সন্তান কি বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য
অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:৫২ এএম
ছবি সংগৃহীত
সন্তানের জন্মের পর থেকে তাকে লালন-পালনের জন্য বাবা-মা যে ত্যাগ স্বীকার করেন, তার ঋণ কখনও শোধ হওয়ার নয়। তবে প্রাপ্ত বয়স হওয়ার পর অনেক সন্তানই তা ভুলে যায়। বৃদ্ধ বয়সের এই বাবা-মাকে অনেক সন্তান বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসেন বা ভোরণপোষণ দিতে চান না।
বিষয়টি নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে– সন্তান কি বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দিকে বাধ্য বা ভরণপোষণ না দিলে বাবা-মা সন্তানের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন কিনা?
সম্প্রতি বাংলাদেশে পিতামাতার ভরণপোষণ সংক্রান্তে ‘পিতামাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে বাবা-মা অবশ্যই ভরণপোষণ লাভের আইনি অধিকার লাভ করেছেন, যা ক্ষুণ্ন হলে যে কোনো মা-বাবা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।
এ আইনে ভরণপোষণ বলতে খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদানকে বোঝানো হয়েছে। এ আইনে প্রত্যেক সন্তানকে বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। একাধিক সন্তান থাকলে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এ আইন অনুসারে পৃথকভাবে বসবাস করলেও মা-বাবার সঙ্গে সন্তানরা নিয়মিতভাবে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন ও ভরণপোষণ দেবেন।
আইনে বলা হয়েছে– বাবা-মায়ের ভরণপোষণ না দিলে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, তা অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। ভরণপোষণে স্ত্রী বা অন্য কেউ বাধা দিলে তিনি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।
সন্তান হতে ভরণপোষণ না পেলে মা-বাবা সংশ্লিষ্ট থানার আমলী আদালতে লিখিত অভিযোগ করলে আদালত তা গ্রহণ করতে পারবেন।
এ আইনে সুবিধা হলো– আদালত চাইলে এ অভিযোগ আপস নিষ্পত্তির জন্য সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার মেয়র বা কমিশনার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার বা যে কোনো উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে পাঠাতে পারবেন। এতে উভয়পক্ষকে অবশ্যই শুনানির সুযোগ দিতে হবে।
উপরোক্ত ব্যক্তির কাছে নিষ্পত্তি করা অভিযোগ আদালতের নিষ্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে।
লেখক:
অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির
ঢাকা জর্জকোর্ট।