Logo
Logo
×

সাহিত্য

পশ্চিমবঙ্গের বই বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মার্কেটিং হয়

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২০, ০৩:৩১ এএম

পশ্চিমবঙ্গের বই বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মার্কেটিং হয়

মোহিত কামাল। কথাসাহিত্যিক, মনোশিক্ষাবিদ। বাংলা একাডেমি ফেলো। সম্পাদক- শব্দঘর। সদস্য, জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি- কোভিড১৯। 

সাবেক একাডেমিক কোর্স ডিরেক্টর- এমডি রেসিডেন্সি, সাইকিয়াট্রি (এনআইএমএই), সাবেক পরিচালক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট।

যুগান্তর : এই মহামারি সময়ে কী পড়ছেন, কী লিখছেন ?

মোহিত কামাল: শহীদুল জহিরকে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করছি। অল্প অল্প করে পড়ছি ‘শহীদুল জহির উপন্যাস সমগ্র’।

‘আমার দেখা নয়াচীন' লেখক শেখ মুজিবুর রহমানের এ বইটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। এটিও টেবিলে শোভা পাচ্ছে। অল্প অল্প করে পড়ে যাচ্ছি, অলস সময় কাটছে এসব বইয়ের শব্দরথে চড়ে।

সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ‘সেরা ৫০টি গল্প’ (দে'জ পাবলিশিং ২০১৭) এবং ফারহানা আজম অনূদিত নাওয়াল আল সাদাবি’র ‘শূন্য বিন্দুতে নারী’ ( প্রথমা ২০২০) পড়ে শেষ করে ফেলেছি। 

সাদাবি আরব অঞ্চলের 'সিমন দো বোভোয়া' নামে পরিচিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক। আর প্রমিত হোসেন অনূদিত অরুন্ধতী রায়ের ‘দ্য মিনিস্ট্র অফ আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ (অন্যধারা ২০১৮) ধুলোবালি ঝেড়ে ফ্ল্যাপ আর ভূমিকা পড়ে রেখেছি টেবিলে। 

আকারে বড় হওয়ায় এখনও ভেতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছি না। তবে নিশ্চিত সাহস পাব, তারপর ঢুকে যাব, এ বিখ্যাত উপন্যাসটির ভেতর।

বিশ্বের কোথায় কী কী রিসার্চ হচেছ তাও পড়তে হচ্ছে করোনাকালে। জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির-কোভিড১৯-এর একজন সদস্য হিসেবে আপডেট থাকার জন্য এ পড়াশোনা। সব মিলিয়ে শোবার ঘরে বন্দি থাকলেও সময় কীভাবে চলে যাচ্ছে, টের পাচ্ছি না।

লিখছিও। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গল্প লিখেছি দুটো। কথাসহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সম্পাদনায় অন্যপ্রকাশ থেকে বের হবে একটি গল্প-সংকলন। বাংলা একাডেমি থেকেও। দুটো গল্প জমা দেওয়া হয়ে গেছে দুই সম্পাদক বরাবর। 

আর উপন্যাসও লিখছি-‘করোনার ডানা’। নামটার পরিবর্তন করতে পারি- ‘করোনার পাখা’। প্রায় বিশ হাজার শব্দ লেখা হয়েছে চলমান আছে লেখা। 

ফেসবুকে গল্প, টুকরো গল্প, অনুগল্প লিখছি। বিভিন্ন পত্রিকায় তা প্রকাশিত হচ্ছে। নতুন বিষয় হলো, সেই সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে লিখেছিলাম ছড়া- দাদাভাই পরিচালিত ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরে। 

এতযুগ পর আবার করোনা নিয়ে একটা ছড়া পাঠিয়েছি ওই পাতায়। ‘বাঘের থাবায় করোনা’। কিশোর উপযোগী মনে করলে বর্তমান সম্পাদক তা ছাপতেও পারেন।

যুগান্তর: করোনা পরবর্তী পৃথিবীর মানুষের কী ধরনের মানসিক পরিবর্তন হতে পারে?

মোহিত কামাল: আমরা দেখেছি, প্রকৃতি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে কী হিংস্র আচরণ করেছি আমরা। কতটুকু সাম্রাজ্যবাদী ছিলাম আমরা। একদেশ আরেক দেশের ওপর কর্তৃত্ব করার কী মহামারি-উল্লাস ছিল আমাদের ভেতর। 

কত নির্মম, আর পাষণ্ড আমরা, দেখেছি। নিজেদের আবিষ্কার করেছি। দেখেশুনে প্রশ্ন করেছি এত অমানবিক হতে পারি আমরা? হা হা করছি। করোনা পরবর্তীকালে সব হাহাকারের কথা ভুলে যাব। 

সব ভালো উপলব্ধির কথা ভুলে যাব। কী কী ভুল করেছি, জেনেও পরবর্তীকালে আবার সে ভুল করব। আবার হিংস্র হব। পৈশাচিক উল্লাস করব। আবার আমরা অপরাধ করব। প্রতিহিংসায় ডুবে যাব। আবার একে অন্যের ক্ষতি করার প্রণোদনায় লাফিয়ে লাফিয়ে উঠব। অন্যকে হেয় করার, ছোট করার উন্মাদনায় মেতে উঠব। 

অন্যের সফলতায় ঈর্ষাকাতর হয়ে তাকে নানাভাবে নাজেহাল করার চেষ্টা করব। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অব সলিটিউড’-এর মাকোন্দো গ্রামের মানুষের ভুলে যাওয়া রোগের মতো রোগে আক্রান্ত হব। নতুন বোধ তখন ভেসে যাবে। ভুলে গিয়ে আবার পূর্ণ দানবীয় সত্তা ফিরে পাব। 

এ পর্যন্ত ছাব্বিশ শ'র বেশি মানুষ মারা গেছেন। তাদের কথা ভুলে যাব। ৭২ জন চিকিৎসক সেবা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, ভুলে যাব সব কথা। চিকিৎসকদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে গালাগাল দিব। সচিবসহ প্রশাসনের, পুলিশের, র্যাবের, ব্যাংকার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক মারা গেছেন। সবার কথা ভুলে যাব। 

সাহিত্যের মাঠে কারও বই না-পড়ে তাকে বাজারে ন্যাংটো করে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। ‘অমুকে কোনো লেখকই না’ বলে তাকে বুড়িগঙ্গায় ছুঁড়ে দেব। আবার আমাদের হিংস্র প্রবৃত্তি, আণবিক শক্তি লাভ করে আরও বিধ্বংসী হবে।

অন্যদিকে করোনার বিধ্বংসী সহিংসতা নিজ চোখে যারা দেখেছেন, স্বজন, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব হারিয়েছেন কিংবা অর্থসংকটে ডুবে গেছেন বা চাকরি খুইয়ে পথে বসে গেছেন অথবা ব্যবসায় ভয়াবহ ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন, তারা মানসিক সমস্যা/রোগে আক্রান্ত হয়ে যাব। 

বিষণ্নতা , উদ্বেগ, অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার ধরনের রোগশোকে ভুগতে থাকব। আত্মহত্যার মতো বিধ্বংসী মনোবৃত্তিও চেপে বসতে পারে গুরুতর সংকটে ডুবে যাওয়া বিষণ্নরোগীদের মাথায়।

যুগান্তর: বিশ্বসাহিত্যের প্রেক্ষিতে বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অবস্থান কেমন?

মোহিত কামাল: বিশ্বসাহিত্যের সংজ্ঞা কী?এর সীমানা কতটুকু প্রসারিত? আদৌ কি কোনো সীমা-পরিসীমা আছে বিশ্বসাহিত্যের? 

সেই সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের অংশীদার যা তার দেশে শ্রেষ্ঠ, দেশের কথা বলে, মানুষের কথা বলে, মানুষের যাপিতজীবনকে খুঁড়ে খুঁড়ে বের করে, জীবনের কলব্জা খুলে খুলে জীবনকে তুলে ধরে- সমাজের কথা বলে, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচার আর বিচারহীনতার কথা বলে। 

ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা বলে। কেবল আমেরিকা, ইউরোপ থেকে প্রকাশিত হলেই তা বিশ্বসাহিত্য হয়ে যায় না। আমাদের ইংরেজি অনুবাদকদের চোখ ফেরাতে হবে, 'পোকামাকড়ের ঘরবসতি’র আর ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’র দিকে। 

চোখ ফেরাতে হবে পতেঙ্গা উপকূলের জেলেদের জীবন নিয়ে লেখা ‘জলপুত্র’ আর 'দহনকাল'র দিকে। গ্রামীণ সমাজের চিত্রের ভেতরের চিত্র তুলে ধরা উপন্যাস 'নূরজাহান'র দিকে। ‘আগুন পাখি’র দেশ বিভাগের যন্ত্রণাময় জীবনঘনিষ্ঠতার দিকে।

নামীদামী পুরস্কারের পেছনের রাজনীতির মুখোশ খুলে গেলে এসব উপন্যাসও বিশ্ব মানদণ্ডে শীর্ষে পৌঁছে যাবে।

সৈয়দ শামসুল হকের ‘পরানের গহীন ভেতর’-এর মতো আর কোনো কবিতা সৃজিত হতে পারে বিশ্বে? না। আর স্বপ্নময় চক্রবর্তীর ‘হলদে গোলাপ’-এর মতো কোনো উপন্যাস বিশ্বে রচিত হতে পারে বলে ভাবতে চাই না। 

এরকম সৃষ্টি পৃথিবীর দ্বিতীয় কোনো লেখকের হাত দিয়ে বেরোতে পারে, ভাবতে পারি না। আর তাই বলবো বিশ্বসাহিত্যের প্রেক্ষিতে বাংলাসাহিত্য পিছিয়ে নেই। সমান তালে আছে স্বর্ণ শিখড়ে। বিশ্ব মূল্যায়ন না করলেও আমরা তা করব। আমাদের মাথার মুকুট করে রাখব এসব গ্রন্থ। 

কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ এবং এ সময়ের কবি কামাল চৌধুরীকেও আমরা উঁচুতে রাখব। আমাদের সাহিত্যের ভালো অনুবাদ তুলে ধরতে হবে। বিশ্বদরবারে তুলে ধরার ব্যর্থতায় ডুবে আছি আমরা।

যুগান্তর: বর্তমানে বাংলাদেশের সাহিত্যে ভালো লেখকের অভাব নাকি ভালো মানের পাঠকের অভাব?

মোহিত কামাল: লিখতে লিখতে ভালো লেখক হতে হয়। ভালো লেখক হিসেবে কেউ জন্মায় না। সব ভালো লেখকের সব লেখা সেরা নয়, ভালো নাও হতে পারে তাঁর কোনো কোনো সৃষ্টি। 

তারপরও বিশেষ কোনো বইয়ের জন্য ‘ভালো লেখক’ উপাধী পেয়ে যান তাঁরা। লেখক লেখকই। তাঁর ভালো লেখাটা আবিষ্কার করার দায়িত্ব পাঠকের। সমালোচক, সম্পাদকের। একজন লেখক বহুমাত্রিক লেখা লিখতে পারেন। ভালো-খারাপ মন্তব্য করার আগে তাকে সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। 

একজন ইমদাদুল হক মিলনকে ‘ভালোবাসার সুখ-দুঃখ’ দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে। তাঁকে মূল্যায়ন করতে হলে তাঁর সব ধরনের লেখা পড়ে বিচার করতে হবে। পড়তে হবে 'অধিবাস', ‘নূরজাহান'; কিংবা ‘বাঁকাজল’র মতো উপন্যাস। তারপর বলার অধিকার পাব তিনি ভালো না খারাপ। 

লেখকের সব পড়ে যদি কোনো পাঠক মনে করেন, উনি ভালো লেখক নন। মেনে নেব। যদি মনে করেন ভালো লেখক, তাও। না-পড়ে যেন আমরা বিচার না করি। দুঃখের বিষয় এ প্রবণতা, এ সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে প্রবল, ধ্বংসাত্মক। 

আমি বলতে চাই, অবশ্যই ভালো লেখকের ঘাটতি নেই বাংলাসাহিত্যে। ভালো পাঠকেরও। ঘাটতি আছে বিচারে, মূল্যায়নে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষুদ্রতায়। সেটা পাল্টাতে হবে।

যুগান্তর: যাদের লেখা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে জীবিত এমন তিনজন লেখকের নাম।

মোহিত কামাল: কঠিন প্রশ্ন। অনেকের লেখা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। লেখক নিজের লেখা ছাড়া অন্যের লেখা তেমন পড়েন না। মূল্যায়নও করতে জানেন না। নিজেকেই শ্রেষ্ঠ মনে করেন। 

সেই আত্মবিশ্বাসের জোরে, গায়ের জোরে কথা বলেন। অন্যের সৃষ্টিকে অবলীলায় উড়িয়ে দিতে দ্বিধা করেন না। তাই বলব পাঠকের মূল্যায়নটা জরুরি। 

পাঠক হিসেবে বলব, সেলিনা হোসেন, স্বপ্নময় চক্রবর্তী ও দীপেন চক্রবর্তীর কথা। ওদের লেখা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করি। আরও অনেক লেখকই রয়েছেন এ কাতারে। 

আনিসুল হকের রাজনীতি বিষয়ক সিরিজ উপন্যাস- 'যারা ভোর এনেছিল','উষার দুয়ারে' 'আলো-আঁধারের যাত্রী','এই পথে আলো জ্বেলে' এসব।

যুগান্তর: লেখক হিসেবে বহুল আলোচিত কিন্তু আপনার বিবেচনায় এদের নিয়ে এতটা আলোচনা হওয়ার কিছু নেই এমন তিনজন লেখকের নাম।

মোহিত কামাল: কী দরকার তাদের নাম উল্লেখ করার? তারা, আলোচিত হয়েছেন, এটা তাদের অপরাধ নয়। হয়ে গেছেন, ব্যাস। লেখার মান ভালো না হলে এমনিতে পড়ে যাবেন। 

এখানে নাম বললে, পত্রিকার পাতায় তাদের নাম ছাপালে, তা হবে এক ধরনের শাস্তি। স্যাডিজম, স্যাডিস্টিক আচরণ। এ ধরনের শাস্তি দেওয়া বা অপমান করার অধিকার কোনো লেখকের থাকা উচিত নয়, পত্রিকার পাতার সম্পাদকেরও নয়।

যুগান্তর: এখানে গুরুত্বপূর্ণ লেখকরা কী কম আলোচিত? যদি সেটা হয়, তাহলে কী কী কারণে হচ্ছে? এমন তিনটি সমস্যার কথা উল্লেখ করুন

মোহিত কামাল: গুরুত্বপূর্ণ লেখকেরা কম আলোচিত- কথাটা মানি না। তাঁরা হয়ত সাধারণ পাঠকের কাছে কম পঠিত। কিন্তু সাহিত্যমহলে, সাহিত্য সম্পাদকদের কাছে তাঁরা বেশি সম্মানিত, বেশি আলোচিত। ইতিহাস তাঁদের খুঁজে বের করে সম্মান দেয়। 

যারা গুরুত্বপর্ণ নয়, তারা এক সময়, বেশি আলোচিত হলেও, ঝরে যান। যদি সিরিয়াস পাঠকের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তবে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে। গুরুত্বপূর্ণদের মর্যাদা বাড়বে তখনই।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের রচনা বেশি পাঠ করেন অনুজ-অগ্রজ লেখরাই, পাঠক হিসেবে। লেখক-পাঠকই বেশি। লেখকরাই গুরুত্বপূর্ণদের বই কেনেন। পড়েন। বই নিয়ে আলোচনা করেন। লেখকদের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণরা বেশি বেঁচে থাকেন।

যুগান্তর: সাহিত্য থেকে হওয়া আপনার দেখা সেরা সিনেমা।

মোহিত কামাল: এখন সিনেমা দেখা হয় না। তবে 'পথের পাঁচালি' কিংবা ‘তিতাস একটি নদীর নাম'র কথা মনে পড়ছে। 'সূর্যদীঘল বাড়ি'র জয়গুন চরিত্র এখনও জীবন্ত।

'পথের পাঁচালি'- একদিকে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের উপন্যাস, আর সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় তার চলচ্চিত্র রূপ- অপু-দূর্গা, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অসাধারণ চরিত্র। মনে ছাপ মেরে রেখেছে ওদের প্রাণবন্ত অভিনয়। 

‘তিতাস একটি নদীর নাম’ অদ্বৈত মল্লবর্মনের উপন্যাস আর ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনা। দুইয়ের সমন্বয়ে এক অসাধারণ সৃষ্টি। আবু ইসহাকের উপন্যাস সূর্যদীঘল বাড়ি, অসাধারণ আরেক জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাস। 

শেখ নিয়ামত আলী এবং মশিউদ্দিন সরকারের যৌথ পরিচালনায় উপন্যাসটি এ জেনারেশন থেকে জেনারেশন ক্লাসিক হিসেবে মর্যাদা পেয়ে আসছে।

যুগান্তর: অভিনয় ভালো লাগে জীবিত এমন একজনের নাম বলুন।

মোহিত কামাল: আসাদুজ্জামান নূর

যুগান্তর: এমন একজন নায়িকার কথা বলুন যার প্রেমে পড়তে চান।

মোহিত কামাল: ক্যাটরিনা কাইফ

যুগান্তর: জীবিত একজন আদর্শ রাজনীতিবিদের নাম বলুন।

মোহিত কামাল: শেখ হাসিনা

যুগান্তর: দুই বাংলার সাহিত্যে তুলনা করলে বর্তমানে আমরা কোন বিভাগে এগিয়ে কোন বিভাগে পিছিয়ে?

মোহিত কামাল: বাংলা সাহিত্যের রাজধানী হবে বাংলাদেশ। হয়েও গেছে। আমরা পিছিয়ে নেই, কোনো বিভাগেই নয়। পিছিয়ে আছি বই বিপণনে। ওদের বই আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে মার্কেটিং হয়। আর আমাদের বই ওদের দেশে হয় না। পার্থক্য এখানে স্পষ্ট।

যুগান্তর: একজন অগ্রজ এবং একজন অনুজ লেখকের নাম বলুন যাঁরা বাংলা সাহিত্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মোহিত কামাল: অগ্রজদের মধ্যে আমার প্রিয় সৈয়দ শামসুল হক। অনুজদের মধ্যে আশান উজ জামান। একজন করে নাম বলতে বলা- কঠিন পরীক্ষা। কঠিনকে সহজ করে বলা আরও কঠিন। 

এই লিস্টে অনেকেই আছেন। আছে। যুগান্তরের প্রশ্নের শেকলে বন্দি হওয়ার কারণে তাঁদের নাম উচ্চারণ করতে পারলাম না। এটা সীমাবদ্ধতা নয়, সম্পাদকের কৌশল হতে পারে।

যুগান্তর: এমন দুটো বই, যা অবশ্যই পড়া উচিত বলে পাঠককে পরামর্শ দেবেন।

মোহিত কামাল: শেখ মুজিবুর রহমানের 'কারাগারের রোজনামচা'। স্বপ্নময় চক্রবর্তীর ‘হলদে গোলাপ’। এটাও কঠিন প্রশ্ন। উত্তর সহজ।

যুগান্তর: লেখক না হলে কী হতে চাইতেন।

মোহিত কামাল: ছোটবেলায় চেয়েছিলাম আমি একজন ‘জগদীশ চন্দ্র বসু’ হব। তিনি ছিলেন লেখক ও বিজ্ঞানী। তার সেই দুই সত্তা কি ধারণ করতে পেরেছি? আমার পাঠকেরা কী বলেন? আমার জীবনের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে? ভাবতে পারলে ভালো লাগবে।

যুগান্তর: গানে আছে ‘প্রেম একবার এসেছিল জীবনে’- আপনার জীবনে কতবার এসেছিল?

মোহিত কামাল: একবারই। তিনি আমার স্ত্রী। তবে কৈশোরে অনেককে ভালো লেগেছিল। স্বীকার করতেই হবে।

যুগান্তর: আপনার সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়, সবচেয়ে খারাপ লাগার বিষয়।

মোহিত কামাল: নানা বিষয়ে লেখালেখি করেছি- শিশুতোষ, কিশোর উপন্যাস, গল্প-উপন্যাস, মনস্তত্ত্ব, গবেষণা। ৫৪টি বইয়ের মধ্যে ৭টি আমার সাবজেক্টের আর বাকি ৪৭টি কথাসাহিত্য। 

১১টি শিশুকিশোর উপন্যাস। বাকী ৩৬টির ১০টি গল্পগ্রন্থ, ২৬টি উপন্যাস। সম্পাদিত গল্পগ্রন্থ তিনটি। এরপরও কেউ যদি বলেন, 'ওঃ। মোহিত কামাল! উনি বিজ্ঞান লেখক।' 

কষ্ট পাই। কেউ যদি কোনো বই না-পড়ে ওই বই নিয়ে গীবত করেন, কষ্ট পাই। আমার বই নিয়ে নয় কেবল, অন্যের বই নিয়েও একই কথা বলতে চাই। কেউ যদি আমার বইটি পড়ে বলেন কিচ্ছু হয়নি, আমি কষ্ট পাই না, আনন্দিত হই। কারণ তিনি বইটি পড়েছেন।

সৃষ্টিশীল কোনো নতুন/উঠতি লেখক/কবিকে যদি কোনো ক্ষমতাধর সম্পাদক নিজেদের গোষ্ঠীবদ্ধতার কারণে জায়গা দিতে না চান, বা অবমাননাকর অবমূল্যায়ন করতে দেখি, কষ্ট পাই। ভীষণ। 


 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম