অমর একুশে বইমেলা কবিতার বই বেশি, চাহিদার শীর্ষে গল্প-উপন্যাস

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৬ পিএম

চলছে অমর একুশে বইমেলা। মেলার দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যাও। প্রতি বছরই মেলায় প্রকাশিত বইয়ের বড় অংশ জুড়েই থাকে কবিতার বই। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। এখন পর্যন্ত মেলায় প্রকাশের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে কবিতার বই।
এরপর রয়েছে উপন্যাস। কবিতা ও উপন্যাসের পরেই রয়েছে গল্পের বইয়ের সংখ্যা। মেলায় সব ধরনের বইয়ের পাঠকের আনাগোনা থাকলেও চাহিদার শীর্ষে উপন্যাস ও গল্পের বইয়ের। বিশেষ করে গোয়েন্দা কাহিনির প্রতি তরুণ পাঠকদের বাড়তি আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়। বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্য এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ বছর মেলায় ১৭তম দিন সোমবার পর্যন্ত নতুন বই এসেছে ১৬৩৪টি। সোমবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ১১৩টি। এর মধ্যে কবিতার বইয়ের সংখ্যা ৪১টি। অর্থাৎ বইয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কবিতার বই। এদিন গল্পের বই এসেছে ২১টি, উপন্যাস ১৪টি, প্রবন্ধ ৬টি, গবেষণা ২টি, শিশু সাহিত্য ৫টি, ছড়া ২টি, জীবনী ৩টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ২টি, ইতিহাস ৪টি, ভ্রমণ ২টি, ধর্মবিষয়ক ৩টি, স্বাস্থ বিষয়ক ২টি এবং অন্যান্য ৬টি।
লোকশিল্প গবেষক ও কবি ড. আমিনুল রহমান সুলতান বলেন, নতুন যারা লিখছেন হয়তো আগের মতো এখন আর পাঠকের মধ্যে সেই হিড়িক নেই। তবে মেলায় গল্পের বইয়ের পাঠক একেবারেই কম বলা যাবে না। অনেক সময় দেখা যায় গল্পের লেখকের চেয়ে পাঠক গল্পের ঝকঝকে প্রচ্ছদ, গল্পের নাম দেখেও বইটি কিনে নিচ্ছেন। তাছাড়া বর্তমান সময়ে দেখছি লেখককেন্দ্রিক এক ধরনের পাঠক রয়েছে। এটা একটা পজেটিভ দিক হিসাবে আমি দেখছি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, খ্যাতিমান লেখকদের পাশাপাশি নবীন লেখক-সাহিত্যিকদের বই শোভা পাচ্ছে স্টলে স্টলে। মেলায় আসা পাঠক-দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন স্টল থেকে স্টল। পছন্দ হলে কিনছেন বই।
কয়েকজন বিক্রয়কর্মী জানান, শুক্রবার ছিল পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। এদিন দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড় ছিল। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ভালো বেচাকেনা হয়। তবে স্বাভাবিক দিনগুলোতে খুব একটা বেচাকেনা হচ্ছে না। কারণ প্রায় প্রতিদিনই শাহবাগসহ এই অঞ্চলে আন্দোলন-সড়ক অবরোধ চলে। যার ফলে জ্যামসহ নানা কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও মেলায় আসছেন না বলেও জানান তারা।
এদিকে সোমবার মেলায় আসা উলেখযোগ্য নতুন বইগুলোর মধ্যে ঐতিহ্য এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর গল্প ‘অনুবাদসমগ্র’, রোদেলা প্রকাশনী এনেছে শামসুজ্জামান শামসের জীবনীগ্রন্থ ‘নোবেলবিজয়ী চার বাঙ্গালি’, মেরিট ফেয়ার প্রকাশন এনেছে ড. মো. হাসানুজ্জামান জুয়েলের গণ-অভ্যুত্থান জুলাই বিপ্লববিষয়ক ‘কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’, কথাপ্রকাশ এনেছে মাসুদ খোন্দকারের লোককথাবিষয়ক ‘ফিলিপাইনের লোকগল্প’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে মনি হায়দারের রম্যগল্প ‘উড়িতেছে সোনার ঘোড়া’।
মূল মঞ্চের আয়োজন : সোমবার বিকাল চারটায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আল মাহমুদ : জীবন ও কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মজিদ মাহমুদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুসা আল হাফিজ এবং কাজী নাসির মামুন। সভাপতিত্ব করেন মাহবুব সাদিক।
প্রাবন্ধিক বলেন, আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ের কবি, যখন বাঙালি তথা পূর্ববঙ্গের মানুষের আত্ম পরিচয়ের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। একজন চারণ কবির মতো প্রেরণায় ভর করে তিনি স্বদেশ ও স্বজাতির কথা বর্ণনা করে গেছেন। কৃষকের কাছে যেমন তার ভুমি, কৃষি উৎপাদন, স্ত্রী, সন্তান, গবাদিপশু জীবনের অবিচ্ছেদ্য উপকরণ, তেমনি আল মাহমুদের কাছে তার স্বদেশ চেতনা জীবনের অপরিহার্য সহায়। তিনি কবিতায় শহর ও নগর জীবনের পার্থক্য ঘুচিয়ে দিয়েছেন। তার কাব্যভাষায় একটি জাতির হাজার বছরের ক্রিয়াভিত্তিক শব্দরাজি পরম সফলতার সঙ্গে ধরা দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে মাহবুব সাদিক বলেন, কবি আল মাহমুদ ছিলেন ঐতিহ্য ও ইতিহাসসচেতন আপাদমস্তক একজন কবি। তার কবিতা আমাদের স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করে। বাংলা সাহিত্যে আল মাহমুদ উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে টিকে থাকবেন।
এছাড়াও লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি মতিন বৈরাগী এবং কবি ফজলুল হক তুহিন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল ঝর্ণা আলমগীরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং রূপশ্রী চক্রবর্তীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শিল্প বাংলা’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী এটিএম আশরাফ হোসেন, ওয়াদুদুর রহমান রাহুল, সোমা সরকার, নিপা আক্তার, সানজিদা ইয়াসমিন লাভলী, মাসুদুল হক, মো. আলী হোসাইন, মমতা দাসী এবং মোখলেসুর রহমান মিন্টু।
আজকের আয়োজন : আজ মঙ্গলবার, বইমেলার ১৮তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জীবন ও কর্ম : শহীদ কাদরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শামস আল মমীন এবং আহমাদ মাযহার। সভাপতিত্ব করবেন কবি ও লেখক হাসান হাফিজ।