Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয়

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩০ পিএম

বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয়

ছবি: সংগৃহীত

বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড ও হেপাটাইটিসের মতো রোগের সংক্রমণের শঙ্কা বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোকে। এমন ক্রমবর্ধমান সংকটে প্রতিটি মহল্লা বা পাড়া, পরিবার, এমনকি ব্যক্তি পর্যায় থেকেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

পানি ফুটানো: পানি থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য পরজীবীর মতো ক্ষতিকারক রোগজীবাণু নির্মূল করার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে পানি ফুটানো। এর জন্য কমপক্ষে এক মিনিট থেকে সর্বোচ্চ তিন মিনিট পর্যন্ত পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করা যাবে। ফোটানোর বিকল্প হিসেবে পানি পরিশোধন ট্যাবলেট বা পানির ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিই সবচেয়ে কার্যকরীভাবে জীবাণু নির্মূল হয়। বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বন্যার পর ডায়রিয়া বা কলেরার সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়।

বন্যার পানি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা: পয়:নিষ্কাশন, রাসায়নিক পদার্থ এবং অন্যান্য আবর্জনার কারণে বন্যার পানি দূষিত হয়। প্লাবিত রাস্তাঘাটে যাতায়াতের সময় এবং ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়লে হরহামেশাই মানুষ এই দূষিত পানির সংস্পর্শে আসে। আর এ থেকেই তৈরি হয় নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। 

বন্যার পানিতে থাকে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু, যা বিভিন্নভাবে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই সংস্পর্শ যতটা সম্ভব কমানোর জন্য পানিরোধী বুট এবং গ্লাভ্স পরা যেতে পারে। 

সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে সংস্পর্শে যাওয়া শরীরের স্থানটি ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই সাবধানতা ত্বকের সংক্রমণের মতো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।

ঘরবাড়ির মেঝে জীবাণুমুক্ত করা: অতিরিক্ত বন্যায় দূষিত পানি বাড়ির আঙিনাসহ ঘরের ভেতরে ঢুকে  রোগজীবাণু ছড়ায়। গ্রামের ঘরবাড়ি এবং শহরের নিচ তলার বারান্দা ও ঘরগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাই বাড়ির চারপাশসহ ঘরের মেঝে, ফার্নিচার, দরজার হাতল এবং পানির কলগুলো জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক। এর জন্য এক গ্যালন পানিতে এক কাপ পরিমাণ ব্লিচ মিশিয়ে তৈরিকৃত দ্রবণ দিয়ে স্থানগুলো মুছতে হবে। পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার আগে দ্রবণটিকে কমপক্ষে ১০ মিনিটের জন্য ভালভাবে মিশতে দিতে হবে। এ সময় হাতে ডিস্পোজেবল গ্লাভস পরতে হবে, আর ধোয়া-মোছার সময় জানালা খুলে দিয়ে ঘরে বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

শুকনো খাবার, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী সংরক্ষণ: টিনজাত এবং শুকনো খাবারের মতো অপচনশীল খাবার বা যেগুলোর জন্য খুব বেশি রান্নার প্রয়োজন হয় না, এমন খাবার জমিয়ে রাখতে হবে। পানীয় ও স্যানিটেশনের প্রয়োজনে পর্যাপ্ত পানি সঞ্চয় করতে হবে। সঞ্চয়ের তালিকায় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দরকারি প্রতিটি ওষুধও রাখতে হবে।

বর্জ্য অপসারণ: নর্দমা এবং বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সামগ্রী বা ধ্বংসস্তূপের ময়লা-আবর্জনার যথাযথ নিষ্পত্তি দরকার। বর্জ্যের জন্য নির্দিষ্ট বিন ব্যবহার এবং তা সময়মতো অপসারণ করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। ধোঁয়া ছড়াতে পারে এমন পোড়া উপকরণগুলোর নিষ্পত্তির সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। 

সিটি করপোরেশনের নিয়োজিত আবর্জনা সংগ্রহকারী কর্মীরা যথাসম্ভব দ্রুত বর্জ্য অপসারণে সক্রিয় থাকছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই বিষয়ে এলাকার সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কেননা অব্যবস্থাপনার শিকার হওয়া বর্জ্য হেপাটাইটিস-ই এবং গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।

বৃষ্টির পানি কাজে লাগানো: খোলা জায়গায় মুক্তভাবে পড়ন্ত বৃষ্টির পানি সরাসরি একটি পরিষ্কার পাত্রে সংগ্রহ করা যায়। যেখানে এই সুযোগ নেই, সেখানে পানি সংগ্রহের পর তা একটি পরিষ্কার কাপড়ের মাধ্যমে ফিল্টার করতে হবে। অতঃপর কমপক্ষে এক মিনিট সিদ্ধ করে যাবতীয় রোগজীবাণু মেরে ফেলতে হবে।

ঘরে উন্মুক্ত বায়ু চলাচল বজায় রাখা: বন্যা বা ভারি বৃষ্টিপরবর্তী সময়ে ঘরের বদ্ধ স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর করতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের পরিবেশ থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে দুর্বল ফুসফুস বা শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের এটি স্বাস্থ্য জটিলতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। ঘরের আর্দ্রতা কমাতে বৈদ্যুতিক ফ্যান এবং ডিহিউমিডিফায়ারও ব্যবহার করা যায়। এ সময় ঘরের ভেতর দীর্ঘক্ষণ যাবৎ কোনো ভেজা কাপড় না রাখাই ভালো। 

পানি সরবরাহ লাইনের ছিদ্র দ্রুত মেরামত করা: পানি দূষণ রোধের পাশাপাশি যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বাড়ির পানি সরবরাহের লাইনে কোনো ছিদ্র আছে কিনা সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। ছাদে পানির ট্যাংক ও এর সঙ্গে সংযুক্ত পাইপ, এবং বাড়ির কলগুলোর কোনোটিতে ফাটল বা ছিদ্র আছে কিনা তা সুক্ষ্মভাবে যাচাই করতে হবে। পানিরোধী সিল্যান্ট বা প্যাচের মতো উপযুক্ত উপকরণ ব্যবহার করে এই লিকগুলোকে দ্রুত মেরামত করে ফেলতে হবে।

ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ওআরএস) ব্যবহার: বন্যার মতো দুর্যোগের মুহূর্তে ডায়রিয়া এবং অন্যান্য অসুস্থতার কারণে পানি শূন্যতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এ সমস্যা নিরসণের দারুণ একটি উপায় হতে পারে ওআরএস ব্যবহার। এটি ডিহাইড্রেশন-সম্পর্কিত জটিলতা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।

টিকা ও অন্যান্য চিকিৎসাসেবা: বন্যা-আক্রান্ত এলাকাবাসীর প্রত্যেকের কলেরা, টাইফয়েড এবং হেপাটাইটিস-এ’র মতো পানিবাহিত রোগের লক্ষণ অবিলম্বে টেস্ট করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে শিশু ও বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জরুরি টিকা ও অন্যান্য পথ্য অনুসরণের ক্ষেত্রে কোনোভাবে দেরি করা যাবে না।

পানিবন্দি অবস্থায় দূর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরগুলো সংগ্রহে রাখতে হবে। অতঃপর রোগের শনাক্তকরণ, টিকাসহ অন্যান্য চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করতে হবে।

বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি কমাতে এ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা জরুরি। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম