সুন্দর এই পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষই দীর্ঘায়ু পেতে চান। নিজেকে দীর্ঘায়ু মানুষ কি না করে। সঠিক সময়ে ঠিকমতো খাবার গ্রহণ ও ব্যায়াম, কি না করছে সবাই। তবে, অজান্তেই প্রতিদিনকার খাবার খেয়ে মানুষ তার আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
প্রতিবেদনটিতে ভারতীয় গণামাধ্যমটি জানিয়েছে, শরীর সুস্থ ও ফিট রাখতে আমরা প্রতিদিন খাবার গ্রহণ করছি। এর মধ্যে কিছু খাবার আমাদের শরীরকে পুষ্টি ও শক্তি দিচ্ছে। অন্যদিকে, কিছু খাবার নীরবে দেহের ক্ষতি করছে। এসব খারাপ খাদ্য মানুষের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এমনকি, আয়ুও কমিয়ে দিচ্ছে।
যে ছয় খাবার আমাদের আয়ু কমাচ্ছে
প্রক্রিয়াজাত মাংস
প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন চিকেন সালামি ও সসেজ খেতে খুবই সুস্বাদু। এসব মাংসে বিভিন্ন ফ্লেভারও দেওয়া হয়। তাই তো ছোট থেকে বড় সবার পছন্দ এসব মাংস। তবে, প্রক্রিয়াজাত হওয়া এসব মাংস দেহের জন্য ক্ষতিকর।
দীর্ঘদিন মাংসের স্বাদ রাখতে মাংস প্রক্রিয়াজাতের সময় নাইট্রেট এবং নাইট্রাইট রাসায়নিক দেওয়া হয়। এই রাসায়নিক ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে, বিশেষ করে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের।
২০১০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে বলা হয়, প্রক্রিয়াজাত মাংস মানবদেহেরে জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং তা আয়ু কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া এসব মাংসে চর্বি ও সোডিয়াম থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
চিনিযুক্ত পানীয়
সফট ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস ও অন্যান্য চিনিযুক্ত পানীয় আমাদের দেহে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। অতিরিক্ত মাত্রায় চিনিযুক্ত পানীয় পানে আমদের ওজন বেড়ে যায়। এ ছাড়া বেশি চিনি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধী হয়ে ওঠে যা অগ্ন্যাশয় কোষগুলোকে আরও গ্লুকোজ গ্রহণে বাধ্য করে।
অতিরিক্ত চিনির ফলে আমাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ফুসফুসে বিভিন্ন রোগ দানা বাঁধে। ২০২১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, চিনিযুক্ত পানীয় এর জন্য প্রতিবছর এক লাখ ৮৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
পরিশোধিত শস্য
সাদা রুটি, সাদা চাল ও পাস্তার মতো খাবার প্রতিদিনই আমাদের খাদ্যতালিকায় থাকে। তবে, এসব খাবার এতটাই পরিশোধিত যে শস্যের কোনো প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল থাকে না। এসব পুষ্টিহীন খাদ্য উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। পাশাপাশি স্থূলতা ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসও হয় এসব খাবারে।
ভাজা খাবার
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রাইড চিকেন ও পেঁয়াজ ভাজির মতো খাবারগুলো মুখোরোচক। তবে, এসব খাবার আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার কোলেস্টেরলের জন্য দায়ী। এছাড়া হৃদরোগসহ স্টোকের জন্য তেলে ভাজা খাবার অনেকাংশে দায়ী।
এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন তেলে ভাজা খাবার আমাদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। এসব খাবারে পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি ক্ষতি হয়।
প্যাকেটজাত খাবার
চিপস, ক্র্যাকার্সের মতো স্ন্যাকস জাতীয় প্যাকেটজাত খাবার মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এগুলো প্যাকেটজাত করার সময় মাত্রাতিরক্ত প্রিজারভেটিভ ও লবণ দেওয়া হয়। এসব স্ন্যাকস কিডনিতে সমস্যা ডেকে নিয়ে আসে। পাশাপাশি মুখের স্বাদ নষ্ট করে এসব খাবার।
কৃত্রিম মিষ্টি
অতিরিক্ত চিনিতে মানুষের ক্ষতি হয় এমন চিন্তায় স্বাস্থ্যসচেতন অনেকে এখন চিনি খান না। তবে, চিনির মতো মিষ্টি পেতে কৃত্রিম মিষ্টিতে ঝুঁকছেন তারা। কৃত্রিম মিষ্টি হলো চিনির বিকল্প, যা রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত না করে খাবার ও পানীয়কে মিষ্টি করতে ব্যবহৃত হয়।
তবে, এসব কৃত্রিম মিষ্টিও আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। এই কৃত্রিম চিনি আমাদের অন্ত্রে সমস্যা করে। শরীরে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করে যা মানুষকে মিষ্টিজাতীয় খাবারে আকৃষ্ট করে।