কাঁঠাল এমন একটি ফল যার কোনো অংশ ফেলতে হয় না। যদিও এই ফল অনেকেরেই পছন্দ না। কিন্তু এর বিচির পুষ্টিগুণ জানলে খাওয়ার ইচ্ছে কিন্তু বাড়তেই পারে। পুষ্টিবিদের মতে কাঁঠাল খাওয়ার পর বীজগুলো একেবারেই ফেলে দেবেন না।
চলছে কাঁঠালের মৌসুম। বাজারে এখন কাঁঠাল সহজলভ্য। স্বাদ ছাড়াও এই ফলের আরও একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুব কম মানুষই জানেন। এই ফলের বীজের এতটাই পুষ্টিগুণ যার কারণে একে বাদামের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
অল্প খরচে শরীরে পুষ্টি চাহিদা মেটাতে এ সময় কাঁঠালের বীজ রাখতে পারে পাতে। প্রোটিন থেকে শুরু করে এতে আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন ফসফরাস ও ফাইবার।
জেনে নিন কাঁঠাল বিচির উপকারিতা-
সংক্রমণ রোধ করে
এই বীজ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অনেকেরই হয়তো জানা নেই, কাঁঠাল বিচি বিভিন্ন সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে। নিয়মিত কাঁঠালের বিচি খেলে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবেন।
মস্তিষ্ক ও হার্ট ভালো রাখে
প্রতিদিনের খাবারে কাঁঠালের বিচি রাখলে আপনার শরীরের আয়রনের মাত্রা বাড়বে। এই বীজে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। কাঁঠালের বিচি হিমোগ্লোবিনের একটি উপাদান। আয়রন সুস্থ রাখবে আপনার মস্তিষ্ক ও হার্টকেও।
হজমশক্তি বাড়ায়
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে বিপাকক্রিয়া বাড়ায় কাঁঠাল বিচি। প্রচুর ফাইবার থাকে এতে। যা ডায়রিয়া নিরাময়েও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে নিন। বদহজমে সহজ হোমমেড রেমেডি হতে পারে এই পাউডার।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
কাঁঠারের বিচিতে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। যা চোখের জন্য খুবই জরুরি। যারা চোখের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন, তারা চোখের যত্নে কাঁঠাল নিয়মিত খেতে পারেন। এটি নাইট ব্লাইন্ডনেস কাটাতেও সাহায্য করে।
পেশী গঠন
উচ্চমানের প্রোটিন সমৃদ্ধ কোলেস্টেরলবিহীন বীজটি ডায়েট চার্টে থাকলে তৈরি হবে পেশীবহুল শরীর। মিলবে ক্যালোরিও। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাদের জন্য কাঁঠাল বীজ হতে পারে অনেক উপকারী এক খাবার।
বলিরেখা দূর করে
বয়সের ছাপ দূর করতে কাঁঠালের বীজে আছে জাদুকরি গুণ। কাঁঠালের বীজের গুঁড়া দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ফেসপ্যাক দুই সপ্তাহ পরপর মুখে লাগালে অসময়ে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করবে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান মৃত কোষ দূর করে। এতেও ত্বকের সতেজতা বাড়ে।
চুলের যত্নে
কাঁঠালের বিচিতে থাকা ভিটামিন এ চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করে এই ভিটামিন। এজন্য খাবারের তালিকায় কাঁঠালের বীজ রাখুন। এতে থাকা প্রোটিন ও আয়রন চুলের জন্য টনিকের কাজ করে।
রক্ত স্বল্পতায়
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় কাঁঠালের বীজে থাকায় আয়রন। যা অ্যানিমিয়া তথা রক্তাল্পতা সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলা করে।
ত্বকের রোগ সারায়
এটি ত্বকের নানা রোগও সারায়। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ও স্বাস্থ্যকর চুল পেতে নিয়মিত কাঁঠালের বীজ খেতে পারেন। কাঁঠালের বীজ আপনার ত্বককে করে তুলবে সজীব ও তরতাজা।
দু-একটি বীজ সামান্য দুধ ও মধুতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে, সেটা দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। সেই পেস্ট সারা মুখে লাগিয়ে শুকাতে দিন। তারপর উষ্ণ গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
মানসিক চাপ কমায়
মানসিক চাপ কমাতে কাঁঠালের বীজ খুবই উপকারী। কাঁঠালের বীজ প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসে ভরপুর। যা মস্তিষ্কের ক্যামিকেলের ভারসাম্য বজায় রেখে শরীর মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
যৌন চিকিৎসায়
যুগ যুগ ধরে নানা ধরনের যৌনব্যাধিতে কাঁঠালের বীজের ব্যবহার হয়ে আসছে। এশিয়ার অনেক দেশে প্রচলিত চিকিৎসার একটি অন্যতম উপকরণ এটি। কাঁঠালে থাকা আয়রনও এ কাজে সহায়ক।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া