Logo
Logo
×

সাহিত্য

গল্পের জাদুকর মোস্তফা মামুনের ‘সেরা দশ গল্প’

Icon

তন্ময় রহমান

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:০৬ এএম

গল্পের জাদুকর মোস্তফা মামুনের ‘সেরা দশ গল্প’

মোস্তফা মামুনের ‘সেরা দশ গল্প’ বইটি পড়ার পর মনে হলো, গল্প বলার শিল্প কীভাবে একজন লেখকের হাত ধরে জীবন্ত হয়ে ওঠে, তা যেন এই বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে। বইটি শুধু গল্পের সংকলন নয়, বরং লেখকের গল্প বলার নেশা, তার চিন্তার গভীরতা এবং জীবনের নানা দিককে সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরার এক অনন্য উদাহরণ। প্রতিটি গল্পই যেন আলাদা এক বিশ্ব, যেখানে পাঠক হারিয়ে যেতে বাধ্য।

প্রথম গল্প ‘পলাতক বীর’ দিয়ে শুরু হয় এই যাত্রা। এটি শুধু একটি পালিয়ে বেড়ানো মানুষের গল্প নয়, বরং আমাদের সবারই জীবনের সেই অংশের গল্প, যেখানে আমরা কখনো কখনো পালাতে চাই, কিন্তু পালিয়ে গেলেও সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে না। গল্পটি লেখকের নিজের কাছেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যা বারবার পড়ার পরও একই রকম তৃপ্তি দেয়।

‘পিস্তলধারী পাওনাদার’ বা ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ গল্পটি যেন নাম্বার ওয়ানদের পেছনের সেই অদৃশ্য হাতের গল্প, যারা কখনো আলোর মুখ দেখে না, কিন্তু তাদের অবদানই সবচেয়ে বড়। গল্পটি পড়ে মনে হলো, জীবনের অনেক চরিত্রই এমন, যারা আলোর মঞ্চে না উঠেও নেপথ্যে থেকে সবকিছু সাজিয়ে দেয়।

‘সালাম’ এবং ‘আমার ভাই তোমার ভাই’ গল্প দুটি রাজনীতি ও মানবিকতার জটিল সম্পর্ককে ফুটিয়ে তোলে। রাজনীতির নিষ্ঠুরতা আর মানবিকতার দ্বন্দ্ব যেন এই গল্পগুলোর মাধ্যমে আরও গভীরভাবে অনুভব করা যায়। বিশেষ করে ‘সালাম’ গল্পটি নানাভাবে পড়া যায়, প্রতিবারই নতুন অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়।

‘বেকার মামা’ এবং ‘বুলেট ভাইয়ের সমিতি’ গল্প দুটি যেন সমাজের সেই চরিত্রগুলোর প্রতিচ্ছবি, যাদের আমরা প্রায়ই উপেক্ষা করি। বেকার মামা বা বুলেট ভাইয়ের মতো চরিত্রগুলো আমাদের চারপাশেই আছে, কিন্তু তাদের গল্প শোনার কেউ নেই। লেখক তার গল্প বলেছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে, যেন তাদের জীবন আমাদের কাছেই একটু বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে।

ভূতের গল্প ‘গল্পের খাতা’ এবং ‘রাজসঙ্গী’ যেন একটু ভিন্ন স্বাদের। লেখক নিজে ভূত-টুতে ভয় পান না বলেই হয়তো এই গল্পগুলো এতটা জীবন্ত হয়ে উঠেছে। গল্পগুলো পড়তে পড়তে পাঠকও যেন একটু ভয় পেয়ে যায়, যা অতিপ্রাকৃত গল্পের সার্থকতা।

প্রেমের গল্প ‘গয়না’ যেন ভালোবাসা আর সম্পদের মধ্যে এক জটিল সম্পর্কের গল্প। গয়নার মতোই প্রেমও বহুমুখী, এর আবেগ এবং অর্থমূল্যের দ্বন্দ্ব যেন জীবনেরই অংশ। গল্পটি পড়ে মনে হলো, ভালোবাসা আসলে হারায় না, শুধু তার রূপ বদলায়।

সবশেষে ‘মেয়ের বাবা’ গল্পটি যেন এক ম্যাজিকের মতো। মেয়ে না থাকা সত্ত্বেও সুজন নামের এক মানুষ কীভাবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মেয়ের বাবা হয়ে ওঠে, তা পড়তে পড়তে মনে হলো, পিতৃত্ব শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়, বরং আবেগের এক গভীর বন্ধন।

মোস্তফা মামুনের গল্প বলার ভঙ্গি এতটাই প্রাণবন্ত যে, প্রতিটি গল্পই যেন পাঠকের মনে দাগ কাটে। বইটির প্রচ্ছদ এবং প্রকাশনা মানও প্রশংসার দাবিদার। অন্যপ্রকাশ বইটিকে সত্যিই এক অনন্য রূপ দিয়েছে।

এই বইটি শুধু গল্পের সংকলন নয়, বরং জীবনের নানা দিককে সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলার এক অনন্য উদাহরণ। যারা গল্প ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য। বইটি পড়ার পর মনে হলো, গল্প বলার আনন্দই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আনন্দ, আর মোস্তফা মামুন সেই আনন্দকে পাঠকের হাতেই তুলে দিয়েছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম