সহজ কিছু উপায়ে আপনার বারান্দাকে করুন আকর্ষণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৫ এএম

ছবি : সংগৃহীত
বর্তমানে শহুরে জীবন অনেক বেশি যান্ত্রিক হয়ে গেছে। চারদিকে ইট-পাথরের দালান। কোথাও একটু সবুজের দেখা নেই, মন ভরে শ্বাস নেওয়ার মতোও একটু জায়গা পাওয়া যায় না এই শহরে। আচ্ছা ব্যাপারটা কেমন হবে- যদি সেই প্রকৃতিকেই নিয়ে আসি আমরা দালানকোঠার মাঝে, আর নিজের রুমের সঙ্গে ছোট্ট বারান্দাটাকে বানিয়ে ফেলি এক টুকরো অরণ্য? আর এমনই অরণ্যের ছোঁয়া পেতেই নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় নার্সারি। খুব সহজেই এসব নার্সারি থেকে চারা কিনে আমাদের ঘরের সঙ্গে শখের বারান্দা সাজানো যায়। গড়ে তোলা যায় এক টুকরো স্বর্গ, শুধু নিজের জন্য।
বিভিন্ন ধরনের গাছ
যারা বাগান করতে ভালোবাসেন তাদের কাছে এ এক রাজকীয় সুযোগ। ছোট্ট একটা বাগান মনের মতো সাজিয়ে নিলেই হয়ে গেল। কিন্তু মনে রাখতে হবে— ‘লেস ইজ মোর।‘ সবরকম গাছ রেখে ঘিঞ্জি করবেন না। বেশি গাছ রেখে নিজের জন্য ব্যালকনিতে জায়গা বন্ধ করবেন না। পরিমিত গাছ ব্যালকনিকে সুন্দর করবে। আপনি চাইলে গাছের টবগুলো বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে দিন। দেখতে সুন্দর দেখাবে এবং ডেকোর আইটেম হিসেবে কাজেও লাগবে। রিলাক্সিং ব্যালকনি যখন তৈরি করছেন, কেননা ফুলের গাছ দিয়ে তৈরি করুন। ফুলের ছোট ছোট পট বেলকনির সিলিংয়ে ঝুলিয়ে দিন। এতে করে আপনার বেলকনি দেখতে ভীষণ রঙিন দেখাবে।
বসার জায়গা করুন
সাধের বারান্দায় শেষ বিকালে কিংবা সকালে আপনার একটু বসে সময় কাটাতে ইচ্ছে করবে। নান্দনিক কিছু চেয়ার বা মোড়া দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারেন। বাঁশ, বেত, রড আয়রন, কাঠের টুল বা চেয়ার রাখতে পারেন। কোনো শক্ত স্ট্যান্ডের ওপর গ্লাস বসিয়ে নিয়ে তৈরি করতে পারেন টেবিল। সকাল বা বিকালে চায়ের কাপ হাতে পড়তে পারেন বই। শুনতে পারেন গান কিংবা কাছের মানুষকে নিয়ে দিতে পারেন আড্ডা। গাছে ভরা বারান্দায় কেটে যাবে আপনার সুন্দর মুহূর্ত।
কৃত্রিম ঝর্ণা
সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে ও মনকে শান্ত এবং সতেজ করতে পানির শব্দ অনেক জাদুকরী অর্থে কাজ করে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে একটু বেশি টাকা খরচ করতে হবে। যেহেতু আপনি ঘরে প্রাকৃতিক ঝর্ণার পাশে বসে কলকল শব্দ শুনতে পারছেন না, তাই কৃত্রিম ঝর্ণার শব্দ বারান্দাতে আনতে পারলে এই অনুভূতিটা সত্যিকার অর্থেই পেতে পারেন।
আলো
মনের মতো বারান্দা তৈরি করার আগে কিছু জিনিস আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— লাইট, বাজারে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন নানা রঙের বাহারি বাতি। দিনের বেলায় আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণের আলো পাচ্ছেন। সুতরাং দিনের বেলা নিয়ে আপনার ভাবনার জায়গা নেই। সন্ধ্যারাতে কিছু রঙ-বেরঙের লাইট ব্যবহার করতে পারেন। শহরগুলোতে বেশিরভাগ বারান্দাতে দেখা যায় ডিম লাইটের ব্যবহার। এগুলো মৃদু আলো হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে কিংবা এম্বিয়েন্ট তৈরি করতেও এই আলোগুলো সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া চাইলে ল্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন। বারান্দা সাজানোর টিপসগুলোর মাঝে সবচেয়ে কার্যকরী টিপস হচ্ছে ফ্লোর ল্যাম্পের ব্যবহার।
কণ্টক বা ক্যাকটাস গাছ
আপনি হয়তো ভাবছেন সারা দিন তো ঘরের বাইরে থাকা হয় অথবা ঘরের বিভিন্ন কর্ম-ব্যস্ততায় কেটে যায়, গাছগাছালির যত্ন নেওয়ার সময়টা কোথায়! সে ক্ষেত্রে আপনি লাগাতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট। খুব একটা পানি দিতে হয় না। মরু গাছ কিনা তাই মাটি যখন একেবারেই শুকিয়ে যাবে, তখন পানি স্প্রে করে দিলেই হবে। খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি যাতে না জমে। পানি গোড়ায় জমে গেলে এ ধরনের গাছ পচে যায়। আর সারা দিন মোটামুটি ৫-৬ ঘণ্টা রোদ পায় এমন জায়গায় রেখে দিলে আপনি নিশ্চিন্ত মনে টানা কয়েক দিন কাটিয়ে দিতে পারবেন।
রোদবিহীন বারান্দা সাজুক পাতাবাহারে
আপনার ঘরে বারান্দা আছে অথচ রোদ আসে না? সে ক্ষেত্রেও উপায় আছে। লাগিয়ে দিন কয়েক প্রজাতির পাতাবাহার। রোদ যেহেতু আসে না, তাই বিভিন্ন ধরনের অর্কিড ছাড়া হয়তো অন্য ফুল পাবেন না, কিন্তু বিনিময়ে পাবেন সবুজের ছোঁয়া, এই বা কম কী বলুন? লাগাতে পারেন মানিপ্ল্যান্ট, কয়েনপ্ল্যান্ট, লাকিব্যাম্বু, পামগাছ, ইঞ্চিপ্ল্যান্ট, স্পাইডারপ্ল্যান্টের মতো কয়েক ধরনের গাছ। কয়েনপ্ল্যান্ট আর স্পাইডারপ্ল্যান্ট যদি সম্ভব হয়, তবে সপ্তাহে ১-২ দিন রোদের একটু ব্যবস্থা করে দিতে পারলে ভালো।
বারান্দা ও ছাদ হোক ছোট্ট বাগান
একটি ফ্ল্যাটের সঙ্গে সঙ্গে যদি আস্ত একটি বহুতলবিশিষ্ট বাড়ির মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। বানিয়ে দিন বক্স বারান্দা বা পুরো ছাদটিকে একটি বাগানে! শুধু ফুল কেন, ফল থেকে শুরু করে শাকসবজি সবকিছুই লাগাতে পারবেন। আম, কাঁঠাল, ডালিম, কামরাঙা, লেবু, আমড়ার মতো গাছ লাগানোর জন্য বিভিন্ন সাইজের ড্রাম পাওয়া যায় আজকাল। আর এ ধরনের জায়গাতে বড় পরিসরে জলজ বাগানের ব্যবস্থাও করা যায়। আর পুরো বিল্ডিংয়ের শোভা বাড়ানোর জন্য বাগানবিলাস, মাধবীলতার যেন জুড়ি নেই। এ ক্ষেত্রে শুরুর দিকে হয়তো পুরো বিল্ডিংয়ে অরণ্যের ছাপ আসবে না, কিন্তু একটু ধৈর্য ধরে ৬-৭ বছর বা তারও কম সময় অপেক্ষা করুন, দেখতে পাবেন তখন আপনার এই অরণ্যে ফুলের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পাখি, মৌমাছি আর প্রজাপতির মেলা।