ফাইল ছবি
শরীর যখন একটি অস্বাভাবিক অবস্থাকে শনাক্ত করতে পারে তখন সেই অস্বাভাবিক অবস্থার কথা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যথার মাধ্যমে জানান দেয়।
ধরুন ইন্ট্রাভার্টিব্রাল লাম্বার ডিস্ক প্রল্যাপ্স বা মেরুদণ্ডের কোমরের অংশের দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী চাকতিটি যদি কোনো দিকে বেরিয়ে যায়, তবে বেশিভাগ ক্ষেত্রেই তা কোমর ব্যথার মাধ্যমে
প্রকাশ পায়। ঠিক একইভাবে কোমর ব্যথা হয় আরও বিচিত্র ও বিভিন্ন রকমের কোমরের সমস্যার কারণে।
ব্যথার চিকিৎসায় প্রথমে আমাদের কী মনে আসে? বেশিভাগ মানুষ উত্তর দেবেন-ব্যথার ওষুধ। বাংলাদেশে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ব্যথার চিকিৎসা হয় ব্যথার ওষুধ দিয়ে। কিন্তু শুধুই ওষুধ কি ব্যথার কারণ নিরাময় করতে পারে? ধরুন একজন রোগী কোমরের স্নায়ুর চাপের কারণে কোমর ব্যথায় ভুগছেন, তবে ব্যথার ওষুধ কি ওই স্নায়ুর চাপ সরিয়ে ব্যথা কমাতে সক্ষম?
আরও পড়ুন: ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে খাবেন যেসব খাবার
এটা ঠিক, ব্যথার ওষুধ বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যথার অন্যভূতি কমাতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা কমাতে পারে। কিন্তু ওষুধ স্নায়ুর চাপ বা মাংসপেশির দুর্বলতা ইত্যাদি উৎসকে নির্মূল করতে পারে না।
এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায় ব্যথার চিকিৎসা ও ব্যথার কারণের চিকিৎসা এক নয়। ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কাঁধ ইত্যাদি ব্যথার কারণের চিকিৎসা ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি সার্জারির মতোই কাজ করে। অর্থাৎ ফিজিওথেরাপির মাধ্যমেই সার্জারির সমপর্যায় পরিমাণ ব্যথার কারণ নির্ণয় সম্ভব।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে কোনো ধরনের ফিজিওথেরাপিই কি ব্যথার কারণ অপসারণে সক্ষম? উত্তর হবে নাবোধক। ফিজিওথেরাপির নামে বাংলাদেশে যেসব চিকিৎসা প্রচলিত আছে অর্থাৎ নানা রকমের হিট, ইলেক্ট্রিক শক বা অবৈজ্ঞানিক ব্যায়াম-এগুলোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছে ‘নো ভ্যালু ট্রিটমেন্ট’ বা মূল্যহীন চিকিৎসা।
উন্নত বিশ্বের বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা মূলত নির্ভর করেন ব্যথার কারণ নির্ণয়ের ওপর। ব্যথার মূল কারণ নির্ণয়ের পর তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা প্রদান করা হয় এবং এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল আসে প্রায় শতভাগ।
বাস্তবে দেখা যায় উন্নত বিশ্বে রোগ নির্ণয়ের পর রোগীদের ওপর সঠিক ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ অনেকটাই সহজ, কিন্তু বাংলাদেশে এটি দুরূহ কাজ। বাংলাদেশে যেমন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের অভাব, তেমনি এ দেশের রোগীরাও সচেতন নন।
বেশিভাগ রোগীই মূল্যহীন চিকিৎসার ওপর আস্থা রাখতে ভালোবাসেন এবং বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রয়োগের সুযোগ দেন না। অনেক রোগী আছেন যারা ইউটিউব বা ফেসবুক ভিডিও দেখে চিকিৎসা বা ব্যায়াম শুরু করে দেন, কেউবা ফার্মেসি থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে তা সেবন করতে শুরু করেন। দেশে সবার দোরগোড়ায় বৈজ্ঞানিক ফিজিওথেরাপি পৌঁছে দিতে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসালয়ের অপ্রতুলটা লাঘব ও এ বিষয়ে সরকারের আশু মনোযোগ প্রয়োজন।
লেখক : কোমর ব্যথাবিষয়ক গবেষক, লা ট্রোব ইউনিভার্সিটি, মেলবোর্ণ, অস্ট্রেলিয়া এবং বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাব বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।