আল্ট্রাসনোগ্রাফির প্রয়োজনীয়তা
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফউল্লাহ
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ০৩:৫২ এএম
আল্ট্রাসনোগ্রাফি
সাউন্ড অর্থ শব্দ। কম্পমান বস্তু থেকে শব্দ উৎপন্ন হয়। শব্দ এক ধরনের শক্তি। আমরা শব্দ শুনতে পাই। যে কোনো উৎসে শব্দ উৎপন্ন হয়ে তা বাতাসে বা অন্য মাধ্যমের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঢেউ আকারে প্রবাহিত হতে থাকে। এ ঢেউ আমাদের কানে এসে পৌঁছলে আমরা শব্দ শুনতে পাই। কিন্তু সব শব্দই আমরা শুনতে পাই না।
শব্দ উৎপন্ন করার সময় কম্পমান বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে কতসংখ্যক কম্পনের সৃষ্টি করে, তার ওপর নির্ভর করে আমরা শব্দটি শুনতে পাব কিনা। প্রতি সেকেন্ডে একবার কম্পন হলে তার নাম এক হার্টজ (Hurty), এমন ২০ হার্টজ থেকে ২০ হাজার হার্টজ পর্যন্ত শব্দ আমরা শুনতে পাই।
শব্দের কম্পাঙ্ক প্রতি সেকেন্ডে ২০ হার্টজের কম হলে বা ২০ হাজারের বেশি হলে সে শব্দ আমরা শুনতে পাই না। ২০ হার্টজের কম কম্পাঙ্ক হলে সে শব্দের নাম ইনফ্রাসাউন্ড, আর ২০ হাজারের বেশি কম্পাঙ্ক হলে সে শব্দের নাম আল্ট্রাসাউন্ড। এ আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গের ছবি তোলা যায়। এ পদ্ধতির নাম আল্ট্রাসনোগ্রাফ বা আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং কিংবা সনোগ্রাফি।
আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে আসলে ২০ হাজারের বেশি হার্টজের কম্পাঙ্কের শব্দ ব্যবহার করা হয়। এ জন্য প্রয়োজন হয় একটি আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন স্ক্যানার। এ মেশিনে থাকে মাইক্রোফোন আকৃতির একটি ট্রান্সডিউসার বা প্রোব, যা একটি ক্যাবল বা তার দিয়ে মূল মেশিনের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এ প্রোবটিতে বিদ্যুৎ প্রবাহের মাধ্যমে কম্পাঙ্ক সৃষ্টি করে, অনেক বেশি হার্টজের আল্ট্রাসাউন্ড উৎপন্ন করা হয়ে থাকে।
১৯৩০ সালের শেষ দিকে অস্ট্রিয়ান চিকিৎসক Dr. Karl The done Dunik মেডিক্যাল আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে মস্তিষ্কের টিউমার নির্ণয়ের ওপর গবেষণা করেন। তার এ গবেষণার ফল তিনি ১৯৪২ সালে এক গবেষণাপত্রে প্রকাশ করেন।
১৯৪৭ সালের দিকে আমেরিকান চিকিৎসক Dr. George Ludwig আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে পিত্তথলিতে পাথর নিরূপণ করতে সক্ষম হন। আর পঞ্চাশ দশকের শুরুর দিকে স্কটল্যান্ডের চিকিৎসক Prot Ian Donald আল্ট্রাসাউন্ডের ব্যবহারিক প্রযুক্তির উন্নয়ন করেন। আমাদের দেশে মেডিকেল আল্ট্রাসাউন্ডের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে।
আল্ট্রাসাউন্ড বাতাসের ভেতর দিয়ে বা হাড়ের মতো কঠিন পদার্থের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। শরীরের হাড় বা ফুসফুসের বাতাস ভেদ করে যেতে পারে না। শরীরের ত্বকে জেল লাগিয়ে তার ওপর প্রোবটি হাত দিয়ে ধরে বসালে এ আল্ট্রাসাউন্ড শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। শরীরের ভেতর বিভিন্ন অঙ্গ থেকে এ শব্দ সাধারণ শব্দের মতো প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে সেই প্রোবটিতে।
আল্ট্রাসাউন্ড সেই প্রতিধ্বনি প্রোব থেকে ক্যাবল দিয়ে চলে যায় মূল স্ক্যানারে এবং সেখানে তা মনিটরের পর্দায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের চলমান ছবি হিসেবে মুহূর্তের মধ্যে ভেসে ওঠে। আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানারের মনিটরটি দেখতে টিভির মনিটরের মতোই। এতে শরীরের ভেতরের কোনো অঙ্গে ক্ষত, পাথর, টিউমার, ফোড়া, পানি, রক্তপ্রবাহ ইত্যাদি চর্বি হিসেবে ফুটে ওঠে। গর্ভবতীর গর্ভস্থ বাচ্চার অবস্থান এসবও নির্ণয় করা যায় আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে।
আল্টাসনোগ্রাফি পরীক্ষা রোগীর জন্য উপকারী। এ পরীক্ষার কোনো রেডিয়েশন নেই। শরীরেও কোনো ক্ষতি হয় না। খুব অল্প সময় এ পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায়। আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার খরচও কম।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ, মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।