Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

জেনে নিন কোন রঙের প্রস্রাব কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ০৯:৪৭ পিএম

জেনে নিন কোন রঙের প্রস্রাব কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়

ছবি: সংগৃহীত

প্রস্রাবের মাধ্যমে আমাদের শরীর তার বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দেয়। অন্যভাবে বললে, এই প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে ময়লা-আবর্জনা বের করা হয়। আর এই প্রস্রবের রঙ লাল, হলুদ, গোলাপী, বেগুনি,কমলা, নীল-এমনকি রংধনুর মতোও হতে পারে। আবার কারও কারও প্রস্রাবের রঙ এমনো হতে পারে যা পরিচিত কোনো রঙ নয়।

লাল

কারো যদি প্রস্রাবের রং লাল হয়, তাহলে সাধারণত এর মানে হল, এতে রক্ত আছে। মূত্রনালীর সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনও সমস্যার কারণে এটি হতে পারে। কিডনি, মূত্রাশয় ও প্রোস্টেট এবং মূত্রনালীর সাথে সংযোগকারী কোনও টিউব থেকে রক্তপাত হলে প্রস্রাব লাল হয়ে যেতে পারে।

প্রস্রাবের সঙ্গে মিশে থাকা রক্তের পরিমাণ ও সতেজতার উপর নির্ভর করে ওই রক্তের রঙ কী রকম হবে। এক্ষেত্রে প্রস্রাবের রঙ একেক সময় একেক রকম হতে পারে। রক্তপাত যদি প্রবল মাত্রায় হয়, তাহলে প্রস্রাবের রং এত গাঢ় হতে পারে যে এটিকে রেড ওয়াইনের মতো মনে হতে পারে। 

এই ধরনের রক্তপাতের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন- কিডনিতে পাথর, ক্যান্সার, ট্রমা কিংবা মূত্রনালীতে কোনও সংক্রমণ। আবার, হয়ত সাধারণভাবে অতিরিক্ত বিটরুট খেলেও প্রস্রাবের রং লাল হয়ে যেতে পারে।

কমলা ও হলুদ

সাধারণ অবস্থায় আমাদের প্রস্রাবের রঙ অনেকটা হলুদ থাকে। এখন এই হলুদের মাত্রা কতটুকু হবে, তা নির্ভর করবে আপনি দৈনিক কতটুকু পরিমাণ পানি পান করছেন। শরীরে পানির অভাব থাকলে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হয়ে যাবে। আবার কখনও কখনও এটি কমলা রঙ-এরও হতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে প্রস্রাবের রঙ হবে পাতলা এবং ফ্যাকাশে হলুদ। যে উপাদানটি প্রস্রাবকে হলুদ করে, তাকে বলে ইউরোবিলিন। শরীরে উপস্থিত পুরানো লোহিত রক্তকণিকাকে ভাঙ্গার মাধ্যমে ইউরোবিলিনের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই রক্তকণিকাগুলো যথাযথ আকারে না থাকায় শরীর প্রস্রাবের মাধ্যমে সেগুলোকে সরিয়ে ফেলে।

এই প্রক্রিয়ায় শরীরে একটি যৌগ তৈরি হয়, যাকে বলা হয় বিলিরুবিন। এটি কিছু পরিমাণে প্রস্রাবের মাধ্যমে ও কিছুটা অন্ত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। আমাদের লিভার বা যকৃত ওই বিলিরুবিন ব্যবহার করে পিত্তরস তৈরি করে। পিত্তরস হজম এবং শরীরের চর্বি ভেঙ্গে ফেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পিত্তরস অন্ত্রে থাকে এবং মলের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এই পিত্তরসের কারণেই মলের রঙ বাদামী হয়ে থাকে।

অনেকসময় পিত্তথলির পাথর কিংবা ক্যান্সারের কারণে পিত্তনালী বন্ধ হয়ে যায় এবং তখন পিত্তরস অন্ত্রে পৌঁছাতে পারে না। ওইসময় বিলিরুবিন রক্তনালীতে ফিরে যায় এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়। এই কারণে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হতে শুরু করে- কমলা বা বাদামী। প্রস্রাবে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে ত্বকের রঙও হলুদ হতে শুরু করে। এই অবস্থাকে বলা হয় 'অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস', যা এক ধরনের জন্ডিস। তবে কিছু ওষুধ আছে, যেগুলোর কারণে প্রস্রাব কমলা রঙা হয়ে যেতে পারে।

সবুজ ও নীল

টয়লেটে কোনো কিছুর উপস্থিতি যদি প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন না করে, তাহলে শরীর অন্য কোনও কারণে সবুজ বা নীল রংয়ের প্রস্রাব তৈরি করতে পারে। যদি কোনও খাদ্যদ্রব্যে নীল বা সবুজ রং ব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রস্রাবের রং সবুজ বা নীল হতে পারে। তবে এটি তখনই ঘটবে, যখন ওই খাবার অনেক বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়।

চেতনানাশক, ভিটামিন, অ্যান্টিহিস্টামিনের মতো কিছু ওষুধ খাওয়ার কারণেও প্রস্রাবের রঙ সবুজ বা নীল হয়ে যেতে পারে। একটি মজার তথ্য হল-কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, যেগুলো এমন যৌগ তৈরি করে যে তা সবুজ বর্ণের হয়। সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসা নামক ব্যাকটেরিয়া নীল ও সবুজ রঙের পাইওসায়ানিন যৌগ তৈরি করে। এটি মূত্রনালীর সংক্রমণের একটি বিরল কারণ। এটি হলে একজন ব্যক্তিকে প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া এবং ব্যথার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

বেগুনি

প্রস্রাব বেগুনি মানে ইন্ডিগো বা পার্পল বা ভায়োলেট রং ধারণ করার ঘটনাও খুব বিরল। এর একটি সম্ভাব্য কারণ হল পোরফাইরিয়া। এটি এক ধরণের জেনেটিক রোগ, যা ত্বক এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এটি আরেকটি কারণেও হতে পারে। ‘পার্পল ইউরিন ব্যাগ সিনড্রোম’ নামক একটি বিরল রোগ আছে, যা ইউরিনারি ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের প্রস্রাব নির্গমনের জন্য ক্যাথিটার থাকলে এক্ষেত্রে তাতে পার্পল রঙয়ের দাগ দেখা যায়।

বেগুনি বা গোলাপী

অল্প পরিমাণে বিটরুট খেলে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় লালের বদলে গোলাপি হতে পারে। যখন এটি ঘটে, তখন ডাক্তাররা এটিকে রোজ ওয়াইনের সাথে তুলনা করেন।

অন্যান্য রঙ

কখনও কখনও প্রস্রাব বাদামী বা কালো রঙের হতে পারে। ডাক্তাররা এটিকে কোকা-কোলার সাথে তুলনা করতে পারেন। গুরুতর রোগ র‍্যাবডোমাইলাইসিসের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটতে পারে। এটি অত্যধিক পরিশ্রম বা কিছু ওষুধ ব্যবহারের কারণেও হতে পারে। আবার, এটি বিলিরুবিন থেকেও আসতে পারে। বিলিরুবিন প্রস্রাবকে এতটাই গাঢ় করে তোলে, এটি কমলার পরিবর্তে বাদামী দেখায়। কিন্তু প্রস্রাবে থাকা রক্তের কারণেও এমনটা হতে পারে।

প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হওয়া উচিৎ নয়। আর অনেক বেশি পাতলা প্রস্রাবও কিছু রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে, সেটি ডায়াবেটিস হতে পারে বা অতিরিক্ত মদ্যপান হতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, এটি কখনো সম্পূর্ণ তালিকা নয়। আপনার প্রস্রাবের রঙ যদি অস্বাভাবিক হয় এবং আপনি যদি তার কারণ বুঝতে চান, তাহলে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। সেইসাথে প্রয়োজন মত পানিও পান করুন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম