকে এক চুলও নড়বে না।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের আরেকবার বলতে চাই- অতীতের মতো ভবিষ্যতেও যুগান্তর এই দেশ, জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে যাবে। আমরা জানি, কোনো দেশের গণমাধ্যম যদি তার ওপর অর্পিত ভূমিকা যথাযথভাবে রাখতে পারে, তাহলে সেই জাতি তার স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছতে অনেকটাই গতি পায়। তাই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে। এজন্য অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এ পথচলায় যুগান্তর আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম যুগান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুরুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আপনারা জানেন- ২০০০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু দৈনিক যুগান্তরের। গতানুগতিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আর সাংবাদিকতায় যখন পাঠকরা নতুনত্বের খোঁজে ছিলেন; দেশ, জাতি ও সমাজ যখন আধুনিক, ব্যতিক্রমী, ভিন্ন ও নতুনধারার গণমাধ্যম তথা সংবাদপত্রের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন, তখন ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটে যুগান্তরের। ধূমকেতুর মতো আবির্ভাবের কথা এজন্য বলছি যে, যাত্রা শুরুর মাত্র ৬ মাসের মধ্যে যুগান্তরের চাহিদা এতটাই শীর্ষে পৌঁছেছিল যে, তখন দৈনিক ৪ লাখ কপি পত্রিকা পর্যন্ত ছাপতে হয়েছিল।
যুগান্তর পাঠকের পছন্দের পত্রিকায় পরিণত হওয়ার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে প্রকাশক সালমা ইসলাম বলেন, এটা এজন্য সম্ভব হয়েছিল যে, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়- ‘অসঙ্কোচ প্রকাশে দুরন্ত সাহস’ দেখিয়েছে যুগান্তর। সেই ধারা অদ্যাবধি সমানভাবে বজায় রেখেছি আমরা। তবে এখানে একটি কথা না বললেই নয়। আর সেটি হচ্ছে, শুরু থেকেই অসীম সাহস আর সততার সঙ্গে যুগান্তর সবধরনের সত্য প্রকাশ করতে পেরেছে শুধু এর স্বপ্নদ্রষ্টা নুরুল ইসলামের কারণে। তিনি সবসসময় বলতেন- যুগান্তরের কাজ একটিই, আর তা হচ্ছে- সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলা। আজকে আমার বারবার মনে পড়ছে যুগান্তরের এই স্বপ্নদ্রষ্টার কথা। তিনি আমাদের সবাইকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। দেশ, জাতি, গণতন্ত্র আর দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তিনি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রাখার জন্য যুগান্তরের সাহসী ভূমিকার ভিত্তি রচনা করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে জীবনের মায়া ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে আরও অনেকের মতো তিনি একজন হিসেবে ভূমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি দেশের অর্থনৈতিক স্বাধিকার অর্জনেও ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরপর তিনি মুক্ত, সাহসী ও আধুনিক সাংবাদিকতার পথ রচনায়ও অগ্রণী হন। তাই আজকের এই দিনে আমি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, যুগান্তরের প্রকাশক হিসেবে আমার অনেক দায় আছে। আমি মনে করি- এ যাবত যুগান্তরের যত সাফল্য তার সবটুকু যুগান্তরের সব কর্মী; আর যা কিছু ব্যর্থতা আছে তার সব দায় আমার নিজের। যারা যুগান্তর পড়েন ও যুগান্তরকে বিশ্বাস করেন ও ভালোবাসেন তাদের পরামর্শ আমরা সাদরে গ্রহণ ও মূল্যায়ন করি। কারণ অগণিত পাঠকই যুগান্তরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। নানান প্রতিকূলতার মধ্যে যুগান্তর এখনো মাথা উঁচু করে সত্যের জয়গান গাইছে। আগামীতেও যুগান্তর সত্য, ন্যায় ও সম্ভাবনার কথা বলবে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন- প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত গোলাম সারওয়ার, এবিএম মূসা, আবেদ খানসহ অনেক বরেণ্য সাংবাদিক যুগান্তরকে দ্যুতি ছড়াতে নিজেদের মেধা ও পরিশ্রমের সর্বোচ্চটা দিয়ে গেছেন। আজকে এ বিশেষ দিনে তাদের অবদানকেও আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। যুগান্তরের জন্মলগ্ন থেকে প্রথমে সহ-অভিযাত্রী এবং পরে মূল নাবিকের ভূমিকা পালন করে আসছেন আপনাদের সবার প্রিয় সম্পাদক সাইফুল আলম ভাই। আজকে আমি সবার অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও শুভেচ্ছা বাণী দিয়ে আমাদের সাহসের চলার পথকে আরও উৎসাহিত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমাদের আজকের এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাণী দিয়েছেন। এছাড়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা। যুগান্তরের পাশে থাকায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।