পূজার পাঁচ দিন অনেকেই পাঁচ ধরনের পোশাক পরতে পছন্দ করেন। তাই স্বভাবতই ভিন্ন ভিন্ন পোশাকের সঙ্গে সাজের ধরনে আসে ভিন্নতা। তবে গরমের এ সময় এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপে ঘোরাঘুরির জন্য খেয়াল রাখুন যেন সাজ স্নিগ্ধ হয়। বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকে এবং মুখে কালচে আর ক্লান্তভাব না আসে। লিখেছেন- কেয়া আমান
ষষ্ঠীতে হালকা সাজ
হালকা সাজ দিয়ে শুরু করুন ষষ্ঠী। তাঁত বা প্রিন্টের সুতি শাড়ি, সালোয়ার কামিজ যে কোনোটাই পরতে পারেন এদিন। কমপ্যাক্ট পাউডার, চোখে কাজল, হালকা লিপস্টিকেই সেরে ফেলতে পারেন ষষ্ঠীর সাজ। চুলটা হালফ্যাশনের সামনের দিকে টুইস্ট করে পেছনে পনিটেইল, খেজুর বেণি করলে গরমে আরাম মিলবে আর ট্রেন্ডি লুকও আসবে।
স্নিগ্ধ থাকুন সপ্তমীতে
সপ্তমীতে অঞ্জলি দিতে যাওয়ার সময় সাজটা হালকা এবং সজীব রাখুন। এদিন সুতি আরামদায়ক পোশাক মানানসই। এমন পোশাকের সঙ্গে বেইজ মেকআপে ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে ট্যান্সলুসেন্ট পাউডার কিংবা বিবি ক্রিম লাগাতে পারেন। ঠোঁটে দিন করোল, হালকা গোলাপি, কমলা লিপস্টিক। সপ্তমীর রাতের সাজে চোখে ব্লু, অ্যাশ আইশ্যাডো লাগিয়ে সাজটাকে রাতের উপযোগী করে তুলুন। খোঁপা করে চুলে বেশি করে ফুল লাগিয়ে সাজে স্নিগ্ধতা আনতে পারেন।
অষ্টমীর সাজ
অষ্টমীতে বেনারসি, সিল্ক, কাতানের মতো ভারী শাড়ি পরতে পারেন অনায়াসে। এদিন সাধারণত দিনের হালকা আর রাতে ভারী সাজা হয়। রাতে ভারী সাজের ক্ষেত্রে সাজার আগে মুখ টোনিং করে ওয়াটার বেইজ ফাউন্ডেশন দিন। এরপর ফেস পাউডার ও ব্রাউন ব্লাশন লাগান। চোখের সাজে এখন উজ্জ্বল রং খুব চলছে। পোশাকের বিপরীত রঙের বা রং মিলিয়ে দুই শেডের আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। সবশেষে পছন্দমতো লিপস্টিক দিয়ে সাজ সম্পন্ন করুন। হেয়ারস্টাইলে চুল কোঁকড়া করার ধারা এখন জনপ্রিয়। শাড়ির সঙ্গে চুল কোঁকড়া করে খুলে বা খোঁপা করে রাখতে পারেন। আলতা, টিপ আর সিঁদুর পরে সাজে পূর্ণতা আনুন।
জমকালো সাজে নবমী
নবমীর সাজ হবে গর্জিয়াস। অষ্টমীর মতো এদিনও জামদানি, কাতান বা সিল্কের শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ পরতে পারেন। এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে চোখে কনট্রাস্ট আইশ্যাডো এবং ম্যাচিং করে সোনালি কিংবা রুপালি হাইলাইট ভালো লাগবে।
ঐতিহ্যের সাজে দশমী
পূজার প্রাণ বিজয়াদশমী। দশমীতে সবাই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে। দশমীতে লাল শাড়ি, সাদা শাড়ি লাল পাড়ের ঐতিহ্য লক্ষ করা যায়। দশমীর আয়োজনের মতো সাজপোশাকও হয় জমকালো। এদিন চোখজোড়া উজ্জ্বল রঙে কিংবা স্মোকি লুকে সাজাতে পারেন। সঙ্গে মোটা করে কাজল, আইলাইনার, মাশকারা পরুন। আবার আইলাইনার এড়িয়ে শুধু আইশ্যাডোতে চোখে গর্জিয়াস কিন্তু স্নিগ্ধ লুক আনা যায়। গালে ব্লাশন আর ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক দিন। খোঁপা কিংবা খোলা চুলে জড়িয়ে নিন তাজা ফুল।
সাজে নতুনত্ব
পূজায় শুধু যে দেশীয় ঘরানার সাজপোশাকই পরতে হবে, সেই ধারা ভেঙেছে অনেক আগেই। অনেকেই এখন শাড়ি বা সোলায়ার কামিজের পাশাপাশি পূজার দু-একদিন ফিউশন পোশাক পরুন। শুধু পোশাক দিয়েই নয়, ট্রেডিশনাল পোশাকের সঙ্গে আধুনিক সাজে সেজেও আনতে পারেন ফিউশন লুক। পূজায় দুই একদিন যাদের ফিউশন সাজার ইচ্ছা রয়েছে তারা ট্রেডিশনাল শাড়ির সঙ্গে ওয়েস্টার্ন স্টাইলে চুল বাঁধতে পারেন। যেহেতু মাস্ক পরতে হচ্ছে তাই এখন চোখের সাজে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর লিপস্টিকে হালকা রঙের থাকছে। চোখের নিচে নীল কাজল, কাজলের চিকন টানা ঘন মাশকারা, উজ্জ্বল আইশ্যাডো, পোশাকের বিপরীত রঙের আইশ্যাডো কিংবা আইশ্যাডোতে এখন ফাঙ্গি ধাঁচ রাখতে পারেন অনায়াসে।
চুলের সাজে চুল বেঁধে রাখারই পরামর্শ দিচ্ছেন হেয়ার এক্সপার্টরা। সে ক্ষেত্রে আধুনিক চুল বাঁধায় অনুসরণ করতে পারেন এখনকার পশ্চিমা স্টাইলগুলো। ঘুরে-ফিরে হেয়ারস্টাইলে আজকাল পাশ্চাত্য স্টাইলে ফন্টসেটিং বেণি, মাথার সামনে বিভিন্নভাবে টুইস্ট করে বা কয়েক লহরের বেণি করে পেছনে একবেণি, ঝুঁটি এখন বেশ জনপ্রিয়। স্কার্ট-টপস ঘরানার পোশাকের সঙ্গে এ হেয়ারস্টাইল ভালো লাগবে। সিঁথি করে টানটান খোঁপা করার চলও ফিরে এসেছে।
আবার আলাদা আলাদা করে ফ্রেঞ্চ বেণি করে পেছনে সব বেণি একসঙ্গে করে খোঁপাও আকর্ষণীয় দেখাবে। ট্রেন্ডি ধাঁচের শাড়ি ছাড়াও কুর্তি, লেয়ার কামিজ, আনারকলি স্টাইলের পোশাকের সঙ্গে চুলের এ বাঁধন ভালো লাগে। চুল খুলে রাখতে পছন্দ করলে চুলগুলো নিচের দিকে হালকা কোঁকড়া করে নিন। মাথার ওপর পরে নিন পছন্দমতো হেয়ারব্যান্ড। পুঁতি, বিডস, রুপালি গয়নার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে।