সঞ্চয়ের সহজ পদ্ধতি কাকিবো কী? কীভাবে কাজ করে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
সবাই চায় অর্থ সঞ্চয় করতে। কিন্তু অনেকেই চেয়েও এই কাজটি করতে পারে না। তবে কেউ কেউ আছেন যারা গুনে গুনে উপার্জনের অর্থ সঞ্চয়ের ভান্ডারে তুলতে পারেন। আবার কেউ আছেনে উপার্জনের কণামাত্র মাসের শেষে হাতে রাখতে পারেন না। উল্টো সেই অর্থ ব্যয় করার পরেও তাদের মনে হয়, আরও থাকলে ভালো হতো!
দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্তরা সঞ্চয়ের মূল্য বোঝেন না, তা কিন্তু নয়। বরং দেখা যাবে, তাদের অধিকাংশই টাকা জমানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। খরচ করার সময়ে আর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।
আচমকা এবং অনর্থক খরচ করার ওই অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব জাপানি সঞ্চয় পদ্ধতি ‘কাকিবো’র সাহায্যে। একশো বছরেরও বেশি পুরনো ওই নীতি শুধু খরচেই রাশ টানে না, পাশাপাশি অর্থের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীও বদলে দেয়।
কাকিবো কী?
‘কাকিবো’ শব্দটির আক্ষরিক অনুবাদ হল ‘সংসার খরচের খাতা’। যেমনটা ছোট থেকে হয়ত বাড়িতে দেখে বড় হয়েছেন অনেকেই। সে খাতায় মুদিখানার খরচ থেকে শুরু করে মাসের বাজারের খরচ, ওষুধের খরচ, দুধের খরচ, বাড়ির পরিচারিকার বেতন, সন্তানের পড়াশোনার খরচ সব কিছু নথিবদ্ধ করতেও দেখে থাকবেন।
কাকিবো তার নাম পেয়েছে সেই সংসার খরচের খাতা থেকেই। শুধু তা-ই নয়, হিসাব রাখার জন্য কাকিবো পদ্ধতিতে কলম এবং খাতাই ব্যবহার করতে বলা হয়। ১৯০৪ সালে সঞ্চয়ের ওই পদ্ধতির কথা বলছিলেন জাপানের প্রথম নারি সাংবাদিক হানি মোতোকো। তার যুক্তি ছিল, খাতা-কলমে অর্থব্যয়ের হিসাব রাখলে খরচ সম্পর্কে সচেতনতা অনেক বেশি বাড়ে। তবে কাকিবো সঞ্চয় পদ্ধতি শুধু খাতায়-কলমে খরচের কথাই লিখতে বলে না। জমানোর জন্য প্রতি মাসে নিজেকে চারটি প্রশ্নও করতে বলা হয় কাকিবো পদ্ধতিতে।
কাকিবোর চার প্রশ্ন
১। আমার কাছে কত টাকা আছে?
অর্থাৎ আপনার প্রতি মাসের বা বার্ষিক উপার্জন কত।
২। আমি কতটা জমাতে চাই?
আপনি প্রতি মাসে বা বছরে কত জমাবেন বলে স্থির করেছেন।
৩। আমি কতখানি খরচ করছি?
সাধারণত মাসে কোন কোন খাতে কতটা খরচ হয় আপনার, তার একটা তালিকা তৈরি করা।
৪। আরও ভালোভাবে সঞ্চয় করবেন কীভাবে?
কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে খরচ কমিয়ে আরও বেশি সঞ্চয় সম্ভব, তা দেখা।
কীভাবে কাকিবো সঞ্চয়ে সাহায্য করে
১। মনে থাকে: আধুনিক যুগে মাসের খরচপাতির হিসাব রাখার জন্য নানারকম অ্যাপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কাকিবো যেহেতু হাতে লিখে হিসাব করতে বলে, তাই কীভাবে কতটা খরচ হচ্ছে, তা অনেক গভীরভাবে মনে থেকে যায়।
২। চার রকমের খরচ: কাকিবোয় মাসের খরচকে চার ভাগে ভাগ করতে বলা হয়। ওই চার ভাগে খরচ ভাগ করে নিলে অপ্রয়োজনীয় খরচগুলোকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়—
বাঁচার জন্য জরুরি: খাবার, ওষুধ, ত্বকের পরিচর্যা, পারিপার্শ্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জিনিসপত্র, বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, ফোনের বিল ইত্যাদি।
বিকল্প খরচ: অর্থাৎ যা না হলে খুব অসুবিধা হবে না: মনোরঞ্জন, বাইরে রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া, কেনাকাটা ইত্যাদি।
সাংস্কৃতিক বা বৌদ্ধিক: বাঁচার জন্য আত্মোন্নতির প্রয়োজন। প্রয়োজন নিজের ভাবনায় শান দেওয়া। বই, শিল্প, গানবাজনা ইত্যাদির খরচ।
হঠাৎ প্রয়োজন: হঠাৎ কোনো অসুখ বাধলে বা বাড়িতে কিছু খারাপ হয়ে গেলে তার খরচও থাকে। সে সবের জন্যও আলাদা অর্থ সঞ্চয় করতে হবে।
৩। আবেগে ভেসে খরচ করায় নিয়ন্ত্রণ: হঠাৎ কিছু দেখে পছন্দ হয়ে গেলেই তা কিনে ফেলার মতো মানসিকতায় রাশ টানে কাকিবো। যেহেতু খরচের প্রতিটি খাত আগে থেকেই আলাদা করা থাকে, তাই অকারণ খরচের আগে ভাবতে হয়। তাতে হঠাৎ এটা সেটা কিনে ফেলার মানসিকতাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪। সঞ্চয়ে উৎসাহ দেয়: কাকিবোর মূল মন্ত্র হল খরচে অতিরিক্ত কড়াকড়ি না করেও সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা। শুধু তা-ই নয়, কাকিবো খরচের পরে জমানোর বদলে, সব রকম খরচের হিসাব কষে নিয়ে বাকিটা জমানোর কথা বলে। এই পদ্ধতিতে সঞ্চয়ের বজ্রআঁটুনি থাকে না বলেই জমাতে বেশি উৎসাহিত হন মানুষ।