ফাইল ছবি
প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে গিয়ে কেটে গেল ঈদের আয়োজন। ঈদুল আজহা কিংবা কুরবানির ঈদ মানেই দাওয়াতের বিশাল পর্ব। কেবল আত্মীয়স্বজন নয়, পাড়া-প্রতিবেশীসহ বন্ধুবান্ধব এবং সমাজের নিম্নবিত্তদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি আর মাংস বণ্টনের মাধ্যমে কেটে যায় ঈদের পুরোটা দিন। বাদবাকি যে দিনগুলো থাকে তা ছুটির দিন হিসাবে কাটে পরিবার, প্রিয়জনদের সঙ্গে।
ঈদের এ সময় বাড়িতে রান্না-বান্নার ঝামেলা এড়াতে প্রায় প্রতিদিনিই থাকে গরুর কিংবা খাসির মাংসের একই পদ। যেহেতু বাড়িতে মাংস এখন হাতের সবচেয়ে কাছে, তাই দাওয়াতের অংশ হোক কিংবা নিজেদের জন্যই হোক, প্রায় প্রতি বেলায়ই থাকে কোনো না কোনো মাংসের পদ। তবে গরমের এ সময় কতটা স্বাস্থ্যসম্মত প্রতিবেলায় মাংস খাওয়া, তা জানিয়েছেন ডায়েট ও অবেসিটি ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট ফারজানা রহমান কান্তা।
জেনে নিন কোন রঙের প্রস্রাব কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়
রেড মিট কিংবা গরুর মাংস শরীরের জন্য প্রোটিনের অন্যতম উৎস। তবে অনেকেই মনে করেন রেড মিট একবারেই এড়িয়ে চলা প্রয়োজন অতিরিক্ত চর্বির কারণে। কিন্তু স্বাদের দিক থেকে এবং শরীরের প্রোটিনের চাহিদা সম্পন্ন করতে রেড মিটের জুড়ি নেই। তবে কুরবানির ঈদের এ সময় রেড মিট খাওয়া হয় চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি।
অন্যদিকে যাদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের সমস্যা আছে তাদের বেলায় অবশ্য আছে কিছু নিয়মকানুন। তাই একেবারেই কুরবানির মাংস খেতে পারবেন না বিষয়টা এ রকমও নয়। অবশ্যই নিউট্রিশিয়ান অথবা ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলে এর পরই পরিমাণমতো মাংস খেতে পারবেন।
অন্যদিকে রেড মিট কিংবা গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ থাকে অনেকটাই বেশি। তাই মাংসের সেসব অংশ যেমন মগজ, ভুঁড়ি, কলিজা যাতে উচ্চ মাত্রার চর্বি উপস্থিত থাকে, এখানে প্রোটিনের পরিমাণ খুবই সামান্য তা রান্না না করাই ভালো। এ অংশে কোলেস্টেরলের পরিমাণটাই থাকে বেশি। তাই এসব অংশ এড়িয়ে চলাই ভালো। এর বদলে রানের ওপরের অংশের মাংস বেছে নিতে পারেন। অন্যদিকে রান্নার ক্ষেত্রেও অনেকেই অতিরিক্ত তেল, মসলা দিয়ে মাংস রান্না করেন। যাতে করে মাংসের গুণাগুণ তো নষ্ট হয়ই সঙ্গে আরও যুক্ত হয় বাড়তি কোলেস্টেরল।
তাই রান্না করার ক্ষেত্রে মাংস কিছু সময় টকদই কিংবা লেবুর রস সঙ্গে হালকা মসলা আর পেঁয়াজ, লবণ, কাঁচামরিচ দিয়ে মেরিন্যাট করে রেখে অল্প তেলে সময় নিয়ে কষিয়ে চুলার তাপমাত্রা কমিয়ে আস্তে ধীরে রান্না করলে মাংস খেতেও যেমন সুস্বাদু হবে, তেমনি হবে স্বাস্থ্যকর। এছাড়া শুধু মাংস, আলু ঝোলে রান্না না করে বাঁধাকপি, ফুলকপি দিয়েও রান্না করতে পারেন। যেহেতু এ সময় গরম বেশি এবং খুব বেশি ঘাম হচ্ছে, তাই শরীর ঠান্ডা রাখতে লাউ দিয়ে মাংস রান্নাও হতে পারে চমৎকার একটি খাবার। তবে যারা অরিতিক্ত ঘামেন, তাদের কিন্তু শরীর থেকে পানির পরিমাণ কমে যায়, সে ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা দূর করতে আপনি এ মৌসুমে ডাবের পানি রাখতে পারেন খাবার তালিকায়। এতে থাকা ইলেকট্রোলাইট অসুস্থ বয়স্ক, শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য বেশ উপকারের।
কাজেই শরীর যাতে এ সময় সুস্থ থাকে সে দিকে লক্ষ রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিমাণমতো শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন প্রতি বেলায়ই। এ ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে সালাদ রাখতে পারেন মাংসের সঙ্গে। খাবার শেষে টকদই খেতে পারেন। টকদই সঙ্গে লবণ, লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিলে হজমের যেমন কাজ করে তেমনি বাড়তি ফ্যাট থেকে দেয় মুক্তি। এছাড়া খাবার আগে এক গ্লাস পানি পান করে নিতে পারেন।
এতে খাবার কম খাওয়ার অভ্যাস ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে আপনার মাঝে। খুব লম্বা সময় ধরে ক্ষুধা লাগার পর না খেয়ে টাইম টু টাইম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। রাতের খাবার ৭-৮টার মধ্যে সেরে নিন। এভাবে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মৌসুমি ফল, শাকসবজি সঙ্গে সালাদ রাখুন। এতে করে শরীর পুষ্টিও পাবে সঙ্গে পাবে চাহিদামতো প্রোটিন। তাই কুরবানির এ সময় অতিরিক্ত মাংস না খেয়ে নিয়ম মেনে চলুন। যাতে করে আপনিও উপভোগ করতে পারেন ঈদ আনন্দ প্রিয়জনদের সঙ্গে।