আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ করে থাকি। আর এই খাবারের মধ্যে অনেক পুষ্টি জাতীয় উপাদানও থাকে। আর এই পুষ্টি উপাদানের মধ্যে আলোচিত নাম হল প্রোটিন।
সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনই প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ প্রোটিন দেহের বিভিন্ন কাজে লাগে। যেমন- পেশির উন্নতি, ক্ষয় পূরণ, বিপাকীয় শক্তি বৃদ্ধি।
তবে প্রোটিন গ্রহণের নির্দিষ্ট মাত্রাও রয়েছে। আর সেটা ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন। চলুন জেনে নিই , দৈনিক কতটুকু প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত-
এই বিষয়ে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক পুষ্টিবিদ বনি টাব-ডিক্স বলেন,বেশিরভাগ মানুষই হয়ত প্রয়োজনের তুলনায় কম প্রোটিন গ্রহণ করেন। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে কার্বোহাইড্রেইট ও চর্বি দেহ জমিয়ে রাখলেও প্রোটিন সংগ্রহ করে না।
প্রোটিনের উপকারিতার মধ্যে রয়েছে- পেটভরা অনুভূতি দেয় অনেকক্ষণ। ফলে খিদা কম লাগে, খাওয়া হয় কম। যে কারণে ওজন কমানোতে সহায়ক হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় উপকারী প্রভাব রাখে, কোষ-কলা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ-সহ দেহের বিভিন্ন অংশে প্রোটিনের দেখা মিলবে এ কারণে।
যে পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়
‘দি ডায়েটারি গাইডলাইন্স ফর আমেরিকানস’ অনুযায়ী, প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর জন্য প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম ও প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য ৫৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ব্যক্তি, বয়স, লিঙ্গ, কাজের পরিধি, সার্বিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে এই পরিমাণের তারতম্য হতে পারে।
যেমন-
গর্ভবতীর জন্য উল্লেখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। বৃদ্ধদের বেশি প্রোটিন গ্রহণ করতে হয় যাতে পেশি ক্ষয় রোধ করা যায়। খেলোয়াড়দের বেশি প্রোটিন গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে।
জীবন ধারনের পদ্ধতির ওপর প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ
কাজের মাত্রার ওপর নির্ভর করে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণে তারতম্য হয়।
বেশিরভাগ সময় বসে সময় কাটে, এমন মানুষের প্রতি কিলোগ্রাম দৈহিক ওজনের জন্য প্রায় ০.৮ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে বলা হয়।
অতিরিক্ত কার্যক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রে
যারা শারীরিক কাজ বেশি করেন তাদের জন্য প্রস্তাবিত প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ হল- দেহের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ১.২ থেকে ২ গ্রাম।
ওজন কমাতে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ
সর্বোনিম্ন পরিমাণ: প্রতি পাউন্ড ওজনের জন্য অন্তত ০.৩৬ গ্রাম।
স্বাভাবিক পরিমাণ: প্রতি পাউন্ড ওজনের জন্য ০.৬ থেকে ০.৮ গ্রাম।
অতিরিক্ত পরিমাণ: প্রতি পাউন্ড ওজনের জন্য ০.৮ থেকে ১.২ গ্রাম।
অপর্যাপ্ত প্রোটিন গহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
খাবার পরে যদি তৃপ্তিবোধ না হয়, মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে জাগে বা সারাক্ষণ দুর্বলতা কাজ করে তবে হয়ত পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করা হচ্ছে না। এর ফলে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। যেমন-
১. পেশির ক্ষয় ২. রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমা ৩. হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ৪. ভঙ্গুর নখ ৫. চুল পড়া ৬. ত্বকের সমস্যা।
এছাড়া মেজাজের ওঠানামা, মনোযোগের অভাব অযাচিত ওজন কমা-বাড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের কুফল
অন্যদিকে যারা বেশি পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করেন তাদের যে বেশি মাত্রায় পেশি গঠিত হবে এমন কোনো কথা নেই। এমনকি অতিরিক্ত প্রোটিনের ফলে স্বাস্থ্য খারাপও হতে পারে।
টাব-ডিক্স ব্যাখ্যা করেন, “অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে বৃক্কে চাপ পড়ে আর হজমে সমস্যা হয়।”
এছাড়া আঁশ গ্রহণের পরিমাণও কমতে পারে। যা কিনা হজমে সমস্যা তৈরি করে। পাশাপাশি উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণের পর পানি গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হয়। তাই পর্যাপ্ত আঁশ গ্রহণ ও পানি পান না করলে হজম তন্ত্রে চাপ পড়ে।
টাব-ডিক্ক আরও বলেন, অনেকেই জানেন না, অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ থেকে দেহের ওজনও বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি উচ্চ মাত্রায় স্যাচুরেইটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ প্রোটিন যুক্ত খাবার হৃদরোগের জন্য দায়ী। তাই সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা জরুরি।
উচ্চ মাত্রায় প্রোটিনের উৎস
নানান ধরনের মজাদার ও স্বাস্থ্যকর খাবার রয়েছে যেগুলো থেকে মিলবে পর্যাপ্ত প্রোটিন।
মাছ: সামুদ্রিক ও মিঠা পানি- দুই রকমের মাছ প্রোটিনের ভালো উৎস।
প্রাণিজ উৎস: ডিম ও মুরগিতে রয়েছে ভালো মাত্রার প্রোটিন।
দুগ্ধজাত পণ্য: চর্বিহীন বা কম চর্বির টক দই, পনির ও দুধ।
উদ্ভিজ্জ খাবার: মটর, ডাল, বাদাম ও বীজ হল প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। বাদামের মধ্যে- কাঠ ও পেস্তা বাদামে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। সয়া দিয়ে তৈরি খাবার- টফু ও সয়া-দুধের মিলবে প্রোটিন।