ফায়ার সার্ভিসকে কখন কীভাবে কল করবেন?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০১:৪৭ এএম
প্রতীকী ছবি
যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ দ্রুত প্রাপ্তি ও সঠিক তথ্য পেলে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ভালো পরিমাণে কমানো যায়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দিনাজপুরের খানসামা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তালহা বিন জসিম নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
আলোচিত ফায়ার সার্ভিস বলেন, কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় যখন কোন ফায়ার কল আমরা পাই সঠিকভাবে তথ্যগুলো পাই না। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এটা মনে রাখবেন আমরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সবসময় প্রস্তুত থাকি। যে কোন কল পেলে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বের হই। সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পেলে ক্ষয়ক্ষতি আরও কমানো যায়।
তাই কিভাবে ফায়ার সার্ভিসকে কল করবেন বা কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন সেই বিষয়ে আজ লিখছি-
যে কারণে ফায়ার সার্ভিসকে কল করবেন: ফায়ার সার্ভিস একটি জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান। ২৪ ঘণ্টাই প্রস্তুত থাকে। অনেকে শুধুমাত্র আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসকে কল করে থাকেন। আগুন নির্বাপন ছাড়া ফায়ার সার্ভিসকে কল করে আপনি নির্দিষ্ট কিছু সেবা নিতে পারেন। যেমন, যেকোন দুর্ঘটনায় সেটা সড়ক দুর্ঘটনা হোক বা নৌ দুর্ঘটনা হোক। এছাড়া উদ্ধার কার্যক্রমে ফায়ার সার্ভিসকে কল করা যাবে। অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার রিপোর্ট, ফায়ার লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ নিতে ফায়ার সার্ভিসকে কল করতে পারবেন।
ধীরস্থির, মাথা ঠাণ্ডা করে কল করুন: হ্যাঁ, দুর্ঘটনার সময় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি এটা চিরন্তন। কিন্তু যখন আমরা ফায়ার সার্ভিসকে কল করবো তখন অবশ্যই মাথাকে ঠাণ্ডা রাখতে হবে। ধীর স্থির, শান্তভাবে তথ্যগুলো দিন। আমরা দেখেছি যখন কল পাই। ওপাশ থেকে বলেই যাচ্ছেন, আগুন লেগেছে তাড়াতাড়ি আসুন, তাড়াতাড়ি আসুন। আমরা যতই তথ্যের জন্য প্রশ্ন করছি তিনি উত্তর না দিয়ে আগুন, আগুন করছেন। এতে যা হয় আপনার কাছ থেকে তথ্য পাচ্ছি না। সাথে লাইনটা বিজি থাকতেছে আরেকজন আমাদের পাচ্ছেন না।
তাড়াহুড়ো নয় স্পষ্ট করে তথ্য দিন: আমরা দেখেছি অতিদ্রুত তথ্য দেয়ার কারণে এলোমেলো তথ্য পাওয়া যায়। সেটা অনেক সময় অস্পস্ট হয়েও থাকে। তাই কোন আগুন বা দুর্ঘটনার কল করার সময় শান্ত হোন, ধীরস্থির ভাবে স্পষ্ট করে তথ্য দিন। অনেক সময় দেখা যায়, আতঙ্কিত ও উত্তেজিত হয়ে অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিচ্ছেন। তাই যে প্রশ্ন করা হচ্ছে সেটারই সঠিক উত্তর দিন।
স্পটে থাকা ব্যক্তির নম্বর প্রদান: অনেক সময় আমরা কল পেয়েছি এমন ব্যক্তির কাছ থেকে যিনি স্পটে নেই। এতে যা হয় আমরা মুভ করার পর ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আগুনের পরবর্তী আপডেট আর পাই না। আগুন কি নিভে গেলো, নাকি আরও বড় হয়ে গেলো এসব তথ্য আর পাওয়া যায় না। তাই দুর্ঘটনার সংবাদ দেয়ার সময় আপনি স্পটে আছেন কিনা সেটা জানান সাথে সাথে স্পটে থাকা ব্যক্তির নম্বরটাও দিয়ে দিন। এরকমও হয়েছে যে, যিনি কল করেছেন তিনি চলন্ত অবস্থায় দেখেছেন বিষয়টি নিশ্চিত নয়।
দুর্ঘটনার রকমফের: যখন ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করবেন প্রথমেই জানাতে হবে এটা কোন আগুনের সংবাদ নাকি কোন দুর্ঘটনা। কেননা আগুন হলে এক রকম গাড়ি যাবে। আর দুর্ঘটনা বা উদ্ধার হলে এক রকম গাড়ি যাবে। এখানে তথ্যের এলোমেলো হলে অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই আস্তে আস্তে শান্তভাবে কি ধরনের দুর্ঘটনা সেটা জানান। সাথে সাথে এটাও জানান এটা কিসের আগুন। এক এক ধরনের আগুন নির্বাপণের আলাদা আলাদা কৌশল। ধরুন কেমিকেল গোডাউনে আগুন লেগেছে। এটা যদি প্রথমেই সংবাদ পাই তাহলে আমাদের কেমিকেল আগুন নির্বাপনের গাড়ি যাবে। তাই এটা গ্যাসের আগুন নাকি গার্মেন্টসের আগুন, নাকি বাসা বাড়িতে আগুন নাকি মার্কেটের আগুন নাকি খড়ের গাদার আগুন এসব জানান। আবার দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এটা পানিতে ডুবে যাওয়ার দুর্ঘটনা নাকি সড়ক দুর্ঘটনা, নাকি কেউ লিফটে আটকা পড়েছে এরকম আলাদা আলাদা করে উল্লেখ করে সংবাদ দিন।
লোকেশন দিবেন যেভাবে: আমরা যদি প্রথমবারেই যথাযথ/সঠিক লোকেশন পাই তাহলে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে স্পটে উপস্থিত হতে পারি। তাই লোকেশন দেয়ার সময় স্থানের নাম, রাস্তার নাম, আশে পাশের প্রসিদ্ধ পরিচিত স্থানের (স্কুল,কলেজ, বাজার/মার্কেট) নাম জানান। কিভাবে গেলে বা কোন রাস্তা ধরে গেলে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে তাও জানাতে পারেন। অনেক সময় কোন শহরের একই নাম দুই স্থানের রয়েছে অথবা কাছাকাছি নামের স্থান রয়েছে। তাহলেও সেটাও স্পস্ট করে উল্লেখ করে দিন।
প্রযুক্তিকে কাজে লাগান: এখনকার যুগে সহজভাবেই লোকেশন দেয়া যায়। আপনি যদি গুগল ম্যাপে লোকেশন শেয়ার করে ম্যাসেজ দিয়ে দেন তাহলে সেটা হয় আরও উন্নত লোকেশন শেয়ার। এখনকার সময় ফায়ার সার্ভিসের প্রায় প্রতিটি স্টেশনের আলাদা আলাদা অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাই ফেসবুক ম্যাসেনজারেও লোকেশন শেয়ার করে দিতে পারেন। এই লোকেশন শেয়ার হবে নিখুত ও উত্তম।
লাইনে থাকুন তথ্য দিন: এরকমও হয়েছে যে আগুনের সংবাদ দিয়েই কল কেটে দিয়েছেন। কিন্তু আরও তথ্য নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তাই লাইনে থাকুন ধীরস্থিরভাবে স্পস্ট করে সঠিকভাবে সবগুলো তথ্য দিন। তারপর কল কাটুন।
ফোন বন্ধ বা বিজি রাখা নয়: এরকম হয়েছে একজনে কল করেছেন। আমরা বেরও হয়েছি কিন্তু ঐ নম্বরটি বন্ধ পাচ্ছি। আবার এমনও হয়েছে তার নম্বরটি ব্যস্ত দেখাচ্ছে। এরকমও হয়েছে তিনি আর ফোনটি রিসিভ করছেন না। তাই যতটা সম্ভব আপনার নম্বরটি ব্যস্ত না রাখা। ফোনের কাছে থাকা। কেননা কল পাওয়ার পর স্পটে না পৌঁছানো পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য নিতে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হতে পারে।
পানির রিজর্ভার কোথায় আছে: ফায়ার সার্ভিসকে কল করলে যদি পারেন স্পটের আশে পাশে পানির উৎস আছে কিনা জানান। যদি পানির উৎস দূরে অথবা না থাকে তাহলে আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবো। অভিজ্ঞতায় দেখেছি খুব দ্রুত স্পটে পৌঁছার পরও পানির উৎস দূরে থাকায় অগ্নি নির্বাপন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের উচিত যেকোন ভবন নির্মাণ ও গোডাউন তৈরির সময় পানির রিজার্ভার নিশ্চিত করা।
প্রথমেই পরিবার বা বন্ধুদের ফোন নয়: আমরা কোন দুর্ঘটনায় আতঙ্কিত বা অস্থির হয়ে প্রথমেই পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের ফোন দেই। এটা না করে প্রথমেই কল করুন ফায়ার সার্ভিসকে। এতে তথ্যটা আগে পেলে দ্রুত সংবাদপ্রাপ্তি হবে।
পরীক্ষা করতে মিস কল নয়: অনেক সময় আমরা মিস কল পেয়ে থাকি। পরে ব্যাক করে জানা যায় ফায়ারের নম্বরটা ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করেছেন। এরকম না করাই ভালো। আবার এরকম হয়েছে যে কল করে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এতে করে লাইনটা বিজি হয়ে পড়ে প্রকৃত বিপদগ্রস্তরা আমাদের পাচ্ছেন না।
নিশ্চিত হয়ে কল করুন: অনেক সময় এরকম হয়েছে যে আমরা সংবাদ পেয়ে গাড়ি বের করে কিছুদূর যেতে জানানো হলো যে আগুন নিভে গেছে। গাড়ি ঘুরিয়ে ব্যাক করতে আবার কিছুক্ষণ পরে ঐ একই ব্যক্তি জানায় আগুন জ্বলতেছে। তাই নিশ্চিত হোন তারপর কল করুন। কারণ আপনার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি পারে।
প্রশ্নের সঠিক উত্তর: অনেক সময় এরকম কল পেয়েছি যে, তিনি এলাকার নাম সম্পর্কে বা কী ধরনের দুর্ঘটনা তা নিশ্চিত নয় । ধারনা করে জানাচ্ছেন। এরকম না করে এলাকার নাম, আশপাশের প্রসিদ্ধ পরিচিত নাম, কি ধরনের দুর্ঘটনা নিশ্চিত হয়ে সঠিকভাবে জেনে তথ্যগুলো গুছিয়ে নিয়ে কল করুন। এছাড়া যখন তথ্যের জন্য প্রশ্ন করা হবে সঠিকভাবে উত্তর দিন কোনভাবেই ধারনা করে নয়। একই প্রশ্ন বারবার করা হতে পারে ধৈর্য ধরে উত্তরগুলো দিন। খেয়াল রাখবেন আবার এরকম যেনো না হয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য কল করতে দেরি করে ফেলছেন।
ধৈর্য ধরুন ও তথ্য দিন: আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি। ফায়ারের কল পেয়ে গাড়িতে যেতে যেতে স্পটে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছি। এবং পরিকল্পনা করছিলাম কিভাবে ফায়ার ফাইটিং করবো। কিন্তু তিনি মনে করছেন আমরা এখনও বের হইনি, এখনও তথ্য নিয়েই যাচ্ছি। তাকে বুঝিয়ে বলার পরও তিনি ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। এতে করে তথ্য নিতে বিঘ্ন হচ্ছিল। অথচ তথ্যগুলো খুবই প্রয়োজন। তাই ধৈর্য ধরুন, প্রশ্নের উত্তরগুলো সঠিকভাবে দিন। কেননা আপনিই স্পটে আছেন আপনার একটি তথ্যের উপর নির্ভর করেই আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি তৈরি হয়। এমনকি কখনো দেখেছেন ফায়ারের সংবাদ পেয়ে মাঝপথে ফায়ারের গাড়ি কোথাও রেখে চা খাচ্ছে ফায়ারফাইটাররা। আমি নিশ্চিত দেখেন নি। তাই আমাদের উপর বিশ্বাস রাখুন আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সেবাটা দিয়ে থাকি। দরকার শুধু আপনাদের সহযোগিতা।
পরিশেষে বলবো, আপনার বসবাসস্থানের নিকটবর্তী ফায়ার সার্ভিসের নম্বরগুলো নিজ মোবাইলে ও পরিবারের সদস্যদের মোবাইলে সংরক্ষণ করুন। ফায়ার সার্ভসের অ্যাপসও রয়েছে যেখান থেকে দ্রুত ও সহজে কল করতে পারবেন। ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি স্টেশনের নম্বরের সাথে সাথে ৯৯৯ ফোন করেও ফায়ার সার্ভিসের সেবা নেয়া যাবে। গত ২০১৯-২০২০ বছরে ১৪৪৯৭ টি ৯৯৯ কলের মাধ্যেমে সারাদেশে ফায়ার সার্ভিস সেবা প্রদান করেছে।