এক সিগারেট জীবন থেকে ২০ মিনিট কেড়ে নিচ্ছে: গবেষণা
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
![এক সিগারেট জীবন থেকে ২০ মিনিট কেড়ে নিচ্ছে: গবেষণা](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/01/02/Untitled-1-677658b466a19.jpg)
ফাইল ছবি
‘খাইখাই’ কবিতায় সুকুমার রায় লিখেছিলেন, ‘জ্যাঠা ছেলে বিড়ি খায় কান ধরে টানিও’। জ্যাঠা ছেলে যদি সত্যিই বিড়ি বা সিগারেট খায়, তবে কান ধরে তো টানাই উচিত। কারণ প্রতিটি সিগারেট নাকি জীবনের গড় আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে ২০ মিনিট করে। নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে এ হিসাবটা আবার একটু ভিন্ন।
ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের সমীক্ষা বলছে— সুখটানেই যত বিপদ। একটি আস্ত সিগারেট টেনে শেষে করলে একজন নারীর জীবন থেকে চলে যাবে কড়কড়ে ২২ মিনিট, আর পুরুষের ক্ষেত্রে ১৭ মিনিট। অর্থাৎ দিনে যদি কেউ কম করেও ১০টি সিগারেটে টান দেন, তা হলে তো সর্বনাশ!
নবম শতকে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকায় ধূমপানের প্রবণতা বাড়তে থাকে। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা হয়ে ইউরোপে। সেই সময় ধূমপান করতে গাছের পাতা ব্যবহার করা হতো। স্পেনের বাসিন্দারা ভুট্টার খোসা ব্যবহার করত। সপ্তদশ শতকে প্রথম কাগজের ব্যবহার শুরু হয়। আর এখন তো বিশ্বজুড়েই সিগারেটের রমরমা। আইনকানুন ও নিয়মনীতি চালু করেও ধূমপানের আকর্ষণ কমানো যায়নি। ‘কান টেনেও’ সিগারেটের নেশা কমানো যায়নি বিন্দুমাত্র।
ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের গবেষক সারা জ্যাকসন জানিয়েছেন, ২০০৬ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ ধূমপায়ী। এখন এই সংখ্যাটা বেড়েছে বই কমেনি। ভারতে ৪২ শতাংশ পুরুষ ও ১৪ শতাংশ নারী ধূমপান করেন। এখানেও চমক আছে। সমীক্ষা বলছে, ১৩-১৫ বছর বয়সি অন্তত ৯ শতাংশ ছেলে ও ৭ শতাংশ মেয়ে নিয়মিত ধূমপান করেন।
তামাক সেবন করলে শরীরের যে ক্ষতি হয়, তা আলাদা করে বলার কিছু নেই। সিগারেটে সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ আছে। তামাক ছাড়াও আছে আর্সেনিক, ফরমালডিহাইড, সিসা, সায়ানাইড, ইথিলিন অক্সাইড, অ্যাসিট্যালডিহাইড, বুটাডিন, অ্যাক্রোলিন ইত্যাদি। সিগারেট ফুসফুস ক্যানসারের আশঙ্কা যেমন বাড়ায়, তেমনই সিওপিডির কারণও হয়ে ওঠে। আবার সিগারেট থেকে মুখ ও গলার ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে। আর এখন ক্ষতির তালিকায় জুড়ে গেছে আয়ু কমে যাওয়ার বিষয়টিও।
সিগারেটে টান দিলেন, আর আয়ু কমে গেল, তেমন কিন্তু নয়। আসল কারণটা হলো— সিগারেট নানা রোগের কারণ হতে পারে। যেমন ক্যানসার চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ধূমপান হার্টের অসুখের একটা মস্ত বড় কারণ। ধূমপান থেকে হাইপারটেনশন, পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজের আশঙ্কা বাড়ে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ধূমপান করলে ভ্রূণের ক্ষতি হয়। আবার ধূমপান যৌন অক্ষমতারও কারণ হতে পারে। নিকোটিন যখন শরীরে ঢোকে, তখন ধমনীর ভেতরের এন্ডোথেলিয়াম স্তরকে নষ্ট করে। এন্ডোথেলিয়াম হলো ধমনীর ভেতরের পাতলা একটি স্তর, যা রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। এই স্তরটি নষ্ট হলে ধমনীর ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। স্তরটি বেশি শক্ত হয়ে গেলে তখন হার্ট ব্লক হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। এসব কারণেই শরীরের বারোটা বেজে যায় এবং তখন হার্ট-অ্যাটাক, স্ট্রোক থেকে ক্যানসার— সব জটিল ও প্রাণঘাতী অসুখই হানা দিতে থাকে। ঘুরিয়ে বললে, আয়ু সত্যিই কমতে শুরু করে।