Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অমর একুশে বইমেলা ২০২৫

উচ্চশিক্ষায় উপেক্ষিত মাতৃভাষা

১৯তম দিনে বইমেলা, নতুন বই এসেছে ১৭৯৩টি

হুমায়ুন কবির

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উচ্চশিক্ষায় উপেক্ষিত মাতৃভাষা

ছবি: ইন্টারনেট

দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এতে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও পঠন-পাঠন দিন দিন কমছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন বিভাগে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করা হচ্ছে। চিকিৎসা, প্রকৌশল বিদ্যার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও ব্যবসায় অনুষদের বিষয়ভিত্তিক বইগুলো ইংরেজিতে লেখা। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম এবং পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন ইংরেজি মাধ্যমে হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। কলা অনুষদে কিছু বিষয় বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হলেও সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদে ঠিকই শিক্ষার্থীদের ওপর ইংরেজির খক্ষ চাপানো হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানে প্রায় শতভাগ ইংরেজি পাঠ্যক্রমে পড়ানো হয়। লেখাপড়া বাজারমুখী কাঠামোর কারণে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যেন অনেকটাই নির্বাসনে। সাধারণত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ভাষাকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ ঘটে বেশি। অথচ উচ্চশিক্ষায় দিন দিন বাংলার চর্চা কমছে। বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইংরেজিতে। কার্যত উচ্চশিক্ষায় বড় সংকটে রয়েছে মাতৃভাষা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি সেই রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরে পদার্পণ করার পথে থাকলেও আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা ভাষা উপেক্ষিত।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, মাতৃভাষার জন্য ১৯৫২ সালে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত এবং আরও কয়েক জন। ভাষার আন্দোলনই বাংলাদেশ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। যে দেশে মায়ের ভাষা রক্ষায় এত ত্যাগ, সে দেশেই পিছিয়ে পড়ছে বাংলা ভাষা। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাভাষা ব্যবহারের এই উপেক্ষা শুধু প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকদের নয়। এ দায় রাষ্ট্রের, সরকারের। তবে দেশে উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষায় বইয়ের সংকট রয়েছে। ইংরেজিতে লেখা বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করার জন্য অনুবাদক দেশে অপ্রতুল। দেশে ভালো অনুবাদক তৈরি করা, শিক্ষায় বাংলা ভাষা ব্যাপক হারে প্রচলন, প্রসারণের জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। অথচ আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে নির্বিকার ও নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছেন। বাংলায় রচিত ও অনুদিত বইয়ের সংখ্যা বাড়লে উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহারও বাড়বে। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে এর বিকল্পও নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫টি। এসবের ৩৮টিই মেডিকেল, কৃষি, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, যেগুলোর বেশির ভাগেই বাংলা পড়ানো হয় না। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৫টি। সেখানে বাংলার চর্চা নেই বললেই চলে। সেখানে পরীক্ষাও বাংলায় দেওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি ১১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র সাতটির নাম বাংলায়। বাকি ১০৮টির নাম ইংরেজিতে। এছাড়া দেশের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতেও বাংলার ব্যবহার নামমাত্র।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ যুগান্তরকে বলেন, বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা প্রাণের ভাষা। এই ভাষাকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে উচ্চশিক্ষায় কিছু কিছু বিষয় রয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক ভাষা ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে কম গুরুত্ব দিয়ে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই সব ভাষাকে সম্মান প্রদর্শন করতে। তবে ইংরেজিকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আদান-প্রদানের জন্য ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

একুশে বইমেলা : একুশে বইমেলা চলবে আর মাত্র ৮ দিন। দিন যতই গড়াচ্ছে বইমেলার ভিড় ততই বাড়ছে। বুধবার বিকালে মেলার গেটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেছে পাঠক ও দর্শনার্থীদের। আগামীকাল অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এদিন মেলায় বইপ্রেমী পাঠক, লেখক, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে। প্রকাশকরা বলছেন, এখন যারা বইমেলায় আসছেন তারা ঘোরার চেয়ে বইয়ের টানেই বেশি আসছেন। তারা দেখেশুনে বই কিনছেনও। সাধারণত ২১ ফেব্রুয়ারি মেলায় মানুষের সর্বোচ্চ উপস্থিতি থাকে, বিক্রিও ভালো হয়। বুধবার অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিন ছিল। এদিন মেলা শুরু হয় বেলা ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৭০টি। এই পর্যন্ত মোট নতুন বই এসেছে ১ হাজার ৭৯৩টি। এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘শিশুসাহিত্যের মহিরুহ রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জুলফিকার শাহাদাৎ। আলোচনায় অংশ নেন শাহাবুদ্দীন নাগরী। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন-মাহমুদউল্লাহ, কাজল রশীদ শাহীন এবং তুহিন খান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মজিদ মাহমুদ, কবি কামরুজ্জামান এবং কবি শফিকুল ইসলাম।

এদিকে সামাজিক বাস্তবতার বেড়াজালে আটকে পড়া কিছু শহুরে এবং গ্রামীণ নারীর লড়াই করে টিকে থাকার গল্প নিয়ে ‘কমলা রঙের রোদ’ নামে একটি বই এসেছে এবারের মেলায়। এই বইয়ের দশটি গল্পই আবর্তিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঘুরে দাঁড়ানো কিছু নারীকে নিয়ে। এই নারীরা জীবনে কোথাও থেমে না গিয়ে কঠিন সময়ে, বাস্তবতায় একটি নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছেন। এই নারীরাই আমাদের দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক সংগ্রামরত নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা। বইটি লিখেছেন লেখক সোমা দেব। বই মেলার প্যাভিলিয়ন-৩৪ এ শব্দশৈলী প্রকাশনীতে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আল নোমান।

আজকের অনুষ্ঠান : আজ অমর একুশে বইমেলার ২০তম দিন। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবর্ষ : রশীদ করীম’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হামীম কামরুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অনিরুদ্ধ কাহালি এবং সাখাওয়াত টিপু। সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়ুয়া।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম