Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

নৈসর্গিক আনন্দে বিভোর হতে সিকিম যাত্রা

Icon

মো. জাহিদ হাসান  

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩, ১১:৪১ এএম

নৈসর্গিক আনন্দে বিভোর হতে সিকিম যাত্রা

সুবিশাল পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে হিমশীতল ঝিরিঝিরি হাওয়ার অনুভূতি নেওয়ার এক অভূত স্থান হচ্ছে সিকিম। নিসর্গের অসীমতায় ভেসে বেড়াব আর চোখ মেলে ধরব নীল আকাশের বিশালতা। আমাদের দেশে শীত পেরিয়ে তখন বসন্তের আগমন। ফাগুনের গরম হিমেল হাওয়া প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে। 

ভারতের সিকিম ও দাজিলিং রাজ্য ঘোরার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সমতল ভূমির চা বাগানে পেরিয়ে  আরও বেশ  কয়েক মাইল যেতেই দেখা মিলল সবুজ পাহাড়। পড়ন্ত বিকালে উঁচু পাহাড়ি রাস্তায় যখন আমাদের গাড়ি এঁকেবেঁকে চলছে, তখন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখা মিলল পাথুরে স্বচ্ছ হ্রদ। দুপাশে পাহাড় আর মাঝে বয়ে চলা হ্রদের পানির গভীরতা না থাকলেও আছে স্রোতের তীব্রতা। স্বচ্ছ নীলাভ জলের খরস্রোতা লেকের মাঝে পড়ে থাকা বিশাল বিশাল পাথর খণ্ডে ধাক্কা খেয়ে নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে এগিয়ে যাচ্ছে দুরন্ত গতিতে। মাঝে মাঝে দেখা মিলছে বন্য বানরের। ওরা উপদলে বিভক্ত হয়ে রাস্তার বাঁকে বাঁকে বসে আছে।

র‌্যাম্পো হলো— সিকিম রাজ্যের দূতাবাসের মতো। এর পর আছে গ্যাংটক। গ্যাংটকের কাছাকাছি এসে পৌঁছালে যেন বড় বড় পাহাড়ের দেখা মিলছে আর পাহাড়গুলো নিজেদের রূপবৈচিত্র্য মেলে ধরছে ভিন্ন আঙ্গিকে। 

গ্যাংটকের রাস্তায় ধূমপান, আবর্জনা ফেলা এবং থুতু ফেলা আইনত নিষিদ্ধ। রাস্তার মাঝখানের বাগান পরিপূর্ণ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রকার ঝুলন্ত টপ ও মাটিতে বপন করা ফুল ও সৌন্দর্য বধনকারী গাছের সমাহারে। গাছের প্রতিটি ডাল ও পাতায় বিভিন্ন রং বেরঙের লাইটিং করে রাস্তার সৌন্দর্যের মাত্রা যেন আরও বাড়িয়ে দেয়। কিছুদূর পর পর বাগানের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা। বাগানের গা ঘেঁষে দুধারে রাখা বেঞ্চগুলোতে বসে ভ্রমণকারীরা বসে আছে, কেউবা সেলফি তোলায় ব্যস্ত।

এ ছাড়া সাঙ্গু লেকের বরফও একটি সুন্দর দৃশ্য যেটি সমতল ভূমি থেকে ১২ হাজার ৫০০ ফুটের অধিক উচ্চতায় অবস্থিত। সাদা বরফে আচ্ছাদিত থাকার আকর্ষণই  মূলত আমাদের পর্যটক বানিয়ে এত দূর টেনে নিয়ে এসেছে, যা শহর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেখানে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভূ-সর্গখ্যাত খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালির উচ্চতা  ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১৮০০ ফুট। সাঙ্গু লেকে যেতে আগে থেকেই অনুমতি নিয়ে আমরা সকাল ৮টায় যাত্রা শুরু করলাম।

অবশেষে সাঙ্গু লেকে পৌঁছে দেখতে পেলাম প্রকৃতিপ্রেমী  ভ্রমণপিপাসু মানুষের হাট বসেছে। সুউচ্চ উপত্যকাটির কোলে একটি ডিম্বাকৃতির হ্রদ। সম্ভবত তার পরিধি মাইলখানেকের মতো হবে। এখানে লেকে জল উপচে পড়ছে। হ্রদটির ওপরের মাথায় একটা বিশাল পাহাড়ের বিশাল উঁচু চুড়া। মাথা উঁচু করে ওপরের পাহাড়ের দিকে চোখে মেলে দৃষ্টির ক্যামেরায় ধরা পড়ল পাথরের ওপর বড় বড়  বরফ খণ্ড পড়ে এক অন্য রকম  সাজে সজ্জিত হয়ে আছে স্থানটি । সাঙ্গু লেকের স্বচ্ছ নীলাভ জলের ওপরে থাকা মেঘের কুহেলিকাগুলো উড়ে বেড়াচ্ছে সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মতো। লেকের কোলঘেঁষে থাকা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে বড় পশমওয়ালা তিব্বতি গরু। কেউ চমরীগাই বা ইয়াকের পিঠে চড়ে সাঙ্গু লেকের চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ ক্যাবলকারে চড়ে শোঁ শোঁ করে লেকের পাশে থাকা পাহাড়ের চূড়ায় চড়ে যাচ্ছে, আবার কেউবা বরফ হাতে নিয়ে খেলছে। এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বরফাচ্ছন্ন পরিবেশ যে কোনো ভ্রমণপিপাসুকে মুহূর্তে মাতাল করে তুলবে। 

সাঙ্গু লেক দেখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ক্যাবল কার রাইড এ উঠে ওপরে যাওয়া। জানতে পারলাম, এখানকার ক্যাবল কারে চড়ে লেকসহ আশপাশের বিস্তৃত এলাকার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সাঙ্গু লেকের পাশে থাকা রোপওয়েতে/ ক্যাবল কারে চড়ে চূড়ার শিখরে উঠতে জনপ্রতি ৩২৫ রুপি গুনতে হয়। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোর পর দেখতে পেলাম বিশাল বিশাল কৃষ্ণ বর্ণের পাথর খণ্ডগুলো বরফ খণ্ড মাথায় নিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ের চূড়ায় তাপমাত্রা মাইনাস ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস চলছে। বরফে ঢাকা পাহাড়ের সৌন্দর্যই অন্যরকম। হিমেল ঠাণ্ডা হাওয়া সাঙ্গু লেকের  আকাশ মেঘলা হয়ে আছে, বরফের ছোট ছোট কুঁচিগুলো আমাদের মাথায় পড়ছে।

সাঙ্গু লেকে ইয়াকের পিঠে চড়ে লেকের চারদিকে এক পাক খেতে ৬৫০ রুপি আর শুধু পিঠে বসে ছবি উঠাতে ১০০ রুপি লাগে। অন্য পর্যটকদের ইয়াকের পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াতে দেখে নিজেরও লোভ হলো তুলতুলে ইয়াকের পিঠে বসে পড়লাম । সাঙ্গু লেক থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে ভারত-চীন সীমান্তের নাথুলা পাসের অবস্থান হলেও আঁকাবাঁকা রাস্তার কারণে সীমান্তে পৌঁছতে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আমাদের  খুব ইচ্ছে ছিল নাথুলা পাস, জিরো পয়েন্টে গিয়ে  আরও বেশি সাদা বরফের মধ্যে আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে নেওয়ার। এই সময় ভারতীয় নাগরিক ছাড়া কোনো বিদেশিদের এই সীমান্তে যাওয়ার অনুমতি নেই। পড়ন্ত বিকালের আগেই আমরা যখন সাঙ্গু লেক থেকে গ্যাংটক শহরের দিকে ফিরছি।

শেষবেলায় গ্যাংটকের শপিংমল আর ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের  প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নেওয়ার সময় চোখে পড়ছে ছোট ছোট দোকানে নানারকমের পণ্যের পসরা সাজানো। সস্তায় বিক্রি হচ্ছে কাশ্মীরি শাল, চাদরসহ অন্যান্য পণ্য। রাতে হোটেলে ফিরে পর দিন সকালে গ্যাংটক হতে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য প্রস্তূত হলাম।  

লেখক: মো জাহিদ হাসান 
ফিচার লেখক ও কলামিস্ট

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম