Logo
Logo
×

সাহিত্য

‘বাংলাদেশের লেখকরাই মূলত আলোচক, এটি একটি প্রতিবন্ধকতা’

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২০, ০১:৩৩ এএম

‘বাংলাদেশের লেখকরাই মূলত আলোচক, এটি একটি প্রতিবন্ধকতা’

ছবি: যুগান্তর

আনোয়ারা সৈয়দ হক বাংলাদেশের সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তার জন্ম ১৯৪০ সালের ৫ নভেম্বর যশোর জেলার চুড়িপট্টি গ্রামে। 

তিনি একাধারে একজন কথাসহিত্যিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক। তার প্রথম ছোটগল্প ‘পরিবর্তন’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায়। 

দৈনিক ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসরে ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত নিয়মিত লিখতেন। 

কলেজে পড়াকালীন দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও গুলিস্তা পত্রিকায় তার গল্প ও কবিতা প্রকাশিত হতো। প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে সচিত্র সন্ধানীতে।

তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: বাজিকর, তৃষিতা, সেই সময় সেই প্রেম, বাড়ি ও বনিতা, আয়নায় বন্দী ও ঘুমন্ত খেলোয়াড় প্রভৃতি। 

গল্পগ্রন্থ: অন্ধকারে যে দরোজা, শূন্যতার সাথে নৃত্য, সূর্য ওঠার গল্প, পূর্ণিমায় নখের আঁচড় প্রভৃতি; কাব্যগ্রন্থ: কিছু কি পুড়ে যাচ্ছে কোথাও, স্বপ্নের ভেতর, আমার শয্যায় এক বালিশ-সতীন প্রভৃতি। 

প্রবন্ধগ্রন্থ: নারীর কিছু কথা আছে, কিশোর-কিশোরীর মন ও তার সমস্যা, মেয়ে হয়েছি বেশ করেছি, পিকাসোর নারীরা প্রভৃতি। 

শিশুসাহিত্য: ছানার নানার বাড়ি, একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে, উল্টো পায়ের ভূত, টুটুলের মা-গাছ প্রভৃতি। অনুবাদগ্রন্থ: ল্যু সালোমে: সাহিত্যভুবনের অগ্নিশিখা। 

ভ্রমণকাহিনি: উড়ে যাই দূরে যাই। কর্মজীবনে তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তার রচনায় মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন দিক চমৎকার নৈপুণ্যে উঠে আসে। 

এছাড়া তার লেখায় সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, মধ্যবিত্তের নানাবিধ জটিলতা অনন্য রূপে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।

উপন্যাসে অবদানের জন্য ২০১০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন। 

এছাড়া তিনি যেসব উল্লেখযোগ্য পুরস্কার লাভ করেছেন সেগুলো হল- একুশে পদক (২০১৯), কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার প্রভৃতি।

যুগান্তর: করোনাপরবর্তী পৃথিবীর মানুষের মানসিকতায় কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন?

আনোয়ারা সৈয়দ হক:  আসলে আমাদের মনোজগতে এক ধরনের সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। আমরা সামাজিক দূরত্বে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। এ বিষয়টি তো আমাদের জন্য একেবারে নতুন। 

আবার অনেক আশাজাগানিয়া ঘটনাও ঘটছে। আমরা দেখছি, তরুণরা কুকুরের জন্য খাবার তৈরি করছে। অসহায় প্রাণীদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়গুলো আমাদের আশাবাদী করে।

যুগান্তর: করোনায় গৃহবন্দি সময়ে কী লিখছেন, কী পড়ছেন?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: আসলে একটা অস্বাভাবিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এরকম অবস্থা কখনও দেখিনি। মানসিকভাবেও স্বস্তি পাচ্ছি না। তবু এর মধ্যে পড়ছি। আবার লিখছিও। পুনরায় পড়ছি 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা। আর একটি উপন্যাস লিখছি। নাম এখনও ঠিক হয়নি। এছাড়া আমার বাবাকে নিয়ে একটি স্মৃতিচারণমূলক বই লিখছি- আমার বাবা আমার যিশু।

যুগান্তর: বর্তমানে বাংলাদেশের সাহিত্যে ভালো লেখকের অভাব নাকি ভালো পাঠকের অভাব?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: আমি মনে করি, কোনোটারই অভাব নেই। আর একটা সময়ে অনেকেই লেখেন। এর মধ্যে কয়েকজন লেখকও যদি ভালো লেখেন, সেটিও মন্দ কী। আর পাঠকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

যুগান্তর: জীবিত তিনজন লেখকের নাম জানতে চাই, যাদের লেখা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আনোয়ারা সৈয়দ হক: তিনজনের নাম বলে অন্যদের বিরাগভাজন হওয়ার কী দরকার। আমি মনে করি, অনেকের লেখাই সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রিজিয়া রহমান ভালো লিখতেন, রাবেয়া খাতুন ভালো লেখেন আর বেঁচে থাকলে সৈয়দ শামসুল হকের কথা উল্লেখ করা যেত।

যুগান্তর: লেখক হিসেবে বহুলালোচিত কিন্তু আপনার বিবেচনায় যাদের নিয়ে এতটা আলোচনা হওয়ার কিছু নেই, এমন তিনজন লেখকের নাম জিজ্ঞেস করলে কাদের কথা বলবেন?

আনোয়ারা সৈয়দ হক: বর্তমান যুগ প্রচারের যুগ। যত প্রচার, তত প্রসার। কিন্তু পাঠক হিসেবে যাদের লেখা আমার ভালো লাগবে না, তাদের গ্রহণ না করলেই তো হয়। তাদের নাম বলার প্রয়োজন নেই।

যুগান্তর: বাংলাদেশের সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ লেখকরা কি কম আলোচিত? যদি সেটি হয় তাহলে এর কী কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন।

আনোয়ারা সৈয়দ হক: ভালো লেখকরা কখনও আলোচনা কিংবা পুরস্কারের জন্য থেমে থাকেন না। তিনি নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে লিখে যেতে থাকেন। 

কেউ আলোচনা করল, কি করল না- সেটি তার কাছে মুখ্য বিষয় নয়। আর বাংলাদেশের লেখকরাই মূলত আলোচক। এটিও একটি প্রতিবন্ধকতা।

যুগান্তর: আপনার দেখা সেরা সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র কোনটি?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: অশনি সংকেত।

যুগান্তর: অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে কার অভিনয় আপনার ভালো লাগে?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: ববিতা।

যুগান্তর: জীবিত একজন রাজনীতিবিদের নাম জানতে চাই, যাকে আপনি আদর্শ মনে করেন?
আনোয়ারা সৈয়দ হক: আমি রাজনীতি থেকে বহু দূরে থাকি।

যুগান্তর: দুই বাংলার সাহিত্যে তুলনা করলে বর্তমানে আমরা কোন বিভাগে এগিয়ে আর কোন বিভাগে পিছিয়ে আছি?

আনোয়ারা সৈয়দ হক: দুই বাংলার সাহিত্যে তুলনা করলে আমরা সবক্ষেত্রেই এগিয়ে আছি। আমাদের কবিতা, আমাদের কথাসাহিত্য- সবই নিজস্ব ইতিহাসের আলোয় উজ্জ্বল। 

আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের যে ইতিহাস সেটিই আমাদের সাহিত্যকে অনন্য করে তুলেছে, যা অন্য কারো সাহিত্যে বিরল। তবে পশ্চিমবাংলায়ও ভালো সাহিত্য হচ্ছে। তারা তাদের মতো করে ভালো লিখে যাচ্ছে।

যুগান্তর: একজন অগ্রজ ও একজন অনুজ লেখকের নাম জানতে চাই, যাদের আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।

আনোয়ারা সৈয়দ হক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও পিয়াস মজিদ।

যুগান্তর: এমন দুটো বইয়ের নাম জানতে চাই, যেগুলোকে আপনি অবশ্যপাঠ্য মনে করেন।

আনোয়ারা সৈয়দ হক: সৈয়দ শামসুল হকের গল্পের কলকব্জা, কবিতার কিমিয়া; আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘তুমি এখন বড় হচ্ছো’

যুগান্তর: গানে আছে প্রেম একবারই এসেছিল জীবনে। আপনার জীবনে প্রেম কতবার এসেছিল?

আনোয়ারা সৈয়দ হক: প্রেম তো নানাভাবে নানাবার এসেছিল। তবে সেটি খুচরো প্রেম। প্রকৃত প্রেম জীবনে একবারই এসেছিল।

যুগান্তর: প্রচলিত সমাজব্যবস্থার কোন বিষয়টি আপনার ভালো লাগে আর কোনটি খারাপ লাগে?

আনোয়ারা সৈয়দ হক: প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বাড়াবাড়ির দিকটি খারাপ লাগে। ধর্ম, সমাজনীতি ও রাজনীতি- সবকিছুর বাড়াবাড়ি বিপর্যয় ডেকে আনে। আর ভালো লাগে আমাদের উৎসবমুখর মানসিকতা।

যুগান্তর: লেখক না হলে আর কী হতে চাইতেন?

আনোয়ারা সৈয়দ হক: লেখক না হলে লেখকই হতে চাইতাম। ছোটবেলা থেকে আমার লেখালেখির প্রতি ঝোঁক। অনেকে মনে করেন, সৈয়দ হকের প্রভাবে হয়তো আমি লেখালেখি করেছি। 

তাদের ধারণা ভুল। আমার আর সৈয়দ শামসুল হকের লেখা পাশাপাশি রেখে পড়লে বোঝা যাবে, আমার লেখার ধরন আলাদা, ভাষাও আলাদা। আমি স্বকীয়তা বজায় রেখেই লিখে যাচ্ছি।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম